শিরোনাম
শুক্রবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

ঝিলে ঝিলে শাপলা ফুল

বৃষ্টি রানী

ঝিলে ঝিলে শাপলা ফুল

এখন বর্ষাকাল। নদী-নালা, খাল-বিল সবখানে থৈ থৈ করে পানি আর পানি। আর পানিতে ফুটেছে পদ্ম ফুল। সাদা ও গোলাপী রঙের। কোথায়ও হাঁটু পানি, কোথায়ও অনেক পানি। গ্রামে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রায় ফুল তুলে আনে। পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রাখে। ফুলদানিতেও সাজিয়ে রাখে। রুপা ও ঝুমা      তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। ওরা দু’জনই হাঁটু পানিতে নেমে পদ্ম তোলে। একদিনও বাদ যায় না। আর এসব নিয়ে বাবা-মায়ের বড্ড শাসন। বলে, পদ্ম ফুল তুলতে নেই। ভয় দেখিয়ে বলে পদ্ম ফুলে সাপ খেলা করে। আরো বলে পদ্ম ফুলের ওপর পদ্ম পরি বসে থাকে। আরো কতভাবে ফুল তুলতে বারণ করে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। দুই বোনই বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে বার বার ফুল তুলতে যায়। কিন্তু হঠাৎ একদিন রুপা ও ঝুমা বিপদে পড়ে যায়। বাড়ির পাশের হাঁটু পানিতে নেমে সাদা ফুলের পরিবর্তে গোলাপী রঙের পদ্ম ফুল দেখতে পায়। আর সেই ফুল তুলতে গিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটু পানি থেকে বুক পানি অবধি চলে যেতে থাকে। কিন্তু কোনোভাবেই তাদের ফুলের নেশা কাটে না। পদ্ম ফুল হাসিল করবে বলে যেন সংকল্প করে বসে। তখন মাথার উপরে রোদ। ভর-দুপুরে পদ্ম ফুল তোলার নেশায় বুঁদ হয়ে থাকে। কিন্তু পারে না। গলা পানি পর্যন্ত চলে আসতেই পাশের বাড়ির মরিয়মের মা চিৎকার করে বলে, ও রুপার মা তাড়াতাড়ি রুপাকে বাঁচাও। রুপা পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। কথাটি শোনার পর মা বাড়ি থেকে দৌড়ে এসে রুপা ও ঝুমাকে পানি থেকে তুলে নিয়ে আসে। রুপার মা গায়ে হাত না দিয়ে বুঝিয়ে রুপাকে বলে, আচ্ছা মেয়ে তো তুমি! হাতের কাছে পদ্ম ফুল থাকতে গলা পানিতে নামলে কেন? রূপা বলে, না মা ঝুমা বলেনি। গোলাপী রঙের পদ্ম ফুল দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। তাই নিজের অজান্তেই গলা পানি অবধি নেমে পড়ি। ঝুমার মা খবর পেয়ে রুপাদের বাড়ি চলে আসে। ঝুমাকে আচ্ছামত বকাঝকা করে। বারণ করে দেয় ভবিষ্যতে যেন তারা ভুলেও পদ্ম ফুল তুলতে না যায়। এরপর থেকে তারা বাবা-মায়ের কথার অবাধ্য হয়নি। দু’জনে প্রতিদিন হাত ধরাধরি করে ¯কুলে যায়। আবার ¯কুল শেষে বাড়ি ফিরে আসে। কিন্তু পদ্ম ফুলের প্রতি তাদের আকর্ষণ কমেনি। স্কুল থেকে ফেরার পথে দুজনার চোখে পরে সাদা সাদা পদ্ম ফুল। একদিন তারা সিদ্ধান্ত নেয় পদ্ম ফুল তুলতে যাবে। কিন্তু দুজনার গায়ে ¯কুলের পোশাক থাকায় পানিতে নামতে ভয় পায়। স্কুলের ড্রেস ভেজা পেলে মা বকাঝকা করবে। দু’জন অনেক সময় পর্যন্ত ঝিলের ধারে দাড়িয়ে থাকে। কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। হঠাৎ তারা দেখলো ঝিলে বর্শি নিয়ে অনেকে মাছ ধরতে আসে। রুপা ও ঝুমাদের বাড়ির পাশের কালাচাঁদ মিয়াও সেদিন বর্শি নিয়ে মাছ ধরতে আসে। তারা কালাচাঁদ মিয়াকে শাপলা ফুলটা তুলে আনতে বায়রা ধরে। কালাচাঁদ মিয়াও সংকোচবোধ না করে পানি থেকে অনেকগুলো শাপলা ফুল তুলে এনে দু’জনার হাতে তুলে দেয়। রুপা ও ঝুমা শাপলা ফুলগুলো পেয়ে তো মহা খুশি। ফুল পেয়ে দু’জনেই নাচতে নাচতে বাড়ি ফিরে আসে। বাড়িতে ফিরেই রুপা ও ঝুমা দুজনই শাপলা ফুল দিয়ে তাদের ঘর-দোর সাজায়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর