শুক্রবার, ১০ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ফুলপরীর দেশে

রুমান হাফিজ

ফুলপরীর দেশে

ফারিনের বাগানে রংবেরঙের অনেক ফুল ফুটেছে। বাগানজুড়ে মনমাতানো সুভাষ। ফারিন অবাক বিস্ময়ে আরও লক্ষ্য করে যে, বাগানের প্রায় প্রতিটি ফুলেই প্রজাপতি বসা। এক ফুল থেকে অন্য ফুলে উড়াউড়ি করছে। এসব প্রজাপতির গায়ের রং একটি থেকে অন্যটি আলাদা আলাদা। তা দেখে ফারিনের ভীষণ ভালো লাগে।

লোভ সামলাতে না পেরে ফারিন এগিয়ে যায়, একটা প্রজাপতির গায়ে হাত দিতেই সে দেখতে পায় প্রজাপতিটা আর প্রজাপতি থাকেনি! একি! একদম পরীর রূপ ধারণ করেছে। হাতে জাদুর কাঠি, পিঠে ডানা, গায়ে জড়ানো জাঁকজমকপূর্ণ পোশাক। নিজের করা বাগানে পরী দেখতে পেয়ে ফারিন তো রীতিমতো অবাক! এতদিন শুধু পরীদের গল্পই শুনেছে, আর আজ নিজের চোখে দেখছে, তাও আবার একদম কাছে থেকে! ফারিন তো বিশ্বাসই করতে পারছিল না। আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেল ফারিন, তার মনের ভিতর কোনোরকম ভয় কাজ করছে না। একদম স্বাভাবিকভাবেই সে পরীর আরেকটু কাছে এসে বলল-

-‘তুমি আমার বাগানে আসায় আমি খুব খুশি হয়েছি।’

-‘ধন্যবাদ ফারিন! তোমার বাগানটি আমাদের পরীরাজ্যের সবার কাছে অনেক ভালো লেগেছে।’

-‘তুমি আমার নাম জানলে কীভাবে?’

-‘আমি তোমার সবকিছুই জানি। আচ্ছা, তুমি কি আমাদের দেশে যাবে? তোমাকে নিয়ে গেলে আমাদের রানী অনেক খুশি হবেন। যাবে আমাদের রাজ্যে...?

-‘হ্যাঁ, অবশ্যই যাব। তবে আমাকে আবার এখানে নিয়ে আসতে হবে।’

-‘ঠিক আছে, এ নিয়ে তুমি কোনো চিন্তা কর না। তুমি এবার চোখ বন্ধ কর...!’

পরীর কথামতো ফারিন তার চোখ দুটো বন্ধ করে। তারপর চোখ খুলে সে তো অবাক! বাহ! বেশ চমৎকার তো তোমাদের পরীরাজ্য! অমন সুন্দর সুন্দর সব গাছপালা, ফুল-ফলের বাগান, চারদিকে কি মনোরম দৃশ্য, সবমিলিয়ে তার মনে হচ্ছে যেন সে স্বপ্নময়ী কোনো দেশে পা রেখেছে। আসলেই তো তাই!

হঠাত্ পরীর ডাক শুনে ফারিনের সম্বিত্ ফিরে।

-‘চল এখন তোমাকে আমাদের রানীর কাছে নিয়ে যাব।’

পরীরাজ্যের রানীর প্রাসাদে গিয়ে ফারিন তো আরও অবাক হয়। হরেক রঙের কারুকার্যখচিত বিশাল অট্টালিকা। সুন্দর সব আসবাবপত্র, মৌ মৌ ঘ্রাণে নিজেকে হারিয়ে ফেলে ফারিন। তখনই রানীর কথায় সে ফিরে তাকায়-

-‘প্রিয় ছোট্ট বন্ধু,বাড়ির আঙিনায় তুমি যে বাগানটি করেছ তার জন্য তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। জানো তো পূর্বকার যুগে তোমাদের পৃথিবী কতই না সুন্দর ছিল। স্বর্গীয় শান্তিতে ভরপুর ছিল পুরো পৃথিবী। কিন্তু এখনকার সময়ে মানুষজন যে হারে গাছপালা কাটছে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করছে, ফলে তোমাদের পৃথিবী দিন দিন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার দরুন পরবর্তীতে এই পৃথিবীতে বসবাস করা তোমাদের জন্য দুর্বিষহ হয়ে পড়বে। তাই আমি তোমাকে একটা পরামর্শ দিতে চাই, তুমি তোমার এ বাগানটিকে যত্ন করে রাখবে এবং তোমার আশপাশের মানুষদের গাছপালা কাটতে নিষেধ করবে এবং বেশি করে গাছ রোপণ করতে উৎসাহিত করবে। কি পারবে না? ফারিন সঙ্গে সঙ্গে সম্মতি দেয়। আর তোমার বাগানে ওই প্রজাপতিগুলোই হচ্ছে আমাদের রাজ্যের পরী। তুমি তাদের হত্যা কর না, কেমন।

-‘জ্বী আচ্ছা, ঠিক আছে মহামান্য রানী।’

-‘ধন্যবাদ আমাদের ছোট্ট বন্ধু ফারিন।’

তারপর ফারিন পরীদের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে তাদের রাজ্যের সব দেখতে লাগল, মজাদার অনেক ফলও ভক্ষণ করে। যতই দেখে ততই তার ভালো লাগে। পরীরাজ্যে পাহাড়, ঝরনা, গাছপালা, অট্টালিকা সবই তাকে আকর্ষিত করে ভীষণভাবে। ফারিন তখন মনে মনে ভাবছে ‘যদি এই রাজ্যে আমি চিরদিন থাকতে পারতাম, কতই না মজা হতো’! তখনই তার বাড়ির কথা মনে পড়ে, সে তো আম্মু আব্বু ছাড়া কোত্থাও থাকতে পারবে না, তাহলে...?

এবার বিদায়ের পালা। ফারিন একে একে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেই পরীটির সঙ্গে তার বাগানে ফিরে আসে। বাগানে তখনো অনেক প্রজাপতি উড়াউড়ি করছিল। অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রয় সেদিকে। ফারিনের বারবার মনে পড়ছে পরীদের রাজ্যের কথা...

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর