শিরোনাম
শুক্রবার, ৩ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

মমতা

মো. মাঈন উদ্দিন

মমতা

আবিদ আর আরিফ দুজনে প্রতিদিন এ রাস্তা দিয়ে স্কুলে আসা যাওয়া করে কিন্তু আজ আরিফ স্কুলে আসেনি। সে অসুস্থ। তাই আবিদ একাই স্কুলে গিয়েছিল। চৈত্র মাসের মেঘমুক্ত আকাশ। কাঠ ফাটা রোদে স্কুল থেকে ফিরছে আবিদ। হাঁটতে হাঁটতে পরিশ্রান্ত, তাই রাস্তার পাশে শেওড়া গাছের নিচে ছায়ায় দাঁড়াল সে। হঠাৎ পাখির ছানার গোঙানি শব্দ। ডান হাতে কপাল থেকে নেমে আসা ঘাম মুছতে মুছতে আবিদ এদিক সেদিক তাকালো কিন্তু ঠিক কোথা থেকে শব্দটা আসছে বুঝে উঠতে পারলো না। পাখির প্রতি আবিদের প্রবল আকর্ষণ। সে কান খাড়া করে ঝিম মেরে দাঁড়িয়ে বুঝতে চেষ্টা করল কোথা থেকে গোঙানির শব্দ আসছে। এবার সে বুঝতে পারল শেওড়া গাছের ঝোঁপের ভিতর থেকেই আসছে শব্দটা। আবিদ কাঁধের ব্যাগটি দুর্বা ঘাসের ওপর রেখে এক লাফে উঠে এলো শেওড়া গাছের ডালে। আবিদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাখি ছানার গোঙানি শব্দ থেমে গেল। আবিদও নড়াচড়া না করে সামনে তাকাচ্ছে মিটমিট করে। সম্ভবত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে পাখি ছানাটি আবারো গোঙিয়ে উঠল। আবিদ উিঁক দিয়ে ঝোঁপের ভিতর তাকিয়ে দেখল একটি দোয়েল ছানা লতা-পাতায় জড়ানো। ছানাটা ডানা ঝাঁপটানোর চেষ্টা করে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। মা পাখিটি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁকরিয়ে ছানাকে মুক্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু পারছে না। আবিদ লতাসহ ছানাটিকে খপ করে বাম হাতে ধরে ফেলল। মা দোয়েল ছানাকে রক্ষার্থে আবিদের হাতে ঠোঁকরাতে লাগল। আবিদ ডান হাতে মা দোয়েলটিকে ভয় দেখিয়ে দূরে সরে যেতে বাধ্য করল। মা দোয়েল পাখিটির কিচিরমিচির শব্দ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। সে আবিদের মাথার ওপর দিয়ে ঘন ঘন চক্কর দিতে লাগল। আবিদ ছানাটি নিয়ে মাটিতে নেমে এলো। কালোর ভিতর সাদা রং। তুলতুলে নরম দেহ। ফুটফুটে ছানাটিকে দারুণ লাগছে আবিদের। আবিদের সোহাগ মাখা হাতের ছোঁয়ায় অল্প কিছুক্ষণ আগে বাঁধন যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেয়ে ছানাটি গোঙানো বন্ধ করল। দুচোখ ভরা কৌতূহল নিয়ে এদিক সেদিক তাকাচ্ছে। ছানাটির নরম শরীর আর ভীরু ভীরু চোখের অদ্ভুত চাহনি দেখে আবিদের ইচ্ছে করছে আরও আদর করতে। সে মনে মনে চিন্তা করল, পাখিটিকে বাড়ি নিয়ে খাঁচায় বন্দী করে লালন-পালন করবে। এদিকে মা পাখিটি আবিদের মাথার ওপর উড়ে উড়ে গগনবিদারী কিচিরমিচির শব্দ করছে। মায়ের চিৎকার শুনে ছানাটিও কিচিরমিচির শুরু করে দিল। আবিদ এক দৃষ্টিতে ছানাটির দিকে তাকিয়ে রইল। নিশ্চয় মায়ের স্নেহ পাবার আশায় ছানাটি অসহায় কণ্ঠে চিৎকার করছে। আবিদের মনে পড়ে গেল আজ থেকে প্রায় বছরখানেক আগে সে তার মাকে হারিয়েছে।

একদিন স্কুল থেকে ফিরে সে দেখে, তার মায়ের নিথর দেহকে ঘিরে কান্নাকাটি করছে সকলে। মায়ের ভালোবাসা যে জগৎ সেরা আজ মাকে হারিয়ে সে তা বুঝতে পারছে। মা ছাড়া একজন শিশু যে কতটা অসহায়, তা সে মাকে হারিয়ে অনুভব করছে। ভাবতে ভাবতে দুফোঁটা অশ্রু তার দুগাল বেয়ে মাটিতে পড়ে গেল। সে অশ্রুসিক্ত নয়নে মা পাখিটির দিকে তাকাল। আবিদ সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এলো। ডান হাতে ছানাটির পাখনায় ধরে বাম হাতের তালুতে দোয়েল ছানাটিকে বসিয়ে ছেড়ে দিল। ছাড়া পেয়ে ছানাটি ফুরুৎ করে মা পাখির সঙ্গে উড়তে উড়তে পশ্চিম আকাশে মিলিয়ে গেল। আবিদ ছলছল নয়নে পরমানন্দে তাকিয়ে রইল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর