শুক্রবার, ১৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বন্দী প্রিয়া মুক্ত টিয়া

রণজিৎ সরকার

করোনায় বন্দী প্রিয়া মুক্ত টিয়া

বাসায় বন্দী প্রিয়া। খাঁচায় বন্দী টিয়া। টিয়ার সঙ্গে কথা বলার জন্য খাঁচায় কাছে গেল প্রিয়া। প্রিয়া কিছু বলার আগেই টিয়া বলল, ‘আচ্ছা, তুমি স্কুলে যাচ্ছ না কেন?’

প্রিয়া বলল, ‘করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল ছুটি। ঘরের বাইরে যাওয়া মানা। ঘরে থাকতে হবে। নিরাপদে থাকতে হবে। অন্যকে নিরাপদে রাখতে হবে।’

টিয়া মাথা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘এবার বুঝতে পারলাম। তুমি কেন স্কুলে যাচ্ছ না। তার মানে তুমি ঘরবন্দী। আমি খাঁচায় বন্দী। আমরা দুজনই বন্দী।’

প্রিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলল, ‘ও তাই তো। সবাই এখন ঘরবন্দী। বন্দী থাকতে আমার আর ভালো লাগছে না। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হচ্ছে না। বাসায় পড়ালেখায় মনোযোগ বসে না।’

টিয়া খাঁচায় ঠোঁট নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘তুমি তো মাত্র কয়েক দিন হলো বন্দী আছ। আর আমাকে যে দেড় বছর ধরে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছ। খাঁচায় বন্দী থাকতে ভালো লাগে না।’

টিয়ার কথা শুনে অবাক হলো প্রিয়া। প্রিয়া ভাবতে লাগল- সত্যি তো তাই! কয়েক দিন বন্দী থেকে আমার কি যে খারাপ লাগছে। আর টিয়াকে দেড় বছর ধরে বন্দী করে রেখেছি। নিজেকে অপরাধী মনে করে প্রিয়া ধীরে ধীরে বলল, ‘তুমি কোথাও যেতে চাও।’

টিয়া বলল, ‘করোনায় যারা তোমার মতো বন্দী। তাদের বাসায় গিয়ে মজার মজার গল্প বলব। বন্দী দিনগুলো আনন্দ দিতে চাই।’

প্রিয়া বলল, ‘তাই! দেখি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতে পারি কি না।’ এই বলে প্রিয়া খাঁচার কাছ থেকে সরে গেল।

প্রিয়া ভাবল- বাবা-মাকে টিয়া পাখিকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে বকা দিবেন। কিন্তু পরশু আমার জন্মদিন। জন্মদিনের দিন বাবা-মায়ের কাছে এবার একটা দাবি করব। দাবিটা হলো টিয়াপাখিকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিতে হবে।

বাবা-মাকে বুঝিয়ে বলার পর প্রিয়ার দাবিটা তারা মেনে নিলেন। জন্মদিনের দিন সকালে টিয়াকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিল প্রিয়া। টিয়া খুশি হয়ে বলল, ‘বন্দী জীবনের কষ্ট অনুভব করার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ। আশা করি কয়েক দিন পর তোমরাও মুক্ত হবে। তুমি স্কুলে যাবে। আগের মতো বন্ধুদের সঙ্গে সব করতে পারবে।’

প্রিয়া বলল, ‘তোমাকে ছাড়া আমার খুব খারাপ লাগবে। তবুও তুমি মুক্ত থাকো।’

টিয়া পাখা নাড়াতে নাড়াতে বলল, ‘তুমি চিন্তা করে না। আমি তোমার সঙ্গে আছি।’

বাই বাই বলে টিয়াপাখি মুক্তির আনন্দে উড়তে লাগল। প্রিয়া মন খারাপ করে তাকিয়ে রইল...।

কয়েক ঘণ্টা পর টিয়া পাখি প্রিয়ার বাসায় এসে হাজির। প্রিয়া তো অবাক।

প্রিয়া বলল, ‘তুমি! ফিরে এলে!’

টিয়া বলল, ‘কয়েকটা বাসায় গিয়েছিলাম। বাচ্চাদের সঙ্গে মজাও করেছি। কিন্তু সবাই আমাকে খাঁচায় বন্দী করে রাখতে চায়। আমি আর বন্দী থাকতে চাই না। ভালোবাসার টানে তোমার কাছেই ফিরে এলাম।’

এবার আনন্দে প্রিয়ার চোখে পানি চলে এলো। চোখের পানি মুছতে মুছতে প্রিয়া বলল, ‘তোমাকে আর খাঁচায় বন্দী করব না। তুমি সারা বাসায় ঘুরে ঘুরে বেড়াবে।’

টিয়া আনন্দে লাফাতে লাফাতে বলল, ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ প্রিয়া।’

বাবা-মা এসেও টিয়ার কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে ‘হ্যাপি বার্থডে টু ইউ প্রিয়া’ বলতে শুরু করল।

সর্বশেষ খবর