শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

অহংকারী পিঁপড়ে

মাহাথির মোবারক

অহংকারী পিঁপড়ে

রাস্তার পূর্ব পাশ দিয়েই সোজা চলে গেছে একটি বিল। লোকমুখে সেই বিলটি রাতায় বিল নামেই পরিচিত। সেই রাতায় বিলের পাশে একটি কদমগাছ তলায় বাসা বেঁধে বাস করত একদল পিঁপড়ে। বিলের ধারে কদমতলায় তাদের জীবন চলতে লাগল খুব সুখে আর শান্তিতে। রাতে কদমতলায় থাকে আর দিন হলে বিলের পাশে খাবার সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। একেক দিন একেক জায়গা হতে তারা নিজেদের খাবার সংগ্রহ করে নিয়ে আসত। পিঁপড়েগুলো যেখানে যায় দল বেঁধে যায়, আবার দল বেঁধেই চলে আসে। সারাদিন তারা খাবারের সংগ্রহের জন্য দল বেঁধেই এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। তারা কখনো দলবিচ্যুত হয় না। কিন্তু তাদের মাঝে একটি বড় লাল পিঁপড়ে ছিল, যার শরীর ছিল তাদের তুলনায় একটু বড়। তাই সে এই শরীর নিয়ে অহংকার করত। তাদের সঙ্গে দল বেঁধে চলতে লজ্জাবোধ করে।

সে নিজের বড় শরীর নিয়ে খুব অহংকার করে। সে কখনো খাবারের সন্ধানে বের হতো না বরং তারা যে খাবার নিয়ে আসত তা থেকেই সে জোর করে খেয়ে নিত। অন্যান্য পিঁপড়ের সংগৃহীত খাবার নষ্ট করাই ছিল তার অহংকারী স্বভাব। তাদের অনেক অত্যাচারও করত। কাউকে ভয় পেত না, কারও কথার কোনো দাম ছিল না তার কাছে। না মেনে চলত সে তাদের রাজা পিঁপড়েকে, না মেনে চলত সে অন্যান্য কোনো পিঁপড়েকে। সে নিজেকে নিয়ে গর্ব করে বলে, আমার যে শরীর আমার সঙ্গে তোরা কে পারবে আয়? আমার সঙ্গে এই রাতায় বিলের কোনো পিঁপড়েই পারবে না। তাই আমি বসে বসে খাব আর তোরা সবাই আমার সেবা করবি। সমস্ত পিঁপড়ে তাকে অনেক বুঝিয়েছে যে, শরীর বড় হলেই সব হয় না। জ্ঞান-বুদ্ধি আর বিচক্ষণতা প্রয়োজন আছে। নয়তো বিপদ পদে পদে অপেক্ষা করছে। সুতরাং আমাদের মাঝে কোনো ঝগড়াঝাঁটির দারকার নেই। এসো আমরা সবাই একসঙ্গে থাকি। একি সঙ্গে খাবার সংগ্রহ করি। তাতে তুমিও কোনো বিপদে পড়বে  না। আমাদেরও কোনো বিপদ আসবে না। কারণ কোনো প্রাণী বা জাতি দল বেঁধে চললে বা ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকলে কখনো বিপদে পতিত হয় না। একা একা চললেই অন্য প্রাণীরা তার ওপর আক্রমণ করে বসে। কিন্তু কোনো কথায় লাল পিঁপড়েটি মানতে রাজি হলো না। সে আগের মতোই নিজের বড় শরীর নিয়ে অহংকার করে বেড়ায়। আর বাসায় থেকে অন্যান্য পিঁপড়ের সংগৃহীত খাবারগুলো নষ্ট করে ফেলে। এভাবে বেশ কয়েক দিন চলার পর হঠাৎ এক দিন অহংকারী লাল পিঁপড়ে বিশাল অসুস্থ হয়ে পড়ল। দিন দিন তার শরীরের অবস্থা আরও বেশি করে অবনতি হতে লাগল। বাসায় কোনো খাবার নেই। পাশে কোনো বন্ধু নেই। মহাবিপদে পড়ে গেল সে। তার এই দুর্দিনে কোনো পিঁপড়েও তার কাছে এগিয়ে এলো না। এক দিন পেটের ক্ষুধায় সে অস্থির হয়ে অসুস্থ শরীর নিয়ে খাবার সংগ্রহে বের হলো। কিন্তু সে অসুস্থতার কারণে আর হাঁটতে পারছে না কিন্তু খাবার না খেয়ে বল কতদিন থাকবে? তাই কিছুদূর যাওয়ার পর ক্লান্ত হয়ে রাস্তায় লম্বা এক নিঃশ্বাস ছেড়ে এক বটগাছের নিচে বসে পড়ল। এমন সময় বটগাছ থেকে বড় একটি বট বীজ তার মাথায় পড়ে গেল এবং সঙ্গে সঙ্গেই তার বড় শরীরটি মাটির সঙ্গে পিষে গেল। পরদিন যখন পিঁপড়ের দলগুলো খাবার সংগ্রহ করতে ওই রাস্তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল তখন ওই অহংকারী লাল পিঁপড়েকে দেখে সবাই আফসোস করে বলতে লাগল। অহংকারীদের পরিণতি এমনই হয়। আজ যদি সে অহংকার ছেড়ে সবার সঙ্গে মিলেমিশে চলত, সবার সঙ্গে থাকত, তাহলে তাকে আজ মরতে হতো না। তার বিপদে আপদে আমরা সবাই এগিয়ে আসতাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর