শিরোনাম
২ আগস্ট, ২০২১ ১৭:৫৫

কাজে আসছে না ধনবাড়ী ক্রীড়া সংস্থার ভবন

পরিত্যক্ত ভবনটিতে চলে মাদক ও জুয়ার আড্ডা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি


কাজে আসছে না ধনবাড়ী ক্রীড়া সংস্থার ভবন

একদিকে করোনাভাইরাসের প্রভাব অপরদিকে প্রশাসনিক তদারকি ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গনে দেখা দিয়েছে বন্ধ্যাত্ব। দীর্ঘদিন যাবত স্থবির হয়ে আছে ক্রীড়া সংস্থার কার্যক্রম। ফলে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত টাঙ্গাইল জেলার একমাত্র উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার জীর্ন ভবনটি এখন জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) এর সভাপতিত্বে একটি পুরনো কমিটি থাকলেও নেই কোনো তদারকি ও কার্যক্রম। ভবনের পাশেই রয়েছে ক্রীড়া ও সংস্কৃতি চর্চার জন্য নবাবী আমলের দুটি ময়দানসহ বিশাল চারটি মাঠ। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়াঙ্গণে দেখা দিয়েছে বন্ধাত্ব্য ও স্থবিরতা । দেড় কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার জীর্ন এ ভবনটি এখন জুয়াড়ি ও মাদকসেবীদের আড্ডাস্থল। সুস্থ সাংস্কৃতিক চর্চার অভাবে শিশু, কিশোর ও যুবকরা দিনদিন মাদকের দিকে ঝুঁকছে এবং ক্ষতিকর মোবাইল গেমস্-এর দিকে আসক্ত হয়ে পড়ছে। কেউ-কেউ আবার টাকার বিনিময়ে মোবাইলে ডিজিটাল জুয়া খেলছে। এমন অভিযোগ তুলেছেন ধনবাড়ী উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ শিক্ষক এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মীর আশরাফ হোসেন। 

জানা যায়, ২০০৬ সালে মধুপুর উপজেলাকে বিভক্ত করে সাতটি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভা নিয়ে গঠিত হয় ধনবাড়ী উপজেলা। ধনবাড়ী মানেই ধনবাড়ীর জমিদার নবাব নওয়াব আলী চৌধুরীর প্রাচীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা। এটিকে ধরে রাখার জন্য ২০১২ সালে টাঙ্গাইল জেলা পরিষদ ধনবাড়ীতে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করেন জেলার একমাত্র ধনবাড়ী উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবনটি। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি করে গঠিত হয় উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি। কিন্তু এ কমিটি ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে উল্লেখ্যযোগ্য কোন ভূমিকা না রাখায় হতাশ ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রেমীরা। 

ধনবাড়ী উপজেলা ক্রিকেট একাডেমির কোচ মোহাম্মদ জনি চৌধুরী জানান, প্রতি বছর সরকার উপজেলা পরিষদকে ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক জাগরণে বরাদ্দ দিলেও পেশাদার ক্লাবগুলো এসব অনুদান থেকে বঞ্চিত হয়। ক্রীড়া সংস্থা ও ক্রীড়া ভবনটি কোনোদিনই খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক চর্চায় কোনো অবদান রাখেনি।

ফুটবলার আল-আমীন, শহিদুল ইসলাম ও মিলনসহ অনেকেই জানান, এখানে ব্যক্তি উদ্যোগে তিন মাস ধরে ফুটবল কোচিং হচ্ছে। ক্রীড়া সংস্থা কখনো খোঁজ নেয়নি। ভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এক সময় এ ভবনে রাখা হতো ঠিকাদারদের মালামাল। চলতো জুয়া খেলা। বসতো মাদকের আড্ডা। এখন এটি পরিত্যক্ত ভুতুড়ে বাড়ি। ভবনের সামনে ময়লার ভাগাড়। 

ধনবাড়ী উপজেলা ফুটবল খেলার পরিচালক জহিরুল ইসলাম মিলন জানান, প্রতি বছর ধনবাড়ী নবাব মাঠে বসে বৈশাখী মেলা। আর ঈদুল আজাহায় বসে পশু বিক্রির হাট। তখন মাঠে ব্যাপক খোঁড়াখুড়ি হয়। সেসব গর্ত কেউ ভরাট না করায় ছেলে-মেয়েরা মাঠে দীর্ঘ দিন ধরে খেলাধুলা করতে পারছে না। ক্রীড়া সংস্থার নিকট অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি। 

উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার ভবন লাগোয়া ব্যবসায়ী আ. বারেক, শাহদত হোসেন জগলু, আবু তারেক লাকী জানান, গত দুই বছরের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে ক্রীড়া সংস্থা ভবনের তালা খুলতে দেখা যায়নি। ভবনটির জানালা-দরজা ভেঙে যাচ্ছে। ভবনের বিভিন্ন অংশে গজিয়েছে আগাছা। মানুষ  সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলে। পথচারীরা প্রস্রাব-পায়খানা করে। দুর্গন্ধে সেখানে যাওয়া যায় না। 

ধনবাড়ী উপজেলা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন, পল্লী চিকিৎসক জমির উদ্দিনসহ অনেকেই জানান, এ ভবনের কোনো কার্যক্রম না থাকায় ভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। আশপাশে ময়লা-অর্বজনায় ভরপুর। ভবনটির নিচে ও আশপাশে এখনো জুয়া ও মাদকের আসর বসে। 

ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হারুনার রশীদ হীরা জানান, এ প্রজন্মের শিশু, কিশোর ও যুবকরা খেলাধুলা করতে চায় না। সারাক্ষণ মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত থাকে। নানা কারণে ভবনটি নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি। দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় এটি এখন ব্যবহারেরও অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

উপজেলা পরিষদের ক্রীড়া ফান্ড থেকে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকা ইউনিয়ন পরিষদকে খেলাধুলার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান গ্রামাঞ্চলের ক্লাব ও প্রতিষ্ঠানগুলোতে মানসম্মত সামগ্রী বিতরণ করেন না বলে প্রায়ই অভিযোগ আসে। 

এ ব্যাপারে ত্রীড়াবিদ ধনবড়ী পৌর মেয়র মুহাম্মদ মনিরুজামান বকল জানান, ২০১২ সালে ক্রীড়া ভবনটি নির্মিত হলেও এটি এখানে কোন কাজে আসছে না। ইউএনওকে সভাপতি করে উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার একটি কমিটি করা হলেও দীর্ঘদিনেও কোন মিটিং ডাকা হয়নি। এ কমিটির আমি একজন সদস্য হলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যক্রম আমার পরিলক্ষিত হয়নি। ভবনটি এখন পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এটিকে সচল করা গেলে এ অঞ্চলের ক্রীড়ামোদী ছেলে-মেয়েদের আগ্রহ বাড়বে। খেলাধুলার মান বৃদ্ধি পাবে।   

ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. সামিউল হক জানান, আমি নতুন এসেছি। ভবনটি ব্যাপারে অবশ্যই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও মেরামতের উদ্যাগ নেয়া হবে। আমার জানা মতে, এ উপজেলায় বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফুটবলে ক্রীড়াবিদরা অংশ নিয়ে থাকেন। করোনা পরিস্থিতি চলে গেলে ক্রীড়া সংস্থার পুরনো কমিটি ভেঙ্গে নতুন কমিটি করার উদ্যাগ নেয়া হবে।

 

বিডি প্রতিদিন/ফারজানা

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর