শুক্রবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

এক যে ছিল ইঁদুর ছানা

পল চয়ে
ভাষান্তর : আল ফাতাহ মামুন

এক যে ছিল ইঁদুর ছানা

এক দেশে এক ইঁদুর ছিল। ঠিক ইঁদুর নয়। ছোট্ট ইঁদুর। একটি গাছের নিচে ছোট্ট একটি গর্ত। এ গর্তেই ইঁদুর ছানার জন্ম। শৈশবের দিনগুলো হেসে-খেলে নেচে-গেয়ে এ গর্তেই কাটিয়ে দেয় সে।

একদিন হঠাৎ ইঁদুর ছানার মনে প্রশ্ন জাগে, আমি কে? আমি কী? কেন আমি এ পৃথিবীতে এসেছি? এই ছোট্ট গর্তে ধুঁকে ধুঁকে মরার জন্যই কী আমার জন্ম হয়েছে? না না... এভাবে তো জীবন চলে না। আমাকে বড় হতে হবে। বড়দের সঙ্গে মিশতে হবে। ঘুরে দেখতে হবে বিশাল এই পৃথিবী।

যেই ভাবা সেই কাজ। সঙ্গে সঙ্গে একটি ছোট্ট ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রওনা হয়েছে পৃথিবী ভ্রমণে। মিশন বড় হওয়া।

এর আগে কখনো গর্ত থেকে বেরোয়নি ইঁদুর ছানা। এই প্রথম খোলা আকাশের নিচে বুকভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার পর মনে হলো—বাহ! পৃথিবী তো দারুণ সুন্দর। ইশ! কেন যে আরও আগে বেরোলাম না। তাহলে আগে পৃথিবীর সৌন্দর্য দেখতে পেতাম।

সকাল থেকে সন্ধ্যা। সন্ধ্যা থেকে আবার সকাল। টুক টুক করে হেঁটে চলছে ইঁদুর ছানা। দুই দিন বিরতিহীন হাঁটার পর একটি চিড়িয়াখানার সামনে এসে থামল ইঁদুরছানা। সুড়ুৎ করে চিড়িয়াখানার বাগানে ঢুকে পড়ল। কাঁধ থেকে ব্যাগ নামিয়ে হালকা নাশতা সেরে নেয়। এবার শুরু হলো মিশন।

এ বাবা! এত বড় চিড়িয়াখানা? ইয়া বড় বড় পশু-পাখি। আমি তো ওদের মতোই হতে চাই। ওই যে দাড়িওয়ালা পশুটি, কেমন গোঁ গোঁ করছে; তার কাছেই যাই।

হ্যালো মিস্টার...

হ্যালো, আই এম লায়ন। দ্য কিং অব ফরেস্ট। ইঁদুর ছানা একটু ভয় পেয়ে মনে মনে বলে, যা বাব্বাহ! প্রথমেই রাজা মশায়ের সামনে এসে পড়লাম! তাতে কী? আমি তো বড় হতে চাই। না হয় রাজা মশায়ের মতোই বড় হলাম।

মহারাজা! আমার একটা ইচ্ছা আছে। 

কী ইচ্ছে বলো বৎস।

দূর থেকে দেখছিলাম কী গর্জনই না আপনি দিয়েছেন। ভয়ে আপনার আশে পাশেও ভিড়তে সাহস পায় না কেউ।

হ্যাঁ! তুমি ঠিকই দেখেছ। বনে থাকার সময় আমার গর্জন শুনে থর থর করে কাঁপেনি এমন একটি প্রাণীও খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আমি আপনার মতো বড় হতে চাই। গোঁ গোঁ করে গর্জন করে কাঁপন ধরিয়ে দিতে চাই সবার মনে। এক দমে বলে ফেলে ছোট্ট ইঁদুর। 

হা হা হা। হো হো হো। তুমি আমার মতো বড় হতে চাও। আমার মতো আকাশ ফাটানো গর্জন তুলতে চাও? তোমার গলা থেকে তো চি চি ছাড়া কোনো আওয়াজই বেরোয় না। আর আমার মতো চেহারা ও মাসল বডি কোথায় পাবে বৎস? তুমি পাগল হয়ে গেছ? জানে বাঁচতে চাইলে এখনই পালাও। নয়তো জলখাবারটা তোমাকে দিয়েই সারব। এবার সত্যি ভয় পেয়ে যায় ইঁদুর ছানা। কোনো মতে পালিয়ে বাঁচে। ছোট্ট ইঁদুর শুনতে পায়, সিংহ রাজা এখনো হাসছে। নিজেকে নিজেই শাসাল। বলল, কী বোকামিটাই না করে ফেললাম। সিংহের মতো বড় হতে চেয়েছি। এটা কী সম্ভব? কোথায় রাজামশায় আর কোথায় আমি। ঘুরতে ঘুরতে চলে এলো জিরাফের কাছে। ইয়া লম্বা গলা। যেন গলা দিয়েই আকাশ ছুঁয়ে ফেলবে। হ্যাঁ! আমি জিরাফের মতো বড় হতে চাই। বলল ইঁদুর ছানা।

হ্যালো জিরাফ আংকেল!

হায় ইঁদুর ছানা! কেমন আছ খোকা!

বেশ ভালো আছি। তুমি কেমন আছ আংকেল।

আমিও খুব ভালো আছি। আংকেল! তুমি আমাকে সাহায্য করতে পারবে?

কী বিষয়ে বল তো?

আমি তোমার মতো বড় হতে চাই। ইয়া লম্বা গলা দিয়ে আকাশের মেঘ ছোঁব।

ইঁদুর ছানার কথা শুনে কিছুক্ষণের জন্য থমকে যায় জিরাফ। ছোকড়াটা বলে কী? আমার মতো গলা চায়? বড় হতে চায়?

কিন্তু খোকা! তুমি তো অতি ক্ষুদ্র প্রাণী। আমার মতো বড় হবে কী করে!

এই যে দেখুন না আমার গলাটাও কত্ত বড়-বলেই যতটা সম্ভব ঘাড় থেকে টেনে গলাকে লম্বা করার চেষ্টা করল। এবার আর হাসি চেপে রাখতে পারল না জিরাফ। হো হো হো করে হেসে ফেলল। হাসি শুনেই ইঁদুর ছানা বুঝে ফেলল-এটাও সম্ভব নয়।

দারুণ কষ্ট নিয়ে পরম অপমানিত হয়ে ইঁদুর ছানা ফিরে এলো চিড়িয়াখানার বাগানে। এমন সময় চিড়িয়াখানায় ঢুকল একদল মানুষ। তারা ইয়া বড় বড় যন্ত্র দিয়ে গপাগপ করে সিংহ, জিরাফ এবং অন্য পশুগুলোকে বন্দী করে ফেলল। খাঁচায় ঢুকিয়ে বড় বড় তালা ঝুলিয়ে দিল গেটে।

ইঁদুর ছানা একজনকে জিজ্ঞেস করল, ওদের খাঁচায় পুরলে কেন?

লোকটি বলল, এখন চিড়িয়াখানা বন্ধ করে দেব। একটু পর সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হবে। রাতে পশুদের বাইরে রাখার নিয়ম নেই।

ইঁদুর ছানা দেখল, সবার চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। খাঁচায় বন্দী হয়ে খুশি নয় পশু-পাখিরা।

তাহলে আমাকেও খাঁচায় ঢোকাও- লোকটিকে বলল ইঁদুর ছানা।

আমাদের খাঁচা শুধু বড়দের জন্য। তোমার মতো ছোট প্রাণীদের জন্য নয়। বলেই লোকটি চলে গেল।

তখন ইঁদুরের কষ্ট দেখে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল সবাই। হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়া অবস্থা। অনেকক্ষণ পর ইঁদুর ছানা কাঁধে ব্যাগ ঝোলাতে ঝোলাতে বলল, শুনে রাখ! আমি ছোট বলে তোমরা সবাই হাসাহাসি করছিলে। দেখলে তো, ছোট বলেই আজ আমাকে তোমাদের মতো খাঁচায় বন্দী থাকতে হয়নি। যখন-তখন যেখানে খুশি চলে যেতে পারি। তাই আমার এই ছোট্ট দেহখানি নিয়েই আমি মহাসুখী।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর