১৬ এপ্রিল, ২০২১ ২১:৪১
হবিগঞ্জে ধান কাটা শুরু

কৃষকরা বলছেন শ্রমিক সংকট, জেলা প্রশাসন বলছে সংকট নেই

চৌধুরী মোহাম্মদ ফরিয়াদ, হবিগঞ্জ

কৃষকরা বলছেন শ্রমিক সংকট, জেলা প্রশাসন বলছে সংকট নেই

শ্রমিক সংকটের কথা জানিয়েছে কৃষকরা বলছেন, বোরো ধান ঘরে তোলতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে

হবিগঞ্জে ইরি-বোরা ধান কাটা শুরু হয়েছে। বৈরি আবহাওয়া ও পোকার আক্রমণে এবার ধানের মাঝে চিটার পরিমাণ বেশি। শ্রমিক সংকটের কথা জানিয়েছে কৃষকরা বলছেন, বোরো ধান ঘরে তোলতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তবে জেলা প্রশাসন বলছে, শ্রমিক সংকট নেই। সংকট থাকলে সমাধান করে কৃষকদের ফলন ঘরে তুলতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।   

হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার ৯ উপজেলায় মোট ১ লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো জমি আবাদ হয়েছে। এতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজার টন ধান।  

কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছর দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শ্রমিকরা ধান কাটতে আসতো। কিন্তু এবার করোনার কারণে যোগাযোগ বন্ধ ও সারাদেশে লকডাউন থাকায় প্রবল শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফলে, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হলে পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে সোনালি এই ফসল।

অপর দিকে যেসব জমিনের ধান কাটা হচ্ছে সেগুলোতে চিটার পরিমাণ বেশি। পোকার আক্রমণে এমনটা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। 

বাজারে ধানের মূল্য এখন পর্যন্ত সন্তোষজনক হলেও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ধান কিনে আনলেও লকডাউনের কারণে পরিবহন সংকট থাকায় গুদামের ধানগুলো দেশের অন্যান্য স্থানে স্থানান্তর করতে পারছেন না। ফলে সংরক্ষণের স্থানের অভাবে কমে যেতে পারে ধানের দাম। 

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ পৌর এলাকার উমেদনগরের কৃষক সোয়ারাব খান জানান, এ বছর তিনি ১২ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। তার জমিগুলো কাটা শুরু হয়েছে। প্রথমে তিনি বাইরের শ্রমিক আনতে চেয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে বাইরের শ্রমিক আনতে না পাড়ায় তিনি এলাকার শ্রমিক দিয়ে ধান কাটাচ্ছেন। 

তিনি বলেন, চাষ করতে গিয়ে সব মিলিয়ে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে, আর জমিতে যে ফলন পাচ্ছি, তাতে সেই টাকা তোলা সম্ভব হবে না। জমিগুলো পড়ে থাকবে বলেই আমরা ধান চাষ করেছি। এখন প্রতি বিঘা জমি কাটতে ৫-৬ জন শ্রমিক লাগছে। ওই শ্রমিকদের জনপ্রতি ৬০০ টাকা দৈনিক মজুরি দিতে হচ্ছে। এ হিসাবে প্রতি বিঘা ৩ হাজারা টাকা দিতে হচ্ছে। আর জমির ধানগুলো বাড়িতে নিতে আরও দুই মণ ধান পরিবহন ও মাড়াই করতে দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতি বিঘা জমি কাটাতে ছয় থেকে সাত মণ ধান শ্রমিক, পরিবহন ও মাড়াই করতে দিতে হয়। আর জমিতে ২০ থেকে ১৮ মণ হচ্ছে। আবার যে জমিগুলোতে চিটা দেখা দিয়েছে, সেগুলোতে আরও কম ধানের উৎপাদন হচ্ছে। এ অবস্থায় কৃষকরা জমি চাষ করে লাভবান হতে পাড়ছেন না।

আতুকুড়া গ্রামের কৃষক শামছু মিয়া জানান, তিনি এবার ৫০ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছেন। প্রতি বিঘা জমি চাষ করতে তার খরচ হয়েছে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। এখন জমি কাটাতে আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। সব মিয়ে প্রতি বিঘা জমি রোপণ, সার প্রয়োগসহ কাটানোর খরচ ১০ হাজার টাকা হয়। এ হিসাবে প্রতি বিঘা জমিতে ধানের উৎপাদন হয় সর্বোচ্চ ১৮ থেকে ২০ মণ। আর যে জমিতে চিটা দেখা দিয়েছে, সেগুলোতে আরও অনেক কম হচ্ছে। বর্তমান ধানের কাঁচাবাজারের দাম থাকলেও কৃষকেরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। ধানের দাম যদি আরও কমে তাহলে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। 

আতুকুড়া বাজার পাইকানি ধান-চাল ব্যবসায়ী ইউসুফ আলী জানান, নতুন ধান কেনা শুরু করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতি মণ কাঁচা ধান (চিকন) ৮০০ টাকা ও মোটা ৭০০ টাকা রয়েছে। এ হিসাবে যারা কৃষক রয়েছেন তারা ধান না শুকিয়ে কাঁচাই বিক্রি করছেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে যারা কৃষকদের কাছ থেকে কেনেন সেসব ব্যাপারীরা পরিবহন না পাওয়ায় আমাদের কাছে নিয়ে আসতে পাড়ছেন না। আমরাও ধানগুলো পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে পারছি না। যদি বিভিন্ন স্থানে ধানগুলো বিক্রি করতে পারতাম তাহলে কৃষকদের কাছ থেকে আমরা বেশি ধান সংগ্রহ করতে পারতাম। তখন কৃষকরা আরও লাভবান হতে পারতেন।

জেলা কৃষি সমাপ্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. তমিজ উদ্দিন খান জানান, এবার আমরা জেলায় ধানের যে লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করেছিলাম সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। জেলায় কোনো শ্রমিক সংকট নেই। ৩০ হাজার শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে ২৪ হাজার শ্রমিক জেলার ও ৬ হাজার শ্রমিক বাইরে থেকে আসবে। আর যদি শ্রমিক আনতে কোনো সমস্যা হয়, আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা সেই সমস্যা সমাধান করে দেব। এ ছাড়া বৃষ্টিপাত ও আগাম বন্যার আগে যাতে ধান কাটা শেষ করতে পারে, এ জন্য বিভিন্ন স্থানে কম্বাইন্ড হারবেস্টর ও রিপার মেশিন দেওয়া হয়েছে। 

জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা বোরো ধান উত্তোলন সম্পন্ন করতে চাই। বোরো ধান কাটায় এবার কোনো শ্রমিক সংকট হবে। বাইরের শ্রমিকরা এসে ধান কাটতে পারবেন। বাইরের শ্রমিক আনতে সমস্যা হলে কৃষকেরা যদি আমাদের সাথে যোগাযোগ করেন আমরা সেই সমস্যা সমাধান করে দেব।

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর