৯ জুন, ২০২১ ১৮:৫৮

বগুড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি


বগুড়ায় কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে
মুখ খুলছেন ভুক্তভোগীরা

বগুড়ার শেরপুরে কিশোর গ্যাংয়ের নানা অপকর্মের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ছেলে আবির আহম্মেদ বনির নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি কিশোর গ্যাং সদস্যদের সশস্ত্র হামলায় পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ সরকার সমর্থক ছয় নেতাকর্মী আহত ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের পর ওই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন ভুক্তভোগীসহ এলাকার সাধারণ মানুষ। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার সন্ধ্যা ছয়টায় শেরপুর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য জোর দাবি জানানো হয়।

সম্মেলনে পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মানিক সেখ বলেন, শহরের বৈকাল বাজার এলাকাস্থ মুন ইরাফী গাডেন সিটি মার্কেটে অবস্থিত আমার ইলেকট্রনিক্স পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিগত ৩১ মে দুপুরের দিকে প্রতিষ্ঠানটির সামনে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববির ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার আবির আহম্মেদ বনি দ্বাড়কিপাড়া এলাকার হাসান নামের এক ছেলেকে বেধড়ক পেটায়।

এ সময় ছেলেটিকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে গ্যাং বনি আমাকেও লাঞ্ছিত করেন। এই ঘটনার কিছু সময় পরই আবারও সংগঠিত হয়ে অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। সেইসঙ্গে রাম-দা, চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী ফেরদৌস হাসান বাবুকে গুরুতর আহত করেন। তাকে উদ্ধারে এগিয়ে গেলে পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ সুমন, আমাকেসহ আরও ছয়জনকে ছুরিকাঘাত ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এ ঘটনায় ১ জুন কিশোর গ্যাং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করি। তবে আসামিরা পালিয়ে রয়েছেন।

স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মানিক সেখ আরও বলেন, মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা ছেলে কিশোর গ্যাং লিডার আবির আহম্মেদ বনিকে আসামি করায় আমার বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন ওই আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলে। এমনকি মামলাটি প্রত্যাহার করতে তাকে নানামুখি চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে। অন্যথায় আমাকে প্রাণনাশ করা হবে বলেও অব্যাহতভাবে হুমকি-ধামকি দেওয়ার অভিযোগ করেন তিনি।

এছাড়া ওই কিশোর গ্যাংয়ের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন শহরের সাধারণ মানুষ। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছে না। এইতো কয়েকদিন আগেও কিশোর গ্যাং লিডার বনির নেতৃত্বে উপজেলার শালফা বিএম এন্ড স্কুলের শিক্ষক হারুনার রশিদের উপশহরের বাসায় হামলা চালিয়েছে।

এ সময় তাকে না পেয়ে তার ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ওইসব কিশোর সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারপূর্বক আইনের আওতায় আনার জন্য সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আইন শৃঙ্খলাবানিনীর নিকট জোর দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে পৌরসভার ছয় নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জাকারিয়া মাসুদ, উপজেলা শ্রমিকলীগের আহবায়ক কামাল হোসেন, পৌর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৌরভ আহম্মেদ সুমন, টাউন কলোনী এলাকার ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম শফিকসহ টাউন কলোনী এলাকার অর্ধশত ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন।

এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানতে অভিযুক্ত আবির আহম্মেদ বনির সঙ্গে যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে তার বাবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর কাউন্সিলর বদরুল ইসলাম পোদ্দার ববি এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, পূর্বশক্রতার জেরে মানিক সেখ ও তার লোকজন আমার ছেলে ও ভাইয়ের ছেলেদের পিটিয়ে আহত করেছে। এখন উদোর পিন্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর জন্যই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মিথ্যাচার করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

শেরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠা হামলা-ভাঙচুর ও ধারালো অস্ত্রদিয়ে দিয়ে কুপিয়ে ছাত্রলীগ নেতাসহ কয়েকজন আহত হওয়ার ঘটনায় মামলা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্তরা পলাতক থাকায় তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

বিডি প্রতিদিন/আল আমীন

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর