বগুড়ায় প্রচণ্ড গরমে হিটস্ট্রোক ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। দিন যাচ্ছে আর সরকারি হাসপাতালের বেড ভরে গিয়ে মেঝেতেও চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করছেন। হিটস্ট্রোক ও গরম-জনিত কারণে ডায়রিয়া, সর্দি-জ্বর, কাশিসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম অবস্থায় আছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকারি হিসেবেই জেলার বিভিন্ন হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছে প্রায় দুই শতাধিক রোগী।
জানা যায়, বগুড়ায় গত কয়েকদিন ধরেই যেন তাপপ্রবাহ চলছে। দিনে সূর্যের প্রখরতার সাথে প্রচন্ড গরমে জনজীবন কাহিল হয়ে পড়ছে। গরম ও তাপের কারণে অনেকেই দিনের বেলায় জরুরি কাজ ছাড়া বাহিরে আসছে না। সন্ধ্যার পর অনেকেই কাজ সেরে নিচ্ছেন। জেলায় গরমের কারণে বাড়ছে রোগবালাই। গত ২২ সেপ্টম্বর বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে ১২৭ শিশু এবং সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৪ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি বেশিরভাগই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, ব্রংকিওলাইটিস ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। সোমবার রোগী বেড়েছে আরো ৮ জন। এর মাঝে অনেকেই বর্হিবিভাগ থেকে নিয়েছে প্রাথমিক চিকিৎসা।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত ১১ সেপ্টেম্বর শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয় ৯৭ জন। এগারো দিন ধরে বেড়েছে শিশুদের ঠান্ডাজনিত রোগ। গত শনিবার হাসপাতালে ভর্তি হয় ১২৪ জন। রবিবার সন্ধ্যায় ১২৭ শিশুকে ভর্তি করানো হয়। অধিকাংশেরই বয়স দুই বছরের নিচে। কারও দুই তিনদিন ধরে সর্দি-জ্বর, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্ট। অনেকে হাসপাতালে আসার পর জানতে পারেন শিশু নিউমোনিয়ায় ভুগছে। আবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভুগছে বৃদ্ধরা। তারাও হাসপাতালের বর্হিভিভাগ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন।
গত রবিবার বগুড়া সরকারি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ৪৪ শিশুকে ভর্তি করা হয়েছে। এর আগে গত ১১ সেপ্টেম্বর ২১ জন, ১৭ সেপ্টেম্বর ৩৬ জন, ১৯ সেপ্টেম্বর ২৩ জন ও ২০ সেপ্টেম্বর ২৯ শিশু ভর্তি ছিল। গরমে অসুস্থ হয়ে অনেক শিশু চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরলেও প্রতিদিন অন্তত ১৪-১৫ জন হাসপাতালে ভর্তি থাকছে।
চিকিৎসকরা জানান, তীব্র গরমে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে শিশু ও বৃদ্ধরা। পাঁচ ধরনের সমস্যা নিয়ে বেশি শিশু রোগী আসছে। সর্দি-জ্বর, শরীরে র্যাশ ওঠা, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও অ্যাজমা রোগীর মধ্যে নিউমোনিয়া আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। ভাইরাসজনিত সংক্রামক ব্যাধি আক্রান্ত শিশুদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পাড়া-মহল্লার ফার্মেসি থেকে ওষুধ না খাওয়ানোর সতর্ক পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ণ চিকিৎসক ডা. আশিক উর রহমান জানান, প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছে অনেক শিশু। প্রতিদিনই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। চিকিৎসা নিতে আসছেন অনেকেই। শিশু ও বৃদ্ধ রোগীর সংখ্যা বেশি। আমাদের হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা প্রদানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া আছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে সোনাতলা উপজেলার ৯ মাস বয়সী শিশু আবিদ হাসান। তার মা মোছা. মিষ্টি বেগম জানান, শিশুর শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছিলো। বুকে চাপ আর কাশি ছিল। হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার পর কিছুটা সুস্থ। গত চারদিন ধরে চিকিৎসা চলছে। এখন একটু সুস্থ রয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ জানান, হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বাড়তি যত্ন নিতে হচ্ছে। জনবল ও বেড সংকট নিয়েও চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গরমের কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। গরম কমে গেলে এই ধরনের রোগবালাইও কমে যাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল