কুমিল্লার দেবিদ্বারে সালিশের কথা বলে ডেকে নিয়ে এক রিকশা চালকে পিটিয়ে হত্যা অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার সকালে উপজেলার ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটেছে।
নিহত রিকশাচালকের নাম ছিদ্দিকুর রহমান (৪৫)। তিনি ফতেহাবাদ ইউনিয়নের সাইচাপাড় গ্রামের গাবুদ্দিবাড়ির মৃত আবদুল কুদ্দুসের ছেলে। এ ঘটনায় নিহত সিদ্দিকুরের বাড়ির আরো ২৫ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সাইচাপাড়া বাজারে বিজয়োল্লাস করে স্থানীয় ছাত্রজনতা। এসময় সাইচাপাড়া বাজারে ফতেহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য আমির মেম্বারের অফিসে শেখ হাসিনার ও দেবিদ্বারের এমপির ছবি সরাতে বলে। আমির মেম্বারের ছবি না সরালে ছাত্রজনতা তার অফিস থেকে ওই ছবিগুলো নামিয়ে কিছু চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আমির মেম্বার দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। বৃহস্পতিবার (১৫) আগস্ট) সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়ে আসার পথে আবু বকর ছানাউল নামের এক শিক্ষার্থীকে অফিস ভাঙচুরের অভিযোগে মারধর করে আমির মেম্বারের দুই ছেলে জুয়েল হোসেন ও সোহাগ। আবু বকর ছানাউল ঘটনার পরপরই দেবিদ্বার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগ করায় আমির মেম্বার লোকজন নিয়ে হামলা করতে আসে আবু বকর ছানাউলদের বাড়িতে। পরে স্থানীয় গণ্যমান্যরা এটা সমাধানের চিন্তা করেন। আমির মেম্বার সবাইকে সালিশ বৈঠক বসাতে বলেন। শুক্রবার সকাল আটটায় কথা ছিল বসবে সালিশ বৈঠক। এই শালিশে বৈঠকে গাবুদ্দিবাড়ির লোকজন যায়। সালিশে যাওয়ার পরপরই আমির মেম্বার ও পার্শ্ববর্তী উপজেলা ব্রাহ্মণপাড়ার জহিরের নেতৃত্বে অস্ত্রধারীরা গাবুদ্দিবাড়ির লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ ঘটনায় নিহত হয় ছিদ্দিকুর।
নিহত ছিদ্দিকুর রহমানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ভাইয়ের জন্য অঝরে বিলাপ করছেন তার বোন মায়া আক্তার। একটু পরপর তিনি বলেছেন আমার ভাই কিছু করে নাই। মেল (সালিশ) দেখতো গেছিল। কত কষ্ট পাইছে আমার ভাই। তারা মেরে ফেললো আমার ভাইকে। আমার ভাই তাদের কাছে একটু পানি চাইছিল। তারা আমার ভাইকে একটু পানিও দেয় নাই।
সাইচাপাড়ারার স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ আয়েজ ও তানবীর বলেন, আমরা আহতদের দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলে চিকিৎসক। হাসপাতালে বর্তমানে ২০ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের সিদ্দিকুর রহমান বেলা ১১টায় মারা যায়।
অভিযুক্ত আমির মেম্বারের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তাই কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
দেবিদ্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি নয়ন মিয়া বলেন, একজন নিহতের ঘটনা সঠিক। এবিষয়ে আইনি ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম