কাক এর অভয়ারণ্য দিনাজপুরের ছোট গ্রাম হরিহরপুর। সন্ধ্যার আগে গ্রামের মাঝ দিয়ে রাস্তায় হেটে গেলেই চোখে পড়বে আর কা কা শব্দ শোনা যাবে। প্রতিটি বাশঁ ঝাড়ে কিংবা গাছের ডালে ডালে এলাকার সর্বত্র কাক এর যেন নিরাপদ আবাস। বলা যায় কাক এর অভয়ারণ্য। এখানে সকালে কিংবা বিকেল-সন্ধ্যায় দেখা যাবে হাজার হাজার কাক। এই চিত্র প্রতিদিনের। ওই সময়ে গাছের আগায় মনে হবে গাছের পাতাই নেই, আছে শুধু কাক আর কাক। খুব ভোরে এসব কাক চলে যায় বিভিন্ন দূর-দূরান্তের এলাকায়। কিন্তু বিকেল গড়ালেই আসতে শুরু করে এসব কাক। সন্ধ্যায় যেন বসে কাকদের মিলন মেলা। রাতে থাকে এই এলাকায়। আবার সকাল হলে চলে যায় খাবার খোঁজে অন্যত্র। এ কারণে ওই গ্রামটি এখন কাউয়া (কাক) পাড়া নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। তবে এত কাক থাকলেও এলাকার মানুষের নেই কোন বিরক্তি।
কাউয়া পাড়া ওরফে এই হরিহরপুর গ্রামটি দিনাজপুর সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।
কলেজ ছাত্র নাঈম ইসলাম, রায়হানসহ হরিহরপুর গ্রামের অনেকেই জানান, এই এলাকায় অনেক বছর ধরে এসব কাক এক সঙ্গে বসবাস করছে। এলাকার মানুষ প্রকৃতির এই কাক এর উপর বিরক্ত হয় না। তা ছাড়া এরা দিনের বেলায় থাকে না। মানুষও এদের ক্ষতির করে না। এ কারণে নিরাপদ আবাস মনে করেই রাতে কাক পাখিদের বসবাস।
স্থানীয় বাসিন্দা তৈমুর ইসলাম (৪৫) জানান, জন্ম থেকে কাকদের দেখেছি। গ্রামের মানুষ কাকদের কোন বিরক্ত করে না। কারো কোনো ক্ষতির কারণ নয়। বরং কাকগুলো এই এলাকার পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখে অনেকাংশে।
হরিহরপুর গ্রামের কাউয়া পাড়া ঘুরে দেখা গেছে বিকেল হলেই প্রতিটি গাছেই কাক আর কাক ডালে ডালে ভরে উঠে। উড়া উড়ি আর মূখরিত ডাকা-ডাকি’র আধিক্যই গ্রামটিকে কাউয়া পাড়া হিসেবে পরিচিত করিয়েছে।
কাক জনপরিচিত একটি পাখি। এদের কখনও উচ্চস্বরে আবার কখনও চাপা স্বরে কা-কা আওয়াজ করে থাকে। অন্যসব পাখির মত সুন্দর না হলেও প্রকৃতির পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্ব বহন করে। দেশের সর্বত্রই এই কাক এর বাস। কাক পরিবেশের অবাঞ্চিত অনেক জিনিসই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যেগুলো পরিবেশে উচ্ছিষ্ট হিসেবে মানুষ ফেলে দেয়। এসব উচ্ছিস্ট পরিবেশকে দূষণ সৃষ্টি করে অথচ সে সব খাদ্য হিসেবে কাক আহার করায় পরিবেশে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হয় না। কাক পরিবেশের বেশীরভাগ ময়লা আবর্জনা অর্থাৎ মৃত প্রাণীদেহ, তরকারীর অবশিষ্ট বা পচা অংশ, পচা ফলমুল ইত্যাদি খেয়ে পরিস্কার করে কাক। এরপরেও কাক আবর্জনা দিয়ে বাসা তৈরী করে। আর এসব কারনে হয়তো অনেকেই কাক-কে ঝাড়ুদার পাখি নামেও ডাকে। তবে এক সংগে এত কাক একমাত্র হরিহরপুর গ্রামেই দেখা যায়। অন্যত্র নয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন