শুক্রবার, ৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

লোভী শিয়াল

মাহমুদুল হক

লোভী শিয়াল

এক দেশে ছিল এক গভীর বন। সেই বনে ছিল হরেক রকম গাছপালা। নাম জানা-অজানা ফুলের বাগান। জলে টলটলে ডোবা-নালা। ঝোপঝাড়ে ভরা আঁকা-বাঁকা গেরুয়া পথ। সেই বনে ছিল সিংহ, বাঘ, হাতি, বাঁদর, হরিণ, খরগোশ, টিয়া, ময়না, শালিক, বুনোমহিষ, বনমোরগ, বনহাঁস, শিয়ালসহ নানা প্রজাতির পশুপাখি।

তাদের মধ্যে শিয়াল সাধারণত একটু চালাক হয়। কিন্তু এই বনের ভিতরে এমন একটি শিয়াল ছিল, যে চালাক চতুর তো বটেই, সঙ্গে ভীষণ লোভীও। বনের সহজ-সরল, ভদ্র-নিরীহ প্রাণীগুলো শিয়ালের জন্য নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারত না। চুপিচুপি পিছু নিয়ে সুযোগ বুঝে চেপে ধরত। আড়ালে আবডালে নিয়ে গপাগপ খেয়ে ফেলত। লোভী শিয়ালে এসব কর্মকান্ডে ছোটখাটো প্রাণীরা তার প্রতি ক্ষুব্ধ হলো। বিচার দিল বনের রাজা সিংহের কাছে। সিংহ রাগান্বিত হয়ে বনের সব প্রাণীকে জড়ো হতে আদেশ করলেন। ধীরে ধীরে সব প্রাণী উপস্থিত হলো। লোভী শিয়ালটি সবার পেছনে এসে চুপিসারে বসে পড়ল। সিংহ প্রথমে সবার হালচাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেন। কোথাও কোনো অসুবিধা আছে কিনা তার খোঁজখবর নিলেন। তারপরে লোভী শিয়ালকে তলব করলেন। শিয়াল ভয়ে ভয়ে কাঁপাকাঁপা পায়ে সামনে এলো। সিংহ তাকে পূর্বঘটিত কর্মকান্ডের জন্য সবার সম্মুখে মাপ চাইতে বলল। ধূর্ত শিয়াল বনের রাজার সামনে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে কিছু সময়ে দাঁড়িয়ে থাকল। কোনো উপায়ান্তর না পেয়ে সবার সামনের মাখা নত করে মা চাইল। লোভী শিয়াল এতে ভীষণ অপমান বোধ করলেন। কিন্তু তা প্রকাশ করল না সব প্রাণীর সামনে। ধীরে ধীরে কৌশল করে রাজার আস্থাভাজন হওয়ার কসরত করতে থাকে। সামনাসামনি ভক্তি শ্রদ্ধা আরও বাড়িয়ে দেয়। ক্রমে ক্রমে সে রাজার নৈকট্যও লাভ করে। রাজা তার থেকে বিভিন্ন বিষয় পরামর্শ নেয়। জানতে চায় কোনটা কীভাবে করলে সফল হবে ইত্যাদি। লোভী শিয়াল তখন এই সুযোগে রাজার প্রতি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে যায়। সবার সামনে তাকে অপমান করার বদলা নিতে যারপরনাই লেগে যায়। মনে মনে ফন্দি আঁটতে থাকে। এক দিন খুব গোমড়া মুখ করে রাজার কাছে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলল, সালাম মহারাজ! যদি অভয় দেন তো একটা কথা বলার ছিল। রাজা গম্ভীর মুখ করে জিজ্ঞেস করলেন কী? শিয়াল কাঁচুমাচু হয়ে বলল, যদি সাহস দেন তাহলে বলি। রাজা নাক ছিটকে বলে, এত ভণিতা করিস না তো। বলে ফেল। শিয়াল তখন ইনিয়ে-বিনিয়ে

বলল, বনে শক্তিশালী এক অচেনা সিংহের আবির্ভাব ঘটেছে। যে নিজেকে বনের রাজা দাবি করে সবার কাছে বলে বেড়াচ্ছে। আমি তাকে আপনার কথা বললে, সে নাক কুঁচকে; বিশ্রী একটা গাল দিয়ে বলল, আরে ধ্যাৎ! ওই বুড়োটাকে তো আমি লাথি মেরে উড়িয়ে দেব। ক্রোধান্ধ রাজা সিংহ বলল, এক্ষুনি তার কাছে আমাকে নিয়ে চল। লোভী শিয়াল তখন তাকে বনের শেষ প্রান্তে একটি গভীর কুয়োর কাছে নিয়ে চলল। ইশারা করে কুয়ো দেখিয়ে বলল, এটাতে আছে সেই প্রতিদ্বন্দ্বী সিংহটা। রাজা সিংহ দৌড়ে কুয়োর কাছে গিয়ে দেখল, পুঁচকে শিয়াল ঠিকই বলেছে। রক্তচক্ষু করা মেজাজে রাগী রাগী মুখ করে এদিকে তাকিয়ে আছে। রাগে-ক্রোধে অন্ধ রাজা কুয়োর স্বচ্ছ জলে তার প্রতিচ্ছবিকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভেবে গরগর গর্জন ছুঁড়তে থাকল। কে তুই? কুয়োর ভিতর থেকেও প্রতিধ্বনি ফিরে এলো? কে তুই? রাজা সিংহ তখন আরও ক্ষেপে গেল। সে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে উঠল এবং অবাক বিস্ময়ে দেখল কুয়োর ভিতরের সিংহটাও তাকে অনুরূপ ভেংচি কাটছে। রাজা সিংহ এতই ক্ষেপে গেল যে, তার ঘাড়ের কেশর শক্ত, খাড়া হয়ে উঠল। রাগে-ক্রোধে আর অপমানে অন্ধ রাজা সামনের দুই পায়ের থাবা উঁচিয়ে কুয়োর ভিতরের প্রতিদ্বন্দ্বীকে আক্রমণ করার জন্য শূন্যে ঝাঁপ দিল। আর ফলাফলটা কী হলো বুঝতেই পারছ? কুয়োর গভীর জলে সিংহ ডুবে গেল। লোভী শিয়াল এই দৃশ্য উপভোগ করে বিজয়ের হাসি হাসতে হাসতে বনের গহিনে ফিরে এলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর