২৩ অক্টোবর, ২০২১ ০০:২০
শিক্ষিকা ফারহানার বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই সিন্ডিকেট মিটিং মুলতবি

আবারও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ডাক

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

আবারও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ডাক

শিক্ষার্থীদের আমরণ অনশন ও অবস্থান ধর্মঘট।

শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াই রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের (রবি) সিন্ডিকেট বৈঠক মুলতবি করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে রবির ঢাকা অফিসে বৈঠক শুরু হয়ে টানা ৩ ঘণ্টা চলার পর কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই রাত সাড়ে ৭টার দিকে বৈঠক মুলতবি করা হয়।

বৈঠক শেষে রবিব দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ ও রেজিস্ট্রার সোহরাব আলী মোবাইল ফোনে শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন।

এর পরপরই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জরুরি বৈঠক করে আবারও আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেন। তারা রাত ৮টা থেকে আমরণ অনশন ও লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট শুরুর ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা দুটি গ্রুপে ভাগ হয়ে শাহজাদপুরের কান্দাপাড়ার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অনশন ও বিসিক বাসস্ট্যান্ড এলাকার শাহজাদপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন। এ ঘটনায় আবারও রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

এর আগে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযুক্ত শিক্ষিকার আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য ছাড়াই ৫টার দিকে রবিব দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি আব্দুল লতিফের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এরপর আব্দুল লতিফ অভিযুক্ত শিক্ষিকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে শুক্রবার বিকেলে ঢাকা অফিসে সিন্ডিকেট বৈঠক ডাকেন। যথাসময়ে বৈঠক শুরু হলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই বৈঠকটি মুলতবি হয়ে যায়। এর পরপরই শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনের ডাক দেন।

এ বিষয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আবু জাফর ও শামীম হোসেন বলেন, শুক্রবারের সিন্ডিকেট বৈঠকে অভিযুক্ত শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ীভাবে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত হওয়া আশা করেছিলাম। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে আমাদের পরীক্ষার হলে ফিরে যেতে বলেন। আমরা তাদের এই আদেশ গ্রহণ না করে শিক্ষিকা ফারহানার স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত আবারও আন্দোলন শুরু করেছি।

এ বিষয়ে রবিব দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসি ও ট্রেজারার আব্দুল লতিফ এবং রেজিস্ট্রার সোহরাব আলীর মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হরেও তারা রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন বাতেন নিজেই কাঁচি হাতে ১৪ শিক্ষার্থীর চুল কেটে দেন বলে অভিযোগে ওঠে। সেই শিক্ষার্থীদের একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে তাকে বকাঝকা করায় আত্মহত্যার চেষ্টা করলে ক্ষোভে উত্তাল হয় বিশ্ববিদ্যালয়।

এ পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিন প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন সহযোগী অধ্যাপক ফারহানা ইয়াসমিন। যদিও তিনি শিক্ষার্থীদের চুল কেটে দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেন। ওই ঘটনায় ফারহানা ইয়াসমিনকে অপসারণের দাবিতে অনশন শুরু করে একদল শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান অবস্থায় চুল কাটার একটি সিসিটিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়।

এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। পাশাপাশি একটি বিজ্ঞপ্তিতে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ অবস্থায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনশন তুলে নিয়ে প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবরোধে করে অবস্থান করতে থাকে। পরে শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করেছিল।

এরপর তদন্ত কমিটির কাছে নির্যাতিত ছাত্র, প্রত্যক্ষদর্শী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা সাক্ষ্য দিলেও শিক্ষিকা ফারহানা সাক্ষ্য না দিয়ে দুই সপ্তাহের সময় প্রার্থনা করেন। তদন্ত কমিটি প্রথমে ৩দিন, পরে আরও ৬ দিন ও সব শেষে ১৪ দিন সময় দেন। এ সময়ের শেষ দিন বৃহস্পতিবারও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। ফলে তাকে আর সময় না দিয়ে তদন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।  

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর