সাতক্ষীরায় হোটেলে সরবরাহের উদ্দেশ্যে আনা ৩০ কেজি পচা খাসির মাংসসহ এক মাংস ব্যবসায়ীকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
রবিবার (২ নভেম্বর) সকালে শহরের লাবণী মোড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। পরে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলাম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ দণ্ড প্রদান করেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের দেবহাটা উপজেলার কুলিয়া বাজার এলাকার রুহুল কুদ্দুসের ছেলে। তিনি সাতক্ষীরা শহরের কামালনগর বউ বাজারে ‘কবির মিট’ নামে একটি মাংসের দোকান পরিচালনা করেন।
সম্প্রতি সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন হোটেল ও রেস্তোরাঁয় বাইরে থেকে নিম্নমানের মাংস সরবরাহ করা হচ্ছে—এমন অভিযোগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন জেলা মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান। ওই অভিযোগের পর সমিতির সদস্যরা শহরের প্রবেশমুখে নজরদারি শুরু করেন যাতে পচা বা নিম্নমানের মাংস শহরে প্রবেশ করতে না পারে।
রবিবার সকালে নজরদারির সময় লাবণী মোড়ে সন্দেহজনক অবস্থায় বস্তাভর্তি মাংসসহ আব্দুল কাদেরকে আটক করা হয়। মাংসের রং ও দুর্গন্ধে সন্দেহ হলে তাঁকে পৌরসভা ও প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা পরীক্ষা করে নিশ্চিত করেন, মাংসগুলো পচা ও দুর্গন্ধযুক্ত।
জেলা মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের (সমিতির অন্য সদস্য) ও সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান জানান, অভিযুক্ত ব্যক্তি তাঁদের সমিতির সদস্য নন। তাঁরা শহরে নিম্নমানের মাংসের প্রবেশ রোধে প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছেন।
অভিযুক্ত আব্দুল কাদের স্বীকার করেছেন, তিনি দেবহাটার কুলিয়া বাজারে ছাগল জবাই করে সেই মাংস সাতক্ষীরার কাচ্চি ডাইনসহ কয়েকটি হোটেলে বিক্রির জন্য আনছিলেন।
অভিযানে উপস্থিত ছিলেন জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান, নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা দীপঙ্কর দত্ত, জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের ভেটেরিনারি অফিসার ডা. বিপ্লব জিৎ মণ্ডল, মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক অলিউর রহমান, কাটিয়া ফাঁড়ির এসআই শেখ বোরহান, ও পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মো. রবিউল আলম লাল্টু প্রমুখ।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তাজুল ইসলাম জানান, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি অবৈধভাবে পচা মাংস এনে শহরের হোটেলগুলোতে সরবরাহ করছিলেন। প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে। কোন কোন হোটেলে এই মাংস সরবরাহ করা হতো, তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী মামলা নং ৬৭০/২০২৫ ধারায় খাদ্য নিরাপত্তা আইনের ৪৫ ধারা মোতাবেক তাকে দুই মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানা অনাদায়ে আরও ২০ দিনের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. বিপ্লব জিৎ মণ্ডল জানান, ‘জব্দ করা মাংসের স্বাভাবিক রং ছিল না এবং তীব্র দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। এটি বহু আগে জবাই করা বা মৃত পশুর মাংস হতে পারে, যা মানবস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।’
পরে জব্দকৃত প্রায় ৩০ কেজি মাংস জনসমক্ষে কেরোসিন ঢেলে ধ্বংস করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/জামশেদ