চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বনাশা পদ্মা নদীর ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে নদী পাড়ের লাখ লাখ মানুষ। ইতিমধ্যে নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভূখণ্ড। ক্রমাগত ভাঙনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার নারায়নপুর, চরবাগডাঙ্গা ও আলীতুলী ইউনিয়ন, শিবগঞ্জ উপজেলার পাঁকা, দুর্লভপুর ও মনাকষা ইউনিয়নে কয়েক হাজার একর জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। বর্তমানে যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও বিলীন হতে বসেছে।
জানা গেছে, জেলার শিবগঞ্জ সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে আগ্রাসী পদ্মা নদী। সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলায় পদ্মা নদী পাড়ের গ্রামগুলোতে কয়েক লাখ মানুষের বসবাস। আর সর্বনাশা পদ্মার ভাঙন আতঙ্ক নিয়ে বেঁচে আছেন তারা। তিন দশকের বেশি সময় ধরে ভাঙনের স্বীকার চরাঞ্চলের মানুষ। অব্যাহত নদী ভাঙনের সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকাই তাদের নিয়তি। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষ রিক্ত ও নিঃস্ব হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কৃষক, জেলে এবং পেশাজীবী মানুষেরা তার পেশা ও পৈত্রিক ভিটে মাটি হারিয়ে হচ্ছেন সর্বশান্ত।
তথ্যমতে, গত তিন দশক ধরেই কম-বেশি পদ্মার ভাঙন চলছে। এতে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভূখণ্ড পদ্মা নদীতে বিলিন হয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, পরিস্থিতি ভয়াবহ হলেও ভাঙন রোধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ এখনও লক্ষ্য করা যায়নি। সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড পদ্মা নদীর ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্রমতে, ডান ও বাম তীর রক্ষায় ২৫ কিলোমিটার এলাকায় বাঁধ নির্মাণ করতে চায় সংস্থাটি। এরই মধ্যে প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডিজাইন, এস্টিমেটসহ যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ১৭শ’ কোটি টাকার এই প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। তবে পাউবো বলছে, অনেকগুলো প্রক্রিয়া অনুসরণের মধ্যদিয়ে একটি প্রকল্পের অনুমোদন মেলে। নিয়মানুযায়ী সেইসব প্রক্রিয়া মেনেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
পাউবো সূত্র বলছে, দেশের অন্য অঞ্চলে নদীর এক তীর ভেঙে অন্য তীরে চর জাগে, দেশের জমি দেশেই থেকে যায়। কিন্তু সীমান্ত নদীর ভাঙনে জমি চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না। সূত্রটি বলছে, বাংলাদেশের জমির পরিমাণ এতো কম যে, দেশটি ভূমি-ক্ষুধার্ত (ল্যান্ড হাংরি) হিসেবে চিহ্নিত। এর ওপর প্রতিবছর ভাঙনে একরের পর একর জমি চলে যাচ্ছে ভারতের অপদখলে। এভাবে জমি চলে গেলে দেশে আরও বড় ধরনের বিপর্যয় তৈরি হবে।
শিবগঞ্জ উপজেলার দুর্লভপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড সদস্য সাইদুর রহমান বলেন, তিন দশকের বেশি সময় ধরে এই এলাকায় নদী ভাঙন চলছে। এতে ৮ কিলোমিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে গেছে, আর চর জাগছে ভারতে। চলতি বছরেও প্রায় ৩৩০ মিটার জিও ব্যাগ ও জিওটিউব পানিতে তালিয়ে গেছে। ২শ’ মিটার ফসলি জমি নদীতে নেমে গেছে। ভাঙন আতঙ্কে পদ্মাপাড়ের মানুষ নির্ঘুম রাত পার করছেন। মানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি করেন এই জনপ্রতিনিধি।
এ প্রসঙ্গে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম আহসান হাবিব জানান, পদ্মা নদীর ডান এবং বাম তীর রক্ষায় প্রায় ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় চরআষাড়িয়াদহ, নারায়ণপুর ও পাঁকা এলাকার ডান তীর এবং মনাকষা থেকে দূর্লভপুর পর্যন্ত বাম তীর রক্ষায় বাঁধ নির্মাণ করা হবে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১৭শ’ কোটি টাকা। প্রকল্পটির ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হয়েছে। বর্তমানে ডিজাইন, এস্টিমেটসহ যাচাই-বাছায়ের কাজ চলছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জে পদ্মা তীরবর্তী এলাকা স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পাবে।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল