শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

টোটনের টিয়া পাখি

বাসু দেব নাথ

টোটনের টিয়া পাখি

 টোটন শহুরে ছেলে। ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। মা, বাবার একমাত্র সন্তান। শহরের পাঁচতলা ভবনের চারতলায় তাদের বাসা। তার খুব শখ একটি পোষা প্রাণী রাখার। কিন্তু চারতলা ভবনে থাকার কারণে সে কোন পোষা প্রাণীটি রাখবে বুঝে উঠতে পারছিল না। এমতাবস্তায় সবকিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিল সে একটি পাখি পালন করবে।

বাসার বেলকুনিতে সে তার বাবাকে বলে বড় একটা পাখির খাঁচা এনে ঝুলিয়ে দিল। এবার যাবে পাখি কিনতে। কিন্তু হাটবাজারের দিন ছাড়া বাজারে তেমন পাখি বিক্রির জন্য ওঠে না। তার জন্য তাকে দু’দিন অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু খালি খাঁচাটা যতবার দেখে ততবারই সে পাখির ভাবনায় ব্যাকুল হয়ে যায়। দু’দিন সময়টা তার কাছে দুই যুগ মনে হচ্ছে। অতঃপর বড় হাট বসার সময় চলে এলো। সেদিন সে স্কুলে যায়নি। বাবাকে অনেক অনুরোধ করে হাটে নিয়ে গেল পাখি কিনতে। হাটে অনেক লোক পাখি বিক্রি করতে এসেছে। অনেকে এসেছে পাখি কিনতে। টোটনও ক্রেতা ছিল তাই এদিক ওদিক পাখি দেখছিল, রংবেরং এর পাখি। কিছু কিছু পাখি খুব সুন্দরভাবে ডাকছে। হঠাৎ টোটনের চোখ পড়ল এক ছেলের উপর। তার হাতে ভাঙা বেতের খাঁচায় একটি টিয়া পাখি। পাখিটি খুবই দুর্বল! ঠিকভাবে উঠে দাঁড়াতে পারছিল না। ছেলেটিকে সে জিজ্ঞেস করল পাখিটির এই অবস্থা কেন?

ছেলেটি ভ্রু-কুচকে বলল- দু’দিন আগে ফাঁদ পেতে ধরেছি। হাট বসবে তাই অপেক্ষা করছিলাম। আজ হাট তাই নিয়ে এসেছি।

কোথায় থেকে ধরেছে জিজ্ঞেস করলে সে তা জানালো। পরে টোটন বুঝলো পাখিটি তার বাড়ির পাশের বাগান থেকেই ধরা হয়েছে।

পাখিটির এত দুরবস্থা হয়েছে যে ছেলেটির কাছে আর দুইদিন থাকলেই মারা যাবে। টোটন পাখিটি নিবে বলে বাবাকে জানালো। বাবা বলে, পাখি থাকতে তুমি এটি নিতে চাও কেনো?

টোটন বলল বাবা পাখি তো অনেক পাবো কিন্তু এই পাখিটি আমি এখন না নিলে ছেলেটির কাছে পাখিটি মারা যাবে। বাবাও সচেতন হল এবং দামাদামি করে পাঁচশ টাকা দিয়ে পাখিটি কিনে নিল। পাখিটি কিনতে পেরে টোটন বেশ খুশি। টোটন ও তার বাবা পাখিটি নিয়ে বাসায় ফিরলেন। টোটন প্রথমেই পাখিটিকে ভাঙা খাঁচা থেকে বের করে তার নতুন খাঁচায় রাখলেন। টোটন তার পাখি চিকিৎসক মামাকে বাসায় আসতে বললে তিনি এসে পাখিটি দেখে যান এবং কিছু ওষুধ দিয়ে যান। টোটন খাওয়ানের সাথে পাখিটিকে ওষুধগুলো খাওয়ালে দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠে। কিছুদিনের মধ্যেই পাখিটি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ডাকাডাকি করতে থাকে। টোটন খুব খুশি। সে পাখিটির নাম দেয় টিংকু। টিংকুর সেবা-যতেœ টোটনের কোনো ত্রুটি নেই। একদিন বিকালে সে খেয়াল করলো পাশের বাগানে যখন পাখিরা কিচিরমিচির করছিল টিংকু খাঁচার ভিতর ডানা ঝাপটাচ্ছে এবং কর্কশ গলায় ডাকছে। টোটন ভয় পেয়ে গেল। এভাবে কয়েকদিন টোটন একই কান্ড লক্ষ্য করলো। একদিন রাতে বাবা বাড়ি ফিরলে সে বাবাকে সব খুলে বলে। বাবা তাকে বলল,

- তুমি, আমি , তোমার মা কে নিয়ে যেমন আমদের একটি পরিবার। ওই বাগানে টিংকুরও হয়তো একটি পরিবার আছে আমাদের মত।

টোটন বুঝতে পারলো। পরদিন সে স্কুলে গেলেও তার মন বেশ খারাপ। সে নিজেকে পাখির জায়গায় রেখে ভাবলো এবং বুঝতে পারলো সে যা করছে তা উচিত নয়। অতঃপর সে সিদ্ধান্ত নিল পাখিটিকে মুক্ত করে দিবে। বিকালে স্কুল থেকে ফিরে অনেক ভারাক্রান্ত মনে সে খাঁচার দরজাটা খুলে দিল। খোলা দরজা পেয়ে পাখিটি দ্রুত বেরিয়ে গেল এবং উড়াল দিল বাগানের দিকে। টোটন অনেক কান্না করল পাখিটির জন্য। পরদিন খালি খাঁচাটি দেখে বিষন্ন মনে স্কুলে গেল। সারাটা দিন তার মন খারাপ। স্কুল থেকে ফিরে সে খাওয়া দাওয়া করলো এবং তার বিছানায় মন খারাপ করে শুয়ে রইল। হঠাৎ সে শুনতে পেল বেলকুনিতে কয়েকটি পাখি ডাকছে। সে হকচকিয়ে উঠলো। এক দৌড়ে বেলকুনিতে গেলে দেখতে পেল বেলকুনির ফাঁকে তিনটি পাখি বসে আছে তার মধ্যে একটি পাখি টিংকু; সেটা বুঝতে তার দেরী হল না। টোটন মনেমনে ধারনা করল এটিই তার পরিবার। টিংকুও টোটনকে দেখে বেশ খুশি। টোটন দ্রুত কিছু খাওয়ার নিয়ে আসে এবং তাদের খেতে দেয়। টিংকু ও তার পরিবার খাবার খেয়ে বাগানে ফিরে যায়। প্রায় প্রতিদিন বিকালেই টিংকু ও তার পরিবার আসে টোটনের সাথে দেখা করতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর