ইউরেনাস গ্রহের চাঁদ এরিয়েল–এর গভীরে একসময় একটি বড় মহাসাগর ছিল বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, চাঁদটির কক্ষপথ অতীতে অনেক প্রসারিত হয়েছিল। ফলে অভ্যন্তরের চাপের কারণে পৃষ্ঠে ফাটল তৈরি হয়।
এই তথ্য পাওয়া গেছে মহাকাশযান ভয়েজার ২–এর তোলা ছবির বিশ্লেষণে। সেখানে দেখা গেছে, এরিয়েলের পুরোনো ক্রেটার (বড় গর্ত)-এর আশপাশে উপত্যকার মতো গঠন এবং দীর্ঘ ফাটল রয়েছে। বিজ্ঞানীরা কম্পিউটার মডেলের সাহায্যে দেখেছেন, চাঁদটির কক্ষপথ সামান্য ডিম্বাকৃতির (অল্প প্রসারিত) ছিল। এর উৎকেন্দ্রিকতা প্রায় ০.০৪, অর্থাৎ এটি পুরোপুরি গোল নয়। ফলে ইউরেনাসের চারপাশে ঘুরতে গিয়ে চাঁদটির অভ্যন্তরে প্রচণ্ড জোয়ার–ভাটার চাপ সৃষ্টি হতো।
গবেষণা অনুযায়ী, তখন এরিয়েলের বরফস্তরের নিচে প্রায় ১৬০ কিলোমিটার গভীরে পানির স্তর ছিল। এই পানির চাপেই বরফে ফাটল ধরেছিল এবং ভূতাত্ত্বিকভাবে নতুন অংশ তৈরি হয়।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এরিয়েলের মসৃণ সমতলভূমি তৈরি হয়েছিল ক্রায়োভলকানিজম–এর (বরফ-অগ্ন্যুৎপাত) মাধ্যমে। এতে পানি, বরফ ও অন্যান্য গ্যাসমিশ্রিত পদার্থ অগ্ন্যুৎপাতের মতোভাবে বের হয়ে নিম্নভূমিতে ছড়িয়ে পড়ে। এসব উপাদান পরে জমে গিয়ে সমতল এলাকা তৈরি করে, যা দীর্ঘ সময় ধরে ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়।
এরিয়েলের পৃষ্ঠে প্রাচীন ও অপেক্ষাকৃত নতুন উভয় ধরনের এলাকা রয়েছে। তাই ঠিক কখন মহাসাগরটি সেখানে ছিল, তা নিশ্চিতভাবে বলা কঠিন। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এরিয়েলের পৃষ্ঠে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলো ঘটেছে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ কোটি বছর আগে।
তখন জোয়ার–ভাটার ফলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হতো। এর পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা সেখানে অ্যামোনিয়া যৌগের উপস্থিতিও শনাক্ত করেছেন। অ্যামোনিয়া সাধারণত দ্রুত নষ্ট হয়, তাই ধারণা করা হচ্ছে—এই যৌগই সেখানকার পানির তাপমাত্রা কমিয়ে দিয়েছিল এবং বরফের স্তর জমাট বেঁধে রেখেছিল।
জনস হপকিনস ইউনিভার্সিটি অ্যাপ্লায়েড ফিজিকস ল্যাবরেটরি–এর বিজ্ঞানী টম নর্ডহেইম বলেন, আমরা প্রমাণ পাচ্ছি যে ইউরেনাস সিস্টেমে অন্তত দুটি চাঁদের অভ্যন্তরে একসময় মহাসাগর ছিল।
প্ল্যানেটারি সায়েন্স ইনস্টিটিউট–এর গবেষক অ্যালেক্স প্যাথফ বলেন, এরিয়েলের পৃষ্ঠে যে ফাটলগুলো দেখা যাচ্ছে, সেগুলো তৈরি হওয়ার জন্য অভ্যন্তরে একসময় একটি মহাসাগর থাকা আবশ্যক।
বিজ্ঞানীদের মতে, এরিয়েল চাঁদের এই নতুন আবিষ্কার সৌরজগতের বরফাচ্ছন্ন উপগ্রহগুলো নিয়ে ভবিষ্যৎ গবেষণার নতুন দিক খুলে দেবে।