শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

গাছটি আনাসের বন্ধু হতে চেয়েছিল

নাফে নজরুল

গাছটি আনাসের বন্ধু হতে চেয়েছিল

বৈশাখের দুপুর। ভীষণ গরম। রোদের তাপে যেন গায়ে ফোসকা পড়ে যায়। এই গরমে ঘরে বসে থাকতে কার মন চায়? সবাই কোনো না কোনো গাছের নিচে বসে সময় পার করছে। গ্রামে গরমে ক্লান্তি মেটানোর এক মাত্র জায়গা হলো গাছের ছায়া। গাছ মানুষকে আপন করে নেয়।

আনাসদের বাড়িতে অনেক গাছপালা। আনাস খুব গাছ পাগল ছেলে। তার খেলাধুলাও গাছের সাথে। গ্রামের অন্য ছেলেদের থেকে আনাস আলাদা।

গাছের প্রতি তার এমন মায়া। এই মায়ার জন্যই মা-বাবার কাছে প্রচুর বকুনি শুনে আনাস।

মাঝে মাঝে মারও খেতে হয়। তবুও ঘুরে বেড়ায় সারা দিন। গাছের সঙ্গে খেলা করে আনাস।

এমন করে একটা চারা গাছের সঙ্গে আনাসের বন্ধুত্ব হয়। গাছটি প্রথমে আনাসকে নাম ধরে ডাকে। আনাস শুনছে গাছটি তাকে ডাকছে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে না। এদিক ওদিক তাকায় আনাস। না, আশপাশে তো কেউ নেই। আনাস অবাক হয়।

চোখ বড় বড় করে বলে তুমি ডেকেছো আমায়?

চারা গাছটির উপরের পাতা দুটো ফাঁক হয়ে যায়, বলে- হ্যাঁ আমিই ডেকেছি তোমায়। তুমি তো আমাদের বন্ধু। প্রতিদিন আমাদের দেখতে আসো। আমরা পড়ে গেলে তুলে দাও। প্রতিদিন জানতে চাও, কেমন আছি। আনাস আরও অবাক হয়ে বলে- আমি তো জানি গাছ কথা বলতে পারে না। হাঁটতে পারে না। শুধু চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে।

-কে বলে আমরা কথা বলতে পারি না।

আমরা শুধু আমাদের বন্ধুদের সাথে কথা বলি।

সবাই তো আমাদের বন্ধু হয় না। বরং আমাদের কেটে ফেলে। তাই আমরা অভিমান করে থাকি, কথা বলি না। তুমি হয়তো জানো না যে আমরা হাঁটতেও পারি। আমাদের একজনের সাথে আরেকজনের প্রতিদিন দেখা হয় কথা হয়। আমাদের মা আমাদের জড়িয়ে ধরেন, আদরও করেন।

কিভাবে? জানতে চায় আনাস।

আমাদের শিকড় অনেক দূর চলে যায়। এই শিকড় দিয়েই আমরা একে অন্যের সঙ্গে দেখা করি।  আমাদের মা বাবা আমাদের আদর করার জন্য আসেন শিকড়ের কাছে।

এই যে বাগান দেখছো, বাগানের সব গাছ তোমাকে চেনে। এই বাগানের সবাই তোমাকে ভালোবাসে।

আনাস কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে। এরপর বলে সব গাছ আমার বন্ধু? সবাই আমার সঙ্গে কথা বলবে?

-না এখন সবাই তোমার সঙ্গে কথা বলবে না। সবাই এখনো তোমার বন্ধু হয়নি। তবে সবাই তোমাকে খুব ভালোবাসে। তোমার আম্মু যখন তোমায় মারে সবাই তখল হুহু করে কেঁদে উঠে।

গাছের সঙ্গে আনাসের এমন কথাবার্তা দূর থেকে শোনে ওর দাদি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। দাদি দৌড়ে এসে আনাসকে নিয়ে বাড়ির দিকে যায়, যেতে যেতে চিৎকার করে বলতে থাকে আনাসকে ভূতে ধরছে। আনাসকে ভূতে ধরছে।

দাদির চিৎকার  শুনে বাড়ির সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ে আনাসদের ঘরের সামনে। দাদি আনাসের মাকে বলে- তোমার পোলা জংলায় একলা একলা কথা কয়!

আনাসের মা আনাসকে কোলে নিয়ে জিজ্ঞেস করে তুমি কার সঙ্গে কথা কইছো আব্বু-

আনাসের সোজা উত্তর- গাছের সঙ্গে।

এই কথা শুনে  ওর মা কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। আনাসের দাদা দৌড় গিয়ে মসজিদের হুজুর নিয়ে আসে। হুজুর এসে আনাসের হাতে একটা তাবিজ বেঁধে দেয়। আর বলে যায় বাড়ির পাশের জংলা পরিষ্কার রাখতে। হুজুরের কথার পরপরই শুরু হয় বাড়ির পাশের ছোট ছোট সব গাছ কেটে ফেলার কাজ।

আনাস সবাইকে চিৎকার করে গাছ কাটতে নিষেধ করে। কেউ শুনে না আনাসের কথা। বাবা ওকে ঘরে আটকে রাখে। আনাস বন্ধ ঘরের জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে ওর গাছ বন্ধুদের কেটে ফেলার দৃশ্য। আর শোনে ওর গাছ বন্ধুদের কান্না।

ছোট চারা গাছটা বড় একটা গাছের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে আমি তো শুধু আনাসের বন্ধু হতে চেয়েছিলাম।

সর্বশেষ খবর