১৮ মার্চ, ২০২৪ ১৭:৪২

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের চাহিদা দেশ-বিদেশে

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

বগুড়ার সাদা সেমাইয়ের চাহিদা দেশ-বিদেশে

সাদা সেমাই রোদে শুকাচ্ছেন শ্রমিক

চাহিদা বেড়ে এখন দেশ-বিদেশে যাচ্ছে বগুড়ার তৈরি সাদা চিকন সেমাই। যত দিন যাচ্ছে, কদর বেড়েই চলছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখন যাচ্ছে বিদেশেও। রমজান ও ঈদ উপলক্ষে কয়েক কোটি টাকার সাদা চিকন সেমাইয়ের ব্যবসার আশা করছেন কারখানার মালিকরা।

তারা বলছেন, রোজার এক থেকে দেড় মাস আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে চিকন সেমাইয়ের অর্ডার আসতে শুরু করে। এ বছর ময়দার দাম কম হওয়ায় প্রতি কেজি চিকন সেমাই ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এদিকে এ শিল্পকে ঘিরে জেলার আশপাশে বিভিন্ন উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাই গ্রাম। আধুনিক মেশিনে মানসম্মত উপায়ে তৈরি হচ্ছ এসব সাদা সেমাই।

জানা যায়, বগুড়া জেলার সদর, শাজাহানপুর, গাবতলী, কাহালু উপজেলায় গড়ে উঠেছে সেমাই পল্লী। এসব উপজেলার গ্রামগুলোতে দুই থেকে আড়াই শতাধিক কারখানা গড়ে উঠেছে। তবে গত বছর ময়দার দাম ও শ্রমিক মজুরি বেড়ে যাওয়ায় অধিকাংশ কারখানা সাদা সেমাই তৈরি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। ফলে চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারেনি। অনেক ব্যবসায়ীকে লোকসান গুনতে হয়েছিল। তবে এবছর অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়লেও ময়দার দাম কিছুটা কমেছে।
যার ফলে অনেক কারখানাই নতুন করে চালু হয়েছে। রমজানের আগে থেকেই তারা চিকন সেমাই তৈরি শুরু করেছে।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার সেমাইপল্লী খ্যাত মাদলা, বেজোড়া, ঢাকন্তা, শ্যাওলাকাথিপাড়া, কালসিমাটি, রবিবাড়িয়াসহ আশপাশের প্রায় ৮ থেকে ১০টি গ্রামের নারীদের হাতে প্রায় ৫০ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু চিকন সেমাই। এই এলাকার চিকন সেমাই এখন দেশ জুড়ে খ্যাত। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন পাইকাররা নিয়ে যাচ্ছে সাদা সেমাই। বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সেমাই কারখানার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছেন গ্রামগুলোর নারী-পুরুষরা। প্রতি বছর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পাল্লা দিয়ে কাজ চলে সেমাই পল্লীর কারিগরদের। দিনরাত তৈরি করেন চিকন সাদা সেমাই। প্রতি বছর ঈদের উৎসবকে ঘিরে চিকন সাদা সেমাইয়ে রঙিন স্বপ্নে বিভোর থাকেন সেমাই পল্লীর মানুষরা।

শ্যাওলাকাথিপাড়া গ্রামের কারখানার মালিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, রোজার এক-দেড় মাস আগে থেকেই বিভিন্ন জেলা থেকে চিকন সেমাইয়ের অর্ডার আসতে শুরু করে। ঈদের আগে সাদা সেমাইয়ের প্রচুর চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় উৎপাদনও বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন সাদা সেমাই নিতে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে এই সেমাই। এ মৌসুমকে ঘিরে পুরো জেলাজুড়ে কয়েক কোটি টাকার সাদা সেমাইয়ের ব্যবসা হবে।

তিনি আরও জানান, গত বছরের তুলনায় এবছর ময়দার দাম বস্তা প্রতি (৩৭ কেজি) কমেছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। গত বছর ৩৭ কেজির ময়দার বস্তার দাম ছিল ১৮০০ থেকে ১৯০০ টাকা। এবছর দাম কমে ১৪০০ টাকা বস্তা হয়েছে। যে কারণে সেমাইয়ের দামও কমেছে। প্রতি কেজি সাদা সেমাই পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা দরে। তবে ময়দার দাম কমলেও অন্যান্য জিনিসের দাম বেড়ে যাওয়ায় লাভের পরিমাণ কমে গেছে।

তিনি আরও জানান, তাদের তৈরি সাদা সেমাই দেশজুড়ে খ্যাত। দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন-ঢাকা, সৈয়দপুর, দিনাজপুর, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা থেকে পাইকার এসে এসব সাদা সেমাই নিয়ে যায়। তবে চুয়াডাঙ্গা জেলার ব্যবসায়ীরা সবচেয়ে বেশি পরিমাণ এই সেমাই ক্রয় করে নিয়ে যায়। এ ছাড়াও বিদেশে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এসব সাদা সেমাই।

দিনাজপুর থেকে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আকবর হোসেন জানান, প্রায় ১০ বছর যাবৎ এই এলাকা থেকে সাদা সেমাই নিয়ে যাই। এখানকার সেমাইয়ের চাহিদা প্রচুর। প্রতি সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪০ মণ সেমাই নিয়ে দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করি।

শাজাহানপুর উপজেলার চেয়ারম্যান প্রভাষক সোহরাব হোসেন ছান্নু জানান, স্বাধীনতার পর থেকেই এসব গ্রামে চিকন সেমাই তৈরি শুরু করেন। সময়ের ব্যবধানে এ শিল্প বিভিন্ন গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে এখানকার তৈরি চিকন সাদা সেমাইয়ের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে দেশের নানা প্রান্তে। সারা বছরই কমবেশি সাদা সেমাই তৈরি করা হয় গ্রামগুলোতে। প্রত্যেক বছর ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় রেকর্ড পরিমাণ সেমাই তৈরি করেন কারখানার মালিক-শ্রমিকরা। এখন বাণিজ্যিকভাবে পরিচিতি পেয়েছে এই এলাকার সাদা সেমাই। যা দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। তবে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এ শিল্প আগামীতে আরও বিস্তার লাভ করবে।

বিডি প্রতিদিন/এমআই

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর