সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের কদমপাল থেকে রবিবার সকালে নিখোঁজ হওয়া দুই মাস পনের দিন বয়সী শিশু কন্যা সোয়ামনিকে চার ঘণ্টা পর উদ্ধার করা হয়েছে।
নিখোঁজের চার ঘণ্টা পর দুপুর পৌনে একটার দিকে কামারখন্দ থানার ভদ্রঘাট বাজার এলাকা থেকে শিশুটির মামা ও নানীর কাছ থেকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় শিশুটি মা-বাবা, খালা ও নানাসহ ৭জনকে আটক করা হয়েছে। শিশুটির বাবার নাম সুলতান ও মায়ের নাম নার্গিস খাতুন।
বিকেলে সদর থানা ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলনে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার হাসিবুল আলম জানান, সুলতান ও নার্গিস দম্পত্তির দুটি কন্যা সন্তান হওয়ায় একটি ছেলে আশায় পুনরায় সন্তান নেয়। কিন্তু তৃতীয় সন্তানও কন্যা হওয়ায় সুলতান তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতো। গালিগালাজ করতো। এ অবস্থায় নার্গিস শিশুটিকে দূরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করে। সেই মোতাবেক নার্গিস তার বাবা আবু বক্কারকে শিশুটিকে নিয়ে যেতে বলে। তার কথামতো নার্গিসের বোন লিপি ভোরের দিকে বোনের বাড়ী কদমপাল এসে শিশু সোয়ামনিক নিয়ে যায়। সকালে শিশুটির বাবা সোয়ামনিকে না পেয়ে ৯৯৯ কল করে পুলিশকে জানায়। পুলিশ তাৎক্ষনিক ওই এলাকায় গিয়ে শিশুটির মা নার্গিস ও নার্গিসের বাবা রায়গঞ্জ উপজেলার কালিঞ্জা গ্রামের আবু বকরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে প্রথমে শিশুটির মা জানায়, তিনি স্বপ্ন দেখেছেন সংসারে উন্নতি চাইলে সোয়ামনিকে পরীর কাছে দিয়ে দিতে হবে। তাই তিনি অজ্ঞাত একজনকে শিশুটিকে দিয়ে দেন। কথাবার্তা অসংলগ্ন হওয়ায় নার্গিসের বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জানায়, তৃতীয় কন্যা হওয়ায় নার্গিসের স্বামী সুলতান তাকে নির্যাতন করত। এ কারণে তার আরেক মেয়ে লিপি শিশু সোয়ামনিকে নিয়ে আসেন। সোয়ামনিকে বেলকুচি উপজেলার সিরিয়া-বাদল দম্পত্তির বিবাহিত কন্যা বিথির কাছে দত্তক দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এজন্য তিনি তার ভাই ইসমাইলের স্ত্রী হাসিনার নিকট দিয়ে দেন। হাসিনা শিশুটিকে তার বোন সিরিয়ার মেয়ে বিথির কাছে পৌঁছে দেয়ার জন্য সিএনজি থ্রি-হুইলার যোগে বেলকুচি উপজেলা রাজাপুরে রওয়ানা হয়। এই তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতারের নেতৃত্বে সদর থানার অফিসার বাহাউদ্দিন ফারুকী অভিযান চালায়। একপর্যায়ে কামারখন্দ থানার ভদ্রঘাট বাজার এলাকা থেকে নার্গিসের ভাই সুলতান ও চাচী হাসিনর নিকট হতে শিশু সোয়ামনিকে উদ্ধার করে। তিনি জানান, মূলত শিশু সোয়ামনির বাবা সুলতান শিশুটির জন্য তার মাকে গালিগালাজ ও নির্যাতনের জন্যই নার্গিস এ কাজ করেছেন। পুলিশ সুপার বলেন, ঘটনার সাথে জড়িত সাতজনকে জিজ্ঞাসাবাদের থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন