৪ আগস্ট, ২০২১ ১৩:১২

এক ফোনেই বাড়িতে অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স!

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

এক ফোনেই বাড়িতে অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স!

এক ফোনেই বাড়িতে অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স!

রাজশাহী নগরীর হাদির মোড়ের বাসিন্দা গৃহিণী ফাতেমা আক্তার। কোনও সন্তান না থাকায় স্বামী-স্ত্রী দু’জন মিলেই তাদের সংসার। গত মাসের শেষের দিকে তার শ্বাসকষ্ট আর কাশি দেখা দেয়। রামেক হাসপাতালে শয্যা সংকটের খবর শুনে সিদ্ধান্ত নেন বাড়িতেই চিকিৎসা নেওয়ার। সংগ্রহে রাখেন একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারও। তবে হঠাৎ করেই গত ৪ জুন শ্বাসকষ্ট তীব্র হওয়ায় মেপে দেখেন; অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। তখনই শুরু হয় ছোটাছুটি। এমন পরিস্থিতিতে মুহূর্তেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন পরিবারের একমাত্র সদস্য তার স্বামী আফজাল হোসেন। মোবাইল ফোনে তিনি সহযোগিতা চান শহীদ জামিল ব্রিগেডের।

আফজাল হোসেন বলেন, ‘পরিস্থিতি বেগতিক দেখে আমার বাড়ির ঠিক সামনের বাড়ির এক কলেজপড়ুয়া ছোটভাইকে ফোন দেই। তাকে জানাতেই সে আমাকে একটি মোবাইল নম্বর দিয়ে জানায়, এতে ফোন দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ব্যাপারে কথা বলতে। আমি তাৎক্ষণিকভাবে ফোন দেই। কল রিসিভের পর জরুরি ভিত্তিতে অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়ে জানালে ওপার থেকে বলা হল, ‘আপনি হাসপাতাল যাওয়ার প্রস্তুতি নিন, আমরা আসছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ফোন করার প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে একদল স্বেচ্ছাসেবী বাড়ির সামনে হাজির। আমার স্ত্রীর করোনার লক্ষণ ও শ্বাসকষ্ট থাকায় তাকে অ্যাম্বুলেন্সে নিতে প্রতিবেশীরা কেউই সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি। সেসময় জামিল ব্রিগেডের সদস্যরা একদিকে যেমন অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে ছুটে এসেছে, অন্যদিকে তারাই বাড়ি থেকে হাসপাতাল পর্যন্ত সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে কোনও সংকচ ছাড়াই। এর জন্য তাদের একটি টাকাও দিতে হয়নি।’

করোনা মহামারীর বর্তমান সময়ে আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে। একাধিক হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটে রোগী মারা যাওয়ার খবরও নতুন নয়। কঠোর লকডাউনের জন্য গণপরিবহণ বন্ধ থাকায় অক্সিজেনের পাশাপাশি রোগীদের জরুরি প্রয়োজনের খাতায় যুক্ত হয়েছে অ্যাম্বুলেন্স। জরুরি ভিত্তিতে এ দুই সেবা তাৎক্ষণিকভাবে না পেলে যেকোনও সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের বিপদ।

এমন পরিস্থিতিতে করোনাক্রান্ত রোগীদের জন্য প্রথমে রাজশাহী নগরী ও পরে জেলায় ব্যতিক্রমী সব উদ্যোগের নজির গড়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘শহীদ জামিল ব্রিগেড’। সংগঠনটির সদস্যরা একটি ফোন পেলেই বিনামূল্যে রোগীর বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে। রোগীকে জরুরিভাবে হাসপাতালে নিতে চালু রেখেছে ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সেবা। প্রায় দেড় মাস ধরে রাজশাহীতে ঝড়-বৃষ্টি এবং মধ্যরাতের প্রতিবন্ধকতা উপেক্ষা করে তারা দিয়ে চলেছেন এই মানবিক সেবা।

শুধুমাত্র রাজশাহী শহরে কোভিড মোকাবিলায় গত ৫ জুন ৫০ জন তরুণ-যুবকদের সমন্বয়ে ‘শহীদ জামিল ব্রিগেড’ গঠন করা হয়। প্রায় দুই মাস ধরে মহানগর এলাকায় শুধুমাত্র একটি ফোনকলে মানুষের বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স ও অক্সিজেন পৌঁছে দিয়ে মানবতার সেবায় কাজ করে যাচ্ছেন সংগঠনটির সদস্যরা। 

সম্প্রতি জেলার গ্রাম পর্যায়ে ব্যাপক হারে করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়ে গেলে ব্রিগেডের সেবা প্রসারিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গত ১৫ জুলাই গ্রামের মানুষের জন্য বিনামূল্যে আরও একটি অ্যাম্বুলেন্সের উদ্বোধন করেন ব্রিগেড কর্তৃপক্ষ। সঙ্গে যুক্ত করা হয় ফ্রি অক্সিজেন সেবাও। এখন প্রায় প্রতিদিন রাজশাহী নগর ও জেলায় অক্সিজেন-অ্যাম্বুলেন্স সেবা এবং বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কর্মসূচি পরিচালনা করে যাচ্ছে ‘শহীদ জামিল ব্রিগেড’।

শহীদ জামিল ব্রিগেডের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ফজলে হোসেন বাদশা এমপি বলেন, ‘বর্তমানে দেশে করোনা পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ। শহর ছাড়িয়ে গ্রাম অঞ্চলে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে শয্যা সংকট। রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া একটি দূরহ কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের পক্ষে এই দায়িত্ব এককভাবে পালন করা অনেক কঠিন। সরকারের পাশাপাশি নিজ উদ্যোগে জনগণের সেবা এবং মানবিক দায়িত্ব পালন করা উচিত। সে কারণেই আমরা জামিল ব্রিগেড গঠন করেছি।’

বিডি প্রতিদিন/কালাম

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর