৬ জুন, ২০২১ ১৪:৪৬

নওগাঁর হাসপাতালগুলোতে নেই আইসিইউ, করোনায় মৃত্যু ৪৫

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

নওগাঁর হাসপাতালগুলোতে নেই আইসিইউ, করোনায় মৃত্যু ৪৫

রাজশাহী বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বড় জেলা নওগাঁ। বর্তমানে করোনার হটস্পট হিসাবে পরিণত হয়েছে জেলাটি। প্রতিদিন করোনা রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিস্থিতি আরো অবনতি হচ্ছে। উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কোভিড রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থা।

জনবল সংকটের সাথে সাথে নওগাঁর তিনটি উপজেলা ও সদর হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই চালু থাকলেও বাকি ৮টি উপজেলায় অক্সিজেন সাপ্লাই নেই। আর সদর হাসপাতালে মাত্র দুটি আইসিইউ বেড আনা হলেও তা এখন পর্যন্ত কার্যকর নয়। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ শয্যা না থাকায় করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীদের রাজশাহী কিংবা বগুড়ার হাসপাতালে পাঠাতে হয়।

কিন্তু রোগী পরিবহনে ব্যবহৃত এখানকার অ্যাম্বুলেন্সগুলোয় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা না থাকায় ওইসব জটিল রোগীকে রাজশাহী কিংবা বগুড়ার নিতে গিয়ে তাদের শারীরিক অবস্থা আরও জটিল হয়ে পড়ে। ফলে তাদের মৃত্যুহার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

২০১৮ সালে স্থাপন করা হয় নওগাঁ মেডিকেল কলেজ। সীমান্তবর্তী জেলা নওগাঁকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও জেলার নিয়ামতপুর, পোরশা, সাপাহার, পত্নীতলা ও ধামইরহাট উপজেলাগুলোতে বেড়েই চলছে আক্রান্তের সংখ্যা।

নওগাঁ সদর হাসপাতালের করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন শহরের চকদেবপাড়ার বাসিন্দা সাইফুল ইসলামের ছেলে সাব্বির হোসেন জানান, বাবাকে গত ১ জুন হাসপাতালে ভর্তি করেছি। গতকাল রাত থেকে বাবার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়ার পরও শ্বাসকষ্ট কমছে না। চিকিৎসকেরা তাকে এখন আইসিইউ বেডে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলছেন। আইসিইউ বেডে নেওয়ার জন্য বাবাকে আজই রাজশাহী কিংবা বগুড়ায় নিতে হবে। হাসপাতালে আইসিইউ-সুবিধা থাকলে এই ভোগান্তি পোহাতে হতো না।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, রাজশহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের সাথে নওগাঁর যোগাযোগ থাকায় সংক্রমণ হার বেড়েই চলেছে। তাই যোগাযোগের সকল সড়কগুলো বন্ধ ঘোষণাসহ সংক্রমণের হার কমাতে মাঠ পর্যায়ে স্বাস্থ্যবিভাগ কাজ করছে। নওগাঁর তিনটি উপজেলা ও সদর হাসপাতালে হাইফ্লো অক্সিজেন সাপ্লাই চালু রয়েছে। আর বাকি ৮টি উপজেলায় অক্সিজেন সাপ্লাই না থাকলেও অন্যান্য সরঞ্জামদি রয়েছে। ইতিমধ্যেই সদর হাসপাতালে দুইটি আইসিইউ বেড আনা হলেও তা এখনো কাজ শুরু হয়নি। তাই জরুরি রোগী থাকলে তাদেরক স্থানান্তর করা হচ্ছে রাজশাহীতে।

তিনি আরো বলেন, নওগাঁ সদর হাসপাতালসহ জেলার ১০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বর্তমানে ১২১ শয্যায় রোগী আছেন আর ৮০টি শয্যা খালি রয়েছে। এদিকে, জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৯ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ২০ ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে নিয়ামতপুরে ছয়জন, ধামইরহাট ও সাপাহার উপজেলায় তিনজন করে, সদর, রানীনগর ও মান্দা উপজেলায় দুজন করে এবং বদলগাছি ও পত্নীতলা উপজেলায় একজন করে। শনাক্তের হার ১১ দশমিক ১৭ শতাংশ।

এখন পর্যন্ত জেলার মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৮৫ জন। সুস্থ হয়েছেন একজন এবং এখন পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ২০৫৩ জন। বর্তমানে জেলায় করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি রয়েছেন ৩৩২ জন। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় মোট কোয়ারেন্টাইনে নেওয়া হয়েছে ১৩৪ জনকে। এসময় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৪৫ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন ১১৪৬ ব্যক্তি। মারা গেছেন ৪৫ জন।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মো. হারুন-অর-রশীদ জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা পরিস্থিতি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁর সাথে সকল যোগাযোগ বিছিন্ন করা হয়েছে। তারপরও কিছু মানুষ পায়ে হেঁটে গ্রামের ভেতর দিয়ে আসার কারণে সংক্রমণ বেশি ছড়াচ্ছে। তাই চলমান বিধিনিষেধ থাকা অবস্থায় এসব স্থানে আরো কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান ছাড়া সকল ধরনের হাট-বাজার বন্ধসহ গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে পুরো জেলায় মাইকিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মানুষকে মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে স্বাস্থ্যবিভাগ ও প্রশাসনের উদ্যোগে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর