গাজীপুরের কালিয়াকৈরে মা ও মেয়ের শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে মামলার প্রধান আসামি মো: রাহিল রানা ওরফে তানভিরকে (৩৫) ৭২ ঘন্টার মধ্যে গাজীপুর থেকে গ্রেফতার করেছে করেছে র্যাব-১ এর সদস্যরা। গ্রেফতারকৃত তানভির টাঙ্গাইল জেলার সদর থানার বরুহা গ্রামের নাজিম উদ্দিনের ছেলে।
রবিবার দুপুরে র্যাব-১ গাজীপুরের পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক (অপস এন্ড মিডিয়া অফিসার) মো: মাহফুজুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিহত মোর্শেদা বেগম (২২) নাটোর সদর থানার লক্ষীপুরা এলাকার মুকুল আলীর মেয়ে। সে তার মা ফুলবানুর (৪৫) সাথে গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার উত্তর সফিপুর এলাকার মামুন মিয়ার টিনসেড বাড়ীতে ভাড়া থাকতো।
র্যাব-১ গাজীপুরের পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের সহকারী পরিচালক (অপস এন্ড মিডিয়া অফিসার) মো: মাহফুজুর রহমান জানান, গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানাধীন উত্তর সফিপুর গ্রামের মামুন মিয়ার টিনসেড বাড়ীতে তানভীরের স্ত্রী মোছা: মোরশেদা এবং তার শ্বাশুড়ী মোছা: ফুলবানু ভাড়া থাকতেন। গত বুধবার (১৬ অক্টোবর) দিবাগত রাত তিনটার দিকে তানভীর সহ আরোও ২/৩ জন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি পূর্বপরিকল্পিতভাবে তানভীরের স্ত্রী মোছা: মোরশেদা এবং তার শ্বাশুড়ী মোছা: ফুলবানুর (তাদের) ভাড়াটিয়া বাসার দরজার সামনে এসে মোরশেদার মেয়ে রাইসাকে (২) নিয়ে এসেছে এই কথা জানিয়ে দরজা খোলার কথা বলে। দরজা খোলার সাথে সাথে আসামীরা ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে মো: রাহিল রানা তানভীরের হাতে থাকা বোতলে ভর্তি পেট্রোল মোছা: মোরশেদা এবং মোছা: ফুলবানুর গায়ে এবং ঘরে থাকা জিনিসপত্রে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে বাহির থেকে দরজা আটকিয়ে দিয়ে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়। তাদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন কক্ষের ভিতরে আগুন দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে তাদেরকে উদ্ধার করে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটে ভর্তি করে। পরদিন বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) সকাল ১০টার দিকে মোর্শেদা বেগম এবং রাত ৮টার দিকে শাশুড়ী ফুলজান বেগম ওই হাসপাতালে চিকৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। নিহতের ঘটনায় ভিকটিম মোছা: ফুলবানুর মা আম্বিয়া বেগম (৬০) বাদী হয়ে কালিয়াকৈর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করে।
তিনি আরো জানান, পরে র্যাব-১ গাজীপুরের পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের সদস্যরা ঘটনাটি আমলে নিয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং আসামী গ্রেফতারে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। গোপন সংবাদে তারা জানতে পারে আসামী রাহিল রানা তানভীর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানাধীন নাওজোড় এলাকায় আত্মগোপনে আছে। শনিবার (১৯ অক্টোবর) বিকেল পৌণে ৬ টার দিকে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে মো: রাহিল রানা তানভীরকে গ্রেফতার করে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামী তানভীর হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার কথা র্যাবের কাছে স্বীকার করে। গ্রেফতারকৃত আসামীকে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তানভীরের সঙ্গে পাঁচ বছর আগে নাটোর সদরের ল²ীপুরা এলাকার মুকুল আলীর মেয়ে মোর্শেদা বেগমের বিয়ে হয়। তারা স্বামী-স্ত্রী কোনো কাজ করতেন না। মোর্শেদার মা ফুলবানু একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। তার কাজের কারণে মা-মেয়ে কালিয়াকৈরের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পারিবারিক কলহের জেরে কয়েক মাস ধরে তানভীর তাদের সঙ্গে থাকতেন না। এরই জের এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে জানা গেছে।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ মাহমুদ বলেন, আসামী রাহিল রানা তানভীরকে রবিবার দুপুরে গাজীপুর আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এএম