- মামণি ওঠো। ওঠো মামণি। বাবার ডাকে ঘুম ঘুম চোখে তাকায় হৃদি।
- আরেকটু ঘুমাই বাবা! বলে পাশ ফিরে শোয়।
- ‘ঈদ মোবারক’ হৃদির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে বাবা।একলাফে বিছানায় উঠে বসে হৃদি।
- তাই তো! আজ তো ঈদ! কি মজা!
চোখে খুশি। আমার তো মনেই ছিল না! হৃদি বাবার গলা জড়িয়ে বিছানা ছাড়ে।
সকাল মাত্র চোখ মেলতে শুরু করেছে। অনেক পাখি ডাকছে কিচিরমিচির করে। একসঙ্গে এতো পাখির ডাক আগে কখনো শোনেনি হৃদি। গিয়ে দাঁড়ায় জানলার পাশে। চোখের সামনে দিয়ে উড়ে গেল সবুজ টিয়ে!
- বাবা! দেখ, দেখ টিয়ে পাখি! ও-ই তো হলুদ ফুলের গাছে গিয়ে বসল! ওরা সবাই ওখানে কী করছে? আজ কী পাখিদেরও ঈদ?
-হ্যাঁ মা। আজ পাখিদেরও ঈদ। বাবার মুখেও হৃদির মতো খুশি।
বাবার কথায় কুটকুট করে হেসে ওঠে হৃদি।
-বাবানিটা কী যে বলে! পাখিদের নাকি ঈদ হয়! হিহিহি!
-কী নিয়ে এতো হাসাহাসি হচ্ছে বাবা-মেয়ের?
-মা, বাবা বলছে আজ পাখিদেরও ঈদ! হিহিহি! বাবার কথায় খুব মজা পেয়েছে হৃদি।
-আজ সব্বার ঈদ। চলো, চলো। ফ্রেশ হয়ে নতুন জামা পরতে হবে না?
-মা, আজ কোথায় কোথায় বেড়াতে যাব?
- বাইরে তো যাওয়া যাবেনা মা! নাস্তা করে আমরা গল্প করব। টিভি দেখব। আর--হুম, পাখিদের ঈদ দেখব।
মায়ের কথায় মন খারাপ হয়ে যায় হৃদির। নতুন জামা পরে ঈদে ঘুরতে পারবে না। চোখ টলমল করে জলে। কান্না গলায় বলে,
-মামার বাসা, খালা মণির বাসা কোত্থাও যাব না?
-আমরা সব্বার বাসায় যাব। মায়ের কথায় আশ্চর্য হৃদি। এই বললো আজ বাইরে যাওয়া যাবে না। আবার এই বলছে সবার বাসায় যাবে। মাম্মাটা যে কী বলে! মনে মনে ভাবে হৃদি।
গোসল সেরে গোলাপি রঙের ফেন্সি ফ্রকটি পরে। জামাটি যেদিন কেনা হয়েছিল দেখে হৃদির সে কি আনন্দ! কিন্তু আজ পরেও মন খারাপ। টেবিল ভর্তি সেমাই, পায়েস, পুডিং আরও কত কি। কিন্তু কিছুই খেতে ইচ্ছে করেনা হৃদির। মায়ের জোরাজুরিতে এক টুকরো পুডিং খেয়ে আবার এসে দাঁড়ায় জানালার পাশে। ইস! যদি পাখি হতাম! ওদের মতো উড়ে উড়ে সবার বাসায় চলে যেতে পারতাম!
- ঈদ মোবারক হৃদি! খালা মণি! চমকে ফিরে দেখে বাবার মোবাইলে খালামণির মুখ। দৌড়ে এসে বাবার কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে নেয়। পাপ্পু ভাইয়া, প্রমি আপু, খালুমণি! ও মা! নানাভাই নানুমণি, দাদু দিদা, চাচ্চু, ফুপ্পি সবাই! কী মজা! খুশিতে হৃদির মুখটা জ্বলজ্বল করছে।
-তোমরাও কোথাও বেড়াতে যাওনি?
-আমরাও সবাই ঘরে দাদুভাই। পৃথিবীর অসুখ সেরে গেলে আমরা সবাই আবার একসঙ্গে ঈদ করব।
-হি হি হি পৃথিবী আবার অসুখ করে নাকি! দাদাভাইয়ের কথায় হেসে লুটোপুটি হৃদি।
-হ্যাঁ মা। মানুষের মতো পৃথিবীরও অসুখ হয়। তাইতো সব মানুষকে বলল, তোমরা ঘরে থাক। বাইরে এলে আমার মতো অসুখ করবে তোমাদেরও। পাশ থেকে বাবা বলে।
-ও আচ্ছা! এবার বুঝেছি কেউ ঈদে বেড়াতে কেন যায়নি।
-এটা হলো ফোন ঈদ। নানাভাইয়ের কথায় হো হো করে হেসে ওঠে সবাই। -বলেছি না সবার বাসায় যাব? মা হৃদিকে জড়িয়ে ধরে বলে।
হৃদির খুব মজা লাগে ফোনে সবাইকে দেখতে। রিং বাজলেই দৌড়ে সে-ই রিসিভ করছে। ঘরে বসেই দারুণ মজা ঈদে! আর মন খারাপ নেই। কিছুক্ষণ ফোনে গল্প করে তো কিছুক্ষণ গিয়ে দেখে পাখিরা কি মজা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কাকের কা কা, চড়ুইয়ের কিচিরমিচির ডাকের মধ্যে হঠাৎ শোনা যায় কুন্ডউ-উ, কুন্ডউ-উ ডাক।
-কী পাখি ডাকে এটা বাবা?
-কোকিল ডাকে মা।
-আমি দেখব। বলে ছুটে যায় ব্যালকনিতে। মনে হচ্ছে যেন বাসার সঙ্গে লাগানো কৃষ্ণচূড়া গাছে বসে ডাকছে। হৃদি অনেক চেষ্টা করেও দেখতে পেল না। নিজেই কোকিলের সঙ্গে ডাকতে লাগল- কুন্ডউ-উ, কুন্ডউ-উ!
রাস্তায় এক দু’জন মানুষ, খুব হঠাৎ একটা দুটো গাড়ি ছাড়া কিছুই নেই।
-এই ঈদটা কেমন ঈদ বাবা? কেউ বেড়াতে যাচ্ছে না!
-এই ঈদের নাম আমরা দেব সবুজ ঈদ কেমন? দেখ সামনের গাছগুলো খুশিতে কেমন দুলছে বাতাসের সঙ্গে। পাখিরা কী আনন্দে ঘুরছে, ফিরছে তাই না?
বাবার কথা শুনে হৃদির চোখে ঝিলিক খেলে যায়। ঘরে এসে তার ড্রয়িং খাতা, কালার বক্স নিয়ে বসে।
বাহ! অপূর্ব! বাবা মুগ্ধ হয়ে দেখছে হৃদির আঁকা ছবি। এই ছবিতে হৃদি এঁকেছে, বাবার সঙ্গে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সে নিজেও। দেখছে গাছের নিচে ছোট্ট ছোট্ট টেবিল, চেয়ার। পাখিরা ওই চেয়ারে বসে খাচ্ছে সেমাই, পায়েস, পুডিং! টিয়ে উড়ে যাচ্ছে ওদের সঙ্গে যোগ দিতে। সূর্য হাসছে তাদের আনন্দ দেখে!
বাবা, মা'কে ডাক দেয়।
-দেখ কী সুন্দর ছবি এঁকেছে হৃদি! এসো দেখে যাও।
ছবি দেখে মা ফোনে ভিডিও কলে সবাইকে দেখায় ছবিটা। সবাই মুগ্ধ! দাদাভাই বললেন ছবিটির একটা নাম দেওয়া যাক। সবাই দাদাভাইয়ের কথায় রাজি।
দাদাভাই বললেন, ঈদ মানে তো খুশি। গাছ না থাকলে পাখিরা কি এত মজার ঈদ করতে পারত? তাই এই ছবির নাম ‘সবুজ খুশির দিনে’।
সবাই বললো, খুব সুন্দর নাম। ঈদের দিনে হৃদি আমাদের উপহার দিল সবুজ খুশির দিন।