শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা

ভোর রাতে পরি আসে

ইমরান পরশ

ভোর রাতে পরি আসে

হঠাৎ করে সৌরভের ঘুম ভেঙে যায় খুব ভোরে। তখনো শেষ রাতের তারাটি আকাশে আলো ছড়াচ্ছিল। চাঁদের নিয়ন আলোয় আবছা দেখা যাচ্ছিল ঘরের ভেতর। টিনের দোতলা ঘর নিচতলায় দাদুর কাছে ঘুমিয়ে ছিল সে। দাদুর ওই একটা অভ্যাস সৌরভকে সঙ্গে নিয়ে ঘুমানো। তাকে দাদু খুব ভালোবাসেন। তাকে পাশে শুইয়ে বিভিন্ন রকম গল্প শোনান তিনি। অবশ্য সে তার আম্মু ছাড়া ঘুমোতে চায় না। অবশ্য এতে করে সে মজাও পায়। দাদুর পীড়াপীড়িতে আম্মুর কাছে ঘুমোনো হয় না। ওর যখন ঘুম না আসে দাদু আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। গল্প শুনতে শুনতে ঘুমের রাজ্যে চলে যায় সৌরভ। ওর ভাইয়া সজল আবার মায়ের ঘরে ঘুমোয় অন্য একটি রুমে। সজল দাদুর কাছে ঘুমোতে চায় না, এখন একটু বড়ো হয়েছে তো তাই। কিসের যেন শব্দে ঘুম ভেঙে যায় সৌরভের। টিনের চালে ঝনঝনাঝন শব্দ করে উঠলো। ভয়ে দাদুকে জড়িয়ে ধরলো সে। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো ঘরটা কেমন যেন আলোকিত হয়ে গেছে। রুপোর মতো ঝিলিক খেলে গেল যেন। কার যেন পায়ের আওয়াজ শোনা গেল, আম্মু না তো? নাহ্ তো ভোরে আম্মু কিভাবে আসবে। আর আম্মু এলে তো ডেকে তুলতো দরজা খুলে দিতে বলতো। তাহলে কি আজকে দরজা খোলা ছিল? নাহ্ তাও তো না। ভাবছে সৌরভ। মনে মনে সাহস জোগাচ্ছে সে, চোরের ভাবনাও মাথা থেকে যাচ্ছে না। সাহস করে তাকালো নাহ্ কিছু তো দেখা যাচ্ছে না। ঘরের ভেতর দিনের মতো পরিষ্কার অথচ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হঠাৎ চুড়ির আওয়াজ কানে এলো। মহিলারা কাচের চুড়ি পরলে যেমন করে শব্দ হয় সে রকম, মাঝে মাঝে আম্মু যেমনি করে চুড়ি পরলে শব্দ হয়। চোখে পড়ল ফর্সা একটি মেয়ে তার রুম থেকে ভেতর রুমে যাচ্ছে, পরনে তার হালকা সাদা ফ্রক। ঠিক যেন রাজকুমারীর গল্পের সেই পরীর মতো। সৌরভ মাথা উঁচু করে ভয়ার্ত কণ্ঠে বলল কে? জবাব নেই আবারও প্রশ্ন করল সে। ভেতর থেকে আস্তে করে মায়াবী সুললিত কণ্ঠে জবাব এলো আমি সুহাসিনী।

সুহাসিনী চিনলাম না তো, চিনবে চিনবে আগে আমার কাছে এসো তারপর তোমাকে বলছি। সৌরভের সাহস হতে লাগলো সে উঠে ভেতর রুমে চলে গেল। তাকাতেই তার চোখে আলোক রশ্মি ভেদ করে চলে গেল।

কি ভয় পেয়েছ?

না না বললে কি হবে তোমার শরীর ভার হয়ে আছে, গায়ের পশম খাড়া হয়ে আছে না? মাথা নাড়ে সৌরভ তুমি বুঝলে কি করে? আমি সব বুঝি সব দেখতে পাই।

কে তুমি?

বললাম না সুহাসিনী

বুঝলাম তোমার নাম সুহাসিনী তুমি আসলে কে?

শুনলে তুমি ভয় পাবে না তো?

না ভয় পাব কেন আমি পরী রানী সুহাসিনী

তুমি পরী? হ্যাঁ, আমি কি স্বপ্নে দেখছি, না তুমি বাস্তবে আমাকে দেখছ। আচ্ছা তুমি কিভাবে এলে। আমি রোজ আসি। তোমার সঙ্গে দেখা করতে চাই কিন্তু ওই বুড়িটা তোমাকে কোলে করে যেভাবে ঘুমায়, আমি তোমার সাথে দেখা করতে পারিনে।

আজকে বুড়িকে দিয়েছি ঘুম পাড়িয়ে। তুমি দাদুর কথা বলছ?

হ্যাঁ আজকে দাদু জাগবে না?

না তোমার দাদুর চোখে আমি ঘুম দিয়ে রেখেছি।

আচ্ছা তুমি আমার বন্ধু হবে? বন্ধু হতেই তো এসেছি। আমি তোমার সঙ্গে রোজ স্কুলে যাই। কোথায় আমি তো দেখি না। তুমি দেখতে পাওনা কারণ আমি দেখা দিইনা। আচ্ছা কালকে আমার সঙ্গে স্কুলে যেও কেমন।

অবশ্যই যাব পূর্ব আকাশ ফর্সা হতে থাকল। পরী রানী ঘর থেকে বিদায় নিয়ে চোখের পলকে উধাও হলো। সকালে মায়ের কাছে ঘটনাটা বলল সৌরভ। মা বিশ্বাসই করলেন না স্বপ্ন বলে উড়িয়ে দিলেন। বললেন ঘোরের ভেতর ছিলে তাই ওরকম মনে হয়েছে। পরদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার পথে সৌরভের মাথায় কে যেন টোকা দিল। সাইকেল থেকে উপর দিকে তাকিয়ে সৌরভ তো অবাক। কি ব্যাপার তুমি সত্যি এসেছ। কেন তোমার বিশ্ব্বাস হয়নি, শোন আমরা তোমাদের মানুষের মতো নই। সব কাজে শুধু জুয়োচুরি। স্কুলে গিয়ে সৌরভ টুলে বসলো। ক্লাসে টিচার প্রবেশ করলেন। পরী রানী শূন্যে ভেসে ক্লাস নেওয়া দেখছিল কি মনে করে দুষ্টুমির চিন্তা মাথায় ধরল। সে ডাস্টারটা স্যারের কাছ থেকে টেনে নিচ্ছিল।

স্যার প্রথমে ধমক দিয়ে উঠলেন, চেয়ে দেখেন কিছু নেই। ছাত্রছাত্রী সিটে বসা, সৌরভ সুহাসিনীর কাণ্ড দেখে হাসছিল। পরীটা আরও মজা করে ডাস্টার নিয়ে ক্লাসে দৌড়াচ্ছিল। শুধু ডাস্টার ঘুরতে দেখে ক্লাসের ছাত্রছাত্রীরা ভয়ে ভূত ভূত বলে ক্লাস ছেড়ে বের হয়ে গেল, শুধু সৌরভ ছাড়া। বিপ্লব স্যার বললেন কি ব্যাপার তুমি গেলে না কেন? কারণ স্যার ওটা ভূতের কাণ্ড নয়।

তাহলে? ও হলো আমার পরী বন্ধু সুহাসিনী। স্যার ধমক দিলেন, ওমনি পরী মানুষের রূপ ধারণ করে স্যারের সামনে দাঁড়াল। স্যার তো অবাক। স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে হাতজোড় করল।

স্যার ক্ষমা করে দিলেন। ইতোমধ্যে স্কুলের সবার মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। অন্যান্য টিচার ছুটে এলেন। ছুটির পর দুজনে বাড়ি ফিরল। সৌরভকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে পরী রানী চলে গেল। ভোর রাতে সে সৌরভের ঘুম ভাঙাল। হাতে রজনীগন্ধার ফুল।

 

সর্বশেষ খবর