নীলফামারী কিশোরগঞ্জ উপজেলার চাঁদখানা জিল্লুতির বাজারের কাছে নগরবন গ্রাম। এখানে সুনশান পরিবেশে অচিন বটগাছের মগডাল বাদুড়ের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। এ যেন বাদুড়ের রাজ্য। ওই এলাকায় সৌভাগ্যের প্রতীক মেনে বাদুড়দের ভিন্নভাবে গ্রহণ করায় ক্রমেই এর বংশবৃদ্ধি ঘটছে।
প্রচণ্ড তাপদাহের মধ্যে তাদের হুকের মতো পা দু’টো আটকিয়ে নিস্তব্ধতায় ঝুলছে অসংখ্য বাদুড়। যেন চোখ ফেরানো দায়। মাথায় সামান্য হলুদ রঙ থাকলেও পুরো দেহটি কালো। একটু শব্দ হলেই দল বেঁধে পালকহীন চামড়া মোড়ানো ডানায় কয়েকটা ঝাপটা দিয়ে আবার নীরব। রাতের অক্লান্ত শ্রমে যেন তারা শুধু একটু প্রশান্তির ঘুমই খুঁজছে। গোধূলির রং মাখতেই যেন অন্যান্য পাখি আর বাদুড়ের ছোটা ছুটিতে এলাকাটিতে সৃষ্টি হয় সৌন্দর্যের অবর্ণনীয় এক পরিবেশ। কাঠফাটা রোদ আর তীব্র গরমের মধ্যে বাদুড়ের ডানা মেলার দৃশ্যে এলাকাটি দেখে মনে হয় প্রকৃতির এক অপার সৌর্ন্দয। ভোরে নীড়ে ফিরে আসা বাদুড়গুলো দেখে মনে হয় আকাশ যেন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে।
ওই গ্রামের কলেজ শিক্ষার্থী ইয়ামিন কবির বলেন, বাদুড় একটি নিরীহ প্রাণী। মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ কিচিরমিচির শব্দ করে। তবে পা নেই পেটের নিচে দু’টো হুক আছে তা নিয়ে গাছের ডালে মাথা নিচু করে ঝুলিয়ে থাকে। ডানা ছেড়ে হাত পাখার মত বাতাস করে। আবার নিস্তব্ধ হয়ে যায়। এরা যেন পোষা প্রাণীদের মতোই নির্ভয়ে বসবাস করছে বহুকাল ধরে। বাদুড় নিয়ে কল্প-কাহিনী আর কুসংস্কারের যুগ কেটে গেছে। এরা মানুষের উপকারই করে। আবার কীটপতঙ্গ খেয়ে ফসলকে রক্ষা করে। ফুল ফলের পরাগায়ণ সৃষ্টি করে। মানবকল্যাণকারী ও পরিবেশবান্ধব এ স্তন্যপায়ী প্রাণীটি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তাই জীববৈচিত্র ও অতি প্রয়োজনীয় প্রাণীটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
নীলফামারী মশিউর রহমান ডিগ্রী কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মৃণাল কান্তি রায় বলেন, একসময় গ্রাম-গঞ্জে বনে বাঁদাড়ে উঁচু গাছের মগডালে বাদুড় ঝুলিয়ে থাকার দৃশ্য হরহামেশাই চোখে পড়ত। বাদুড়ের ওড়াউড়ি আর কলকাকলীতে চিরায়ত গ্রাম বাংলার প্রকৃতি সেজে উঠেছিল অন্যরুপে। বর্তমানে বাদুড়ের নিরাপদ আবাসস্থল বড় বড় বৃক্ষরাজি প্রকৃতি থেকে উজাড়, খাবারের সংকট, গ্রামে গ্রামে বিদ্যুতের আধিক্যে বিলুপ্তিপ্রায় স্তন্যপায়ী নিশাচর প্রাণী বাদুড়। প্রকৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা বাদুড় এখন দশ গ্রামেও চোখে পড়ে না। পাখির মতো উড়লেও আকৃতির কারণে এদের কদর নেই।
বিডি প্রতিদিন/জামশেদ