শুক্রবার, ১৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নদী ও জলপরী

আহমেদ রউফ

নদী ও জলপরী

নদী।

খুকু মণির বইয়ের পাতায়!

কবির কবিতায়;

শিল্পীর কণ্ঠে

আঁকিয়ের তুলিতে...

কোথায় নেই নদী।

ছোট্টবেলায় মায়ের হাত ধরে নাইতে যাওয়া আর ঘাসফড়িংয়ের পেছন পেছন দৌড়াদৌড়ি সেসব স্মৃতি আজ কেবল স্বপ্নের মতো মনে হয়। আর সেসব কথা মাথায় রেখেই সারা দেশে নদী নিয়ে কাজ চলছে। অমিতদের স্কুলেও চলছে নদীর ওপর বিভিন্ন কার্যক্রম। অমিত একটি নদীর চিত্র এঁকে এসব ভাবছে। হঠাৎ  পেছন ফিরে দেখে রিমি মামণি হাসছে আর বলছে কাকু তুমি একি ড্রয়িং করেছো। এটা কি সাপের লেজ...

অমিত রিমির দিকে তাকাতেই এক দৌড়ে মায়ের কাছে চলে যায় আর মায়ের কাছে গিয়ে বলে, মা জানো অমিত কাকু অনেক বড় একটি সাপ এঁকেছে, একটুও ভালো হয়নি। অমিত তখনো তার রুমে বসে কাজ করছে। আজ খুব কষ্ট হচ্ছে অমিতের। আগামীকাল তাদের ইস্কুলে নদী নিয়ে কিছু একটা লিখে নিয়ে যেতে বলল স্যার। কিন্তু কী লিখবে মাথায় আসছে না। শুধু ছবি এঁকে যাচ্ছে। আর ভাবছে কী লিখা যায়। আবারও রিমি এসে হাজির, কাকু মা তোমাকে ডাকছে। আচ্ছা আসছি, তার আগে তুই আমার কাছে আয় তো মা!

কেন?

তোকে নদীর গল্প শোনাবো।

সত্যি বলছো কাকু!

সত্যি...

অমিত জানালার ফাঁকে তাকিয়ে দেখে আকাশে চাঁদ উঠেছে, আর দেখছে চাঁদের আলোয় ঝলমলে এক রাত! তখনি মনে মনে গল্পটা তৈরি করছে অমিত।

কি হলো কাকু বল!

হুম...

নদী

জ্যোত্স্নার চাঁদের বুড়ির সঙ্গে কথা বলছে। ওগো বুড়ি তুমি কি আমায় চাঁদের আলো এনে দেবে। ঝলমলে জ্যোত্স্না। জলে চিকচিক করা নদী। জ্যোত্স্নার জলে হাসব আমি। জলের ভিতর থাকা জলপরী উঠে আসবে। আর বলবে; বা! নদী তুমি অনেক সুন্দর হয়ে উঠছো দিন দিন। আমি সারাক্ষণ তোমার বুকে ছায়ার মতো লেগে আছি তুমিও আমায় তোমার বরফগলা জলের ভিতর রেখেছো ভালোবাসার নিবিড় মমতায়। যেমনটি তার মা শিশুটিকে বুকের ভিতর পরম যত্নে আগলে রাখে। আজ দিন দিন মানুষগুলোর কেমন যেন মায়া মমতা কমে যাচ্ছে। তা না হলে এমন ভাবে সবুজ বনবনানি ধ্বংস করতে পারে। এই বলে জলপরী একটু থামে...

নদী শুনছে শুধু শুনছে জলপরীর কথা। আর ভাবছে...

জলপরী কী বলতে চাচ্ছে। নদীর খুব ভালো লাগছে। ইচ্ছা করছে সারারাত জলপরীর সঙ্গে কথা বলতে।

কী হলো থেমে গেলে যে, তোমার কথাগুলো শুনতে বেশ লাগছে। সবটা না শুনলে যে কিছু বুঝতে পারবো না। তারপর কী হলো কেনই বা মানুষের মায়া মমতা কমে গেল...

যদি তা না হবে দিন দিন কেমন নদীগুলো ধ্বংস করে দিচ্ছে দেখছো? নদীর গভীরতা কমে যাচ্ছে, নদীই যদি না থাকে তাহলে জল থাকবে কোথায় আর জল যদি না থাকে জলপরী থাকবে কোথায়? বিভিন্ন প্রজাতির মাছেরা থাকবে কোথায়; আরও আছে বিভিন্ন প্রজাতির জলজ প্রাণী, তাদের কী হবে, মাছ না থাকলে জেলেরা কী করে খাবে।

 একবার চিন্তা করে দেখেছো নদী। সব মিলিয়ে অবস্থাটা কী হবে। তখন কে আমাকে পরম মমতায় আগলে রাখবে। সত্যি তো আমি এভাবে কখনো ভেবে দেখিনি। আমাদের ধ্বংস করে দিন দিন গড়ে উঠছে রাজপ্রাসাদ, আর সেখানে দিব্বি আরাম করছে পৃথিবীর অবুঝ মানুষগুলো। একবারও ভাবছে না নদী শুকিয়ে গেলে কতটা ক্ষতি হবে তাদের। এখন আমারও মনে হচ্ছে মানুষ কত বোকা। নিজেদের পায়ে নিজেরা-ই কুড়াল মারছে।

নদীর খুব মন খারাপ হয়ে যায়! জলপরীর কথা বুঝতে পেরে। এখন আর ভালো লাগছে না নদীর! শব্দহীন নদীর জল। এখন কিছু ভাবতে পারছে না নদী। জলপরী নদীর মন খারাপ দেখে বলল, নদী তুমি মন খারাপ করো না। দেখবে এক সময় মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারবে আর ঠিক তখনি তারা নদীকে ভালোবাসতে থাকবে। তা না হলে তারা নিজেরাই ধ্বংস হবে।

দিন দিন মানুষ সত্যিই ধ্বংস করছে নদী। আর এই নদীর জলেই বাঁচিয়ে রাখে আমাদের আবাদি জমি। ওই নদীর মাঝে বেড়ে উঠে জলজ প্রাণী, মাছ। সেই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে কত অসহায় জেলে। তাই নদীকে বাঁচাতে নদীর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে আমাদেরও...

চল ছোট্ট বন্ধুরা আমরা আজ হারিয়ে যাই কোনো এক নদীর বুকে যেখানে থাকবে না গাড়ির কালো ধোঁয়া, থাকবে না কোনো শব্দদূষণ। প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যাবো আমরা। আর সঙ্গে থাকবে নদী। সেই নদীর জলে জলকেলিতে আবারও একবার ফিরে যাবো ফুল পাখি নদীর কাছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর