শুক্রবার, ২৩ অক্টোবর, ২০১৫ ০০:০০ টা
গল্প

জেমাইস ভ্যু

আশিক মুস্তাফা

জেমাইস ভ্যু

ভূতের বাচ্চাটা বেশ মোটাসোটা। জাঙ্কফুড খায়। কেএফসি, বিএফসি, সিপি, বোমার্স এবং পিৎজাহাটে গিয়ে বসে থাকে। মানুষের মতো জামা পরে। দেখতে আস্ত মানুষ! এই বাচ্চা ভূতটার জামাকাপড় নিয়ে ভূত সমাজে কানাঘুষা। টেইলাররা তার জামার অর্ডার নিতে চায় না। ভূত মার্কেটে তো তার গায়ের জামাকাপড় পাওয়াই যায় না। তাই পিচ্চি ভূতটার বাবা-মা তাকে নিউমার্কেটে নিয়ে যান। নতুন জামা পরে সে মানুষ সমাজে ঘুরে। ঘুরতে ঘুরতে ভূত সমাজের কথা ভুলে যায়। মা-বাবার কথা ভুলে যায়। ইশকুল আর খেলার মাঠের কথাও ভুলে যায়। এই ভুলোমনা রোগটা ইশকুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই বড় আকার ধারণ করেছে। ক্লাসে আজ যাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় কাল গিয়ে তাদের আর চিনেই না। ক্লাস টিচারকেও ভুলে যায়। ক্লাসে দাঁড়িয়ে রোজ রোজ বলে, ‘আপনি কেন ক্লাসে এসেছেন স্যার?’

তার এই প্রশ্ন শুনে স্যার রেগে যাওয়ার কথা হলেও রাগেন না। উল্টো সবার সঙ্গে কিক কিক হাসেন। ভূতরা অতি আনন্দ প্রকাশের সময় কিক কিক শব্দ করে হাসে। তাদের হাসির শব্দ মুটু বাচ্চা ভূতটার একদম সহ্য হয় না। সে গায়ের জামা টেনে ছিঁড়ে ফেলে। রাগে-ক্ষোভে কটমট করে জাপানি সুমু কুস্তিগিরদের মতো শরীর চাপড়ায়। এই দেখে সবাই আরও শব্দ করে হাসে। বাচ্চা ভূত বড় করে একটা ফুঁ দেয়; অমনি ক্লাসে বৈশাখী ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়। সবাই ঝড়ের ঝাপ্টায় উড়ে মাঠে গিয়ে পড়ে। পড়েই জ্ঞান হারায়। এমন দৃশ্য ভালো লাগে মুটু বাচ্চা ভূতের। সবাই জ্ঞান হারিয়ে পড়ে থাকে চাঁদের আলোয় আর মুটু ভূতং ছানাটা তাদের দিকে আঙুল তুলে কিক কিক করে হাসে। হাসতে হাসতে খুকুর খুকুর দু-একটা কাশিও দেয়। কাশি শেষ হতে না হতেই একটু আগে ঘটে যাওয়া কাফ্ফ বেমালুম ভুলে যায়। আশপাশে চোখ বড় করে তাকায়। ক্লাসে কাউকে দেখতে না পেয়ে কান্না জুড়ে দেয়। তার কান্নার শব্দে জেগে ওঠে জ্ঞান হারিয়ে মাঠে পড়ে থাকা শিক্ষক-ছাত্ররা। তড়িঘড়ি সবাই ক্লাসে এসে পড়ায় মন দেয়। পেছনের বেঞ্চে বসে মুটু ভূতং ছানা ইশকুল ব্যাগ থেকে পিৎজা বের করে খায়। তার এই খাওয়া-খাওয়িতেও আছে ভুলোমনা স্বভাব। এখন কিছু খেলো তো একটু পর দিব্যি ভুলে যায় বিষয়টা। তাই সবসময় তার সঙ্গে খাবার রাখতে হয়। জানো, সে কিন্তু খাবারের নামও ভুলে যায়। পিৎজা বলে এখন যেটা খাচ্ছে একটু পর চিকেন মনে করেই হয়তো তাতে কামড় বসাবে। মাঝেমধ্যে সে আবার চাঁদের আলো খায়। এই তো সেদিন মধু-পূর্ণিমা গেল। রাত জেগে সে ঢকঢক চাঁদের আলো খেলো। মুটু বাচ্চা ভূতের খাবার রুটিনে চাঁদের আলো না থাকলে চলে না। রোজ রাতে তার এক বাটি চাঁদের আলো চাই। তার মা বয়ামে ভরে রেখেছেন চাঁদের আলো। সে বাটির চাঁদের আলো সুরুৎ করে ডালের মতো শব্দ করে টেনে খায়। তো সেদিন মধু-পূর্ণিমায় বসে সে বোতল থেকে চাঁদের আলো খাচ্ছিল ঢকঢক করে। তখনি তার সামনে এসে দাঁড়াল অ্যাপ্রন পরা এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। গলায় স্থেথিস্কোপ ঝুলছে। নাকের ডগায় চশমা এনে তিনি চশমার উপর দিয়ে দেখছেন মুটু ভূতং ছানাটাকে। সে ডাক্তারকে দেখেই বলে, ‘ও বাবা; তুমি গলায় স্থেথিস্কোপ প্যাঁচালে কেন? দাও না স্থেথিস্কোপ, খাব।’

কথা শুনে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ভূতং ছানাটার বাবার চোখে জল টলমল করে। কষ্টে তিনি ডাক্তারকে বলেন, ‘দেখলেন ডাক্তার মশাই, বাবাকে চিনতেও ভুলে যায় সে। এখন উপায় কী?’

ডাক্তার মুটু ভূতং ছানাটার নাড়ি টেপে, চোখ উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে প্রায়ই এই রোগ দেখা দেয়। এটা এক ধরনের মানসিক রোগ। মানুষের কাছে এই রোগ ‘জেমাইস ভ্যু’ নামে পরিচিত। রোগটা হলে যে কোনো সময় যে কাউকে, যে কোনো স্থানকে ভুলে যায় মানুষ। কিন্তু ভূতসমাজে এ রোগ এলো কীভাবে?’ ভাবনায় পড়েন বিশেষজ্ঞ ভূত ডাক্তার। ভাবনায় পড়ে ভূতসমাজ। শেষ রাতের দিকে এই নিয়ে ভূতপাড়ায় বসছে জরুরি মিটিং। সবাই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলছে। আর মুটু ভূতং ছানাটা বটগাছের মাথায় বসে চাঁদের আলো দিয়ে পিৎজা খাচ্ছে!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর