শুক্রবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২১ ০০:০০ টা

হাসুর বন্ধু ফুল-মৌমাছি

বাসু দেব নাথ

হাসুর বন্ধু ফুল-মৌমাছি

একদা এক বাগানে হরেকরকম ফুলের গাছ ছিল। প্রতিদিন রংবেরং-এর ফুলে হাসতো পুরো বাগান। প্রতিদিনই মৌমাছিরা আসতো ফুলে ফুলে উড়োউড়ি করতো। গল্প করতো ফুলদের সঙ্গে এবং সন্ধ্যা হলেই ফিরে যেত পাশের তেঁতুল গাছের মৌচাকে। বাগানের পাশেই ছিল মালি হাসুর ঘর। সে সবসময় হাসিমুখে থাকতো তাই সবাই তাকে হাসু বলে ডাকে। সে ফুলের বাগানটিকে অনেক যত্ন করে দেখাশুনো করতো। ফুলগুলোকে অনেক ভালোবাসতো হাসু। সে বাগানে বসে বসে পরিষ্কার, পরিচ্ছন্ন করতো এবং ফুলদের গান শুনাতো। সকাল-বিকাল তাদের শিকড়ে জল দিত। কোনো ঢাল ভাঙতে গেলে সে ঢালটিকে অতি স্বযত্নে কোনো না কোনোভাবে ভালো করে তুলতো। বাগান এবং ফুলের যত্নে তার কোনো ত্রুটি ছিল না।

হঠাৎ হাসু একদিন অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিন্তু সে তার বাগানটি ফেলে রেখে কোথাও যেতে চায় না। তার অসুস্থতা বেড়ে গেলে তার পরিবার তাকে বাধ্য করে নগরে চিকিৎসার জন্য যেতে। সে বাগানের কথা ভেবে তার আপন বড় ভাইয়ের ছেলে মেহেদিকে বাগানের দায়িত্ব দিয়ে যায়। মেহেদি ছিল একটু অন্যরকম।

পরদিন সকালে মেহেদি বাগানে যায় ফুলের গাছে জল দিতে। আজ হঠাৎ তাকে দেখে ফুল গাছগুলোও একটু হকচকিয়ে উঠেছিল। একটু পরেই মৌমাছিরা বাগানে আসতে শুরু করলো। তবে মৌমাছিদের উড়োউড়িতে মেহেদি খুবই বিরক্ত হল। তাই সে পাতলা তক্তার মত জিনিস নিয়ে এসে মৌমাছিদের তাড়াতে শুরু করলো। তক্তার বারি খেয়ে কয়েকটা মৌমাছি বেশ আঘাত পায়। মৌমাছিরা সবাই নিজের প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়। ফুলের গাছগুলো খুবই কষ্ট পেল। এরপর দিনও মেহেদি মৌমাছিদের সঙ্গে এমন আচরণ করলো। মৌমাছিরা সিদ্ধান্ত নিল, তারা আর ওই ফুলের বাগানে যাবে না। পর পর দুইদিন মৌমাছিরা বাগানে আসে না ফুল গাছগুলো একা হয়ে পড়েছে। তারা মৌমাছিদের সঙ্গে গল্প করতে পারছে না। মৌমাছিরা তাদের ফুলের মধু নিতে আসছে না। অন্যদিকে মৌমাছিদেরও খুবই কষ্টে দিন কাটছিল। তারা মধু সংগ্রহ করতে পারছে না।

এভাবে এক সপ্তাহ পর বিকাল সময়ে হাসু বাড়ি ফিরল। বাড়ি ফিরেই সে বাগান দেখতে চলে যায়। বাগানের সামনে গিয়ে বাগান দেখতেই তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। একটা ফুলেরও হাসি নেই। বাগানে যেন বিরহের ছন্দ বইছে। সে খুবই কষ্ট পেল সে দেখলো একটাও মৌমাছি নেই বাগানে। এদিকে ফুল গাছগুলো তাকে দেখে বেশ খুশি হয়ে উঠে। বাতাসের সাথে গা দুলিয়ে তারা নেচে উঠে। হাসু সব বুঝতে পারে। পরদিন খুব ভোরে সে বাগানে চলে আসে। গাছের ডালপালা পরিষ্কার করে এবং অসুস্থ ডালপালা গুলোকে সুস্থ করার ব্যবস্থা নেয়।  মৌমাছিরা দূর থেকে হাসুকে দেখতে পায় এবং মৌচাকে গিয়ে সবাইকে জানায়। হাসু এসেছে শুনে মৌমাছিরাও হুর হুর করে বাগানে ঢুকে পড়ে। ফুলে ফুলে বসে মধু খেতে শুরু করে। ফুলের বাগানও আনন্দে হেসে উঠে। হাসু খুবই খুশি হয় তা দেখে। হাসু মেহেদিকে ডেকে তার ভুলগুলো দেখিয়ে দেয়। মেহেদি তার ভুলে দুঃখ প্রকাশ করে। হাসু মেহেদিকে বলে ‘এই প্রকৃতির সবুজপ্রাণে যেমন প্রাণীর প্রয়োজন আছে তেমনি ফুলের বাগানে মৌমাছির প্রয়োজন আছে। তারা একে অপরের বন্ধু।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর