শুক্রবার, ২ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

অ্যান্ড্রোকাস এবং সিংহ

মূল : জেম্স বাল্ডউইন, অনুবাদ : আকতার জামিল

অ্যান্ড্রোকাস এবং সিংহ

একদা রোমে অ্যান্ড্রোকাস নামে এক গরিব দাস ছিল। তার মণিব ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। সে অ্যান্ড্রোকাসের ওপর এতটাই নির্দয় আচরণ করত যে, শেষ পর্যন্ত অ্যান্ড্রোকাস তার কাছ থেকে পালিয়ে গেল।

পালিয়ে গিয়ে অ্যান্ড্রোকাস অনেকদিন বনের মধ্যে লুকিয়ে রইল। কিন্তু সেখানে কোনো খাবার খুঁজে না পেয়ে এতটাই দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, সে ভাবল সে মারা যাবে। একদিন হামাগুড়ি দিয়ে সে একটি গুহায় প্রবেশ করল এবং সেখানে গিয়ে শুয়ে পড়ল। এরপর দ্রুতই সে ঘুমিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ বাদে হঠাৎ ভয়ানক শব্দে তার ঘুম ভেঙে গেল। গুহার ভিতর সে একটি সিংহকে দেখতে পেল। সিংহটি জোরে জোরে গর্জন করছিল। অ্যান্ড্রোকাস খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল। সে ভেবেছিল সিংহটি নিশ্চিত তাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু শিগগিরই বুঝতে পারল সিংহটি রাগ করেনি। বরং সে খোঁড়াচ্ছিল যেন সে তার পা দিয়ে তাকে ব্যথা দিয়েছে।

এরপর অ্যান্ড্রোকাস সাহস নিয়ে সিংহের পায়ে কি হয়েছে তা দেখার জন্য খোঁড়া পাটি ধরে দেখতে লাগল। সিংহটি স্থির হয়ে অ্যান্ড্রোকাসের কাঁধে মাথা ঘষতে লাগল। যেন সিংহটি বলছে-‘আমি জানি তুমি আমাকে সাহায্য করবে।’

অ্যান্ড্রোকাস দেখতে পেল সিংহের পায়ে একটা বড় ধারালো কাঁটা বিঁধে আছে। সে কাঁটাটি আঙ্গুল দিয়ে ধরে জোরে দ্রুত টান দিল এবং কাঁটাটি বেরিয়ে এলো। সিংহ আনন্দে নেচে উঠল। কুকুরের ন্যায় লাফিয়ে সে তার নতুন বন্ধু অ্যান্ড্রোকাসের হাত-পা চাটতে লাগল।

এরপর থেকে অ্যান্ড্রোকাস আর সিংহকে ভয় পেত না। রাত হলে সে আর সিংহ পাশাপাশি শুয়ে থাকত।

সিংহটি প্রতিদিন অ্যান্ড্রোকাসের জন্য খাবার নিয়ে আসত।

দুজনের মধ্যে এমন ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেল যে, অ্যান্ড্রোকাসের কাছে তার এই নতুন জীবনটা অত্যন্ত সুখের মনে হতো।

একদিন কিছু সৈন্য বনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় গুহার ভিতর অ্যান্ড্রোকাসকে দেখতে পেল। তারা অ্যান্ড্রোকাসকে চিনত। ফলে তাকে আবার তারা রোমে নিয়ে গেল।

তখনকার দিনে আইন ছিল কোনো দাস তার মণিবের কাছ থেকে পালিয়ে গেলে একটি ক্ষুধার্ত সিংহের সঙ্গে তাকে লড়াইয়ে জিততে হবে। সে মোতাবেক একটি হিংস্র সিংহকে কিছু না খাইয়ে খাঁচায় বন্দী করে রাখা হলো এবং লড়াইয়ের জন্য দিন নির্ধারণ করা হলো। 

লড়াইয়ের দিন হাজার হাজার মানুষ খেলা দেখতে ভিড় করল। এখনকার দিনে লোকেরা সার্কাস শো বা বেসবলের খেলা দেখতে যেমন ভিড় করে তেমনি সে সময় লোকজন সিংহের লড়াই দেখতে এ জায়গাগুলোতে ভিড় করত।

খাঁচার দরজাটি খোলা হলো এবং বেচারা অ্যান্ড্রোকাসকে আনা হলো। সে ভয়ে প্রায় মরেই গিয়েছিল। কারণ ইতিমধ্যে সিংহের গর্জন সে শুনতে পেয়েছিল।

সে চারদিকে তাকাল। কিন্তু তার চারপাশে লড়াই দেখতে আসা হাজার হাজার মানুষের মুখের মধ্যে সে কোনো দয়ামায়া দেখতে পেল না।

এরপর ক্ষুধার্ত সিংহটি ছুটে এলো। এক লাফে সে অ্যান্ড্রোকাসের কাছে পৌঁছে গেল। অ্যান্ড্রোকাস চিৎকার করে উঠল। ভয়ে নয়, আনন্দে। এটি ছিল তার পুরনো বন্ধু। গুহার সিংহটি।

দর্শকরা যারা ভেবেছিল অ্যান্ড্রোকাস সিংহের হাতে মারা যাবে তারা অবাক হয়ে গেল। তারা দেখতে পেল অ্যান্ড্রোকাসের হাত সিংহের গলায়। আর সিংহটি অ্যান্ড্রোকাসের পায়ের পাতার ওপর শুয়ে তার পা দুটি মমতাভরে চাটছে। তারা দেখতে পেল সিংহটি মাথা দিয়ে অ্যান্ড্রোকাসের মুখ ঘষছে যেন সে আলিঙ্গন করতে চায়। এসবের অর্থ তারা বুঝতে পারছিল না।

কিছুক্ষণ পরে লোকজন অ্যান্ড্রোকাসের কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইল। অ্যান্ড্রোকাস উঠে দাঁড়াল এবং সিংহের ঘাড়ে হাত রেখে জানাল কীভাবে সে এবং সিংহটি গুহায় একসঙ্গে বাস করেছিল।

‘আমি একজন মানুষ, কিন্তু কেউ কখনো আমার সঙ্গে বন্ধুত্ব করেনি। এই বেচারা সিংহটিই কেবল আমার প্রতি সদয় হয়েছে; এবং আমরা একে অপরকে ভাই হিসাবে ভালোবাসি’, অ্যান্ড্রোকাস বলল।

লোকজন এতটা খারাপ ছিল না যে ঘটনাটি শোনার পর তারা এখন দরিদ্র দাসের প্রতি আর নিষ্ঠুর হবে। তারা চিৎকার করে বলতে লাগল ‘বেঁচে থাকো এবং মুক্ত থাকো’; ‘বেঁচে থাকো এবং মুক্ত থাকো!’

কেউ কেউ চিৎকার করে বলল, ‘সিংহকেও ছেড়ে দাও! উভয়কেই মুক্ত করে দাও!’

ফলে অ্যান্ড্রোকাসকে মুক্তি দিয়ে সিংহটিকেও তাকে দিয়ে দেওয়া হলো এবং তারা বেশ কয়েক বছর ধরে রোমে একসঙ্গে ছিল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর