শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

ফুলপরী ও প্রজাপতি

আমির আসহাব

ফুলপরী ও প্রজাপতি

আকাশ লাল হয়ে এসেছে। মেঘের পাহাড়গুলো হয়ে উঠছে রঙিন। পড়ন্ত বিকেলে উড়ছে ফড়িং। প্রজাপতিও উড়ছে সমান তালে। প্রজাপতি উড়ছে এ ফুল থেকে ও ফুলে। ফড়িং উড়ছে এলোমেলো। বসার কোনো ফুরসত নেই তাদের। আর বসবেই বা কিভাবে? দুষ্টু ছেলেগুলো পিছু লেগেছে। ফুলগাছের আড়াল থেকে হাত বাড়াচ্ছে দুষ্টু ছেলেরা। কয়েকটি ফড়িং ধরা পরেছে দুষ্টুদের হাতে। লেজে সুতো বেঁধে আবার ছেড়ে দিচ্ছে ফড়িংগুলোকে। দু-একটা ফড়িং সুতো নিয়েই চলে গেছে নিরাপদ আশ্রয়ে।

মন খারাপ রোহানের। সে এসব পছন্দ করে না। সে ভাবে এতে ফড়িংগুলোর কষ্ট হয়। এদের কষ্ট দেওয়ার কি দরকার? বাগানের পাশেই নীরবে বসে আছে সে। কিছুক্ষণ আগে বন্ধু পলাশ, রাসেল ও সিয়ামের সাথে বের হয়েছে। কথা ছিল মাঠে ক্রিকেট খেলবে। প্রজাপতি আর ফড়িংগুলো দেখে শুরু হয়ে গেল দুষ্টুামি। রোহান ভাবছে, তাদের নিজস্ব কোনো বাগান নেই। প্রয়োজন হলে এখান থেকেই ফুল নেয় তারা। অথচ সুযোগ পেয়েই আজ ঢুকে পড়েছে বাগানে। ফুল গাছের ডালও ভেঙে গেছে সিয়ামের হাতে। স্বপ্নাদের বাড়ির কেউ দেখলে তো রক্ষা নেই। এর আগে স্বপ্নার বাবা বহুবার বলেছে- তোমরাও বাড়ির উঠানের ফাঁকা জায়গায় বাগান করতে পার। ছোট পরিসরে হলেও তো অন্যের দ্বারস্ত হতে হয় না। কথাগুলো বুঝের না অপমানের সেটা তো পরের কথা। কেউ ভালো করে শুনেই না। এমন একটা ভাব যেন, এসব শুনার সময় কই তাদের।

রোহানের চারপাশে কতগুলো পাঁপড়ি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। একটি প্রজাপতিও আহত হয়ে পড়ে আছে। কয়েকটা পিঁপড়াও এসে আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছে। রোহান তৎক্ষণাত প্রজাপতিটিকে তুলে নিল হাতে। পাখায় চুমু দিতে গিয়ে নজরে এলো ক্ষত। গাঁদাফুলের পাতা দু-হাতে পিসে কয়েক ফোঁটা রস দিতেই জ¦লমল করে উঠল পরিবেশ। প্রজাপতি হয়ে উঠল সুন্দরী এক পরী।

- ভয় পেয়ো না, বন্ধু। আমি পরী। প্রজাপতির হয়ে খেলতে এসে পায়ের নিচে পড়ে যাই। প্রচন্ড ব্যথায় জ্ঞান হারিয়েছিলাম। তুমি আমাকে বাঁচালে। বল, তুমি কি চাও?

প্রথমে খুব ভয় পেলেও সে জানে পরীরা খুব ভালো হয়। মানুষের ক্ষতি করে না।

মাথা নেড়ে বলতে চাইল- কিছু লাগবে না।

পরীটা আবার বলল- কিছু নিতে চাওনা কেন? উপকারীর উপকার করাই যে আমাদের ধর্ম। কিছু একটা চাও। তোমার মনে কোনো ইচ্ছে থাকলেও বলতে পার। আমি তোমাকে সাহায্য করব।

- তাহলে আমার বাড়িতে একটা সুন্দর ফুলের বাগান বানিয়ে দাও। প্রজাপতি, ফড়িং যেন ইচ্ছে মতো উড়তে পারে।

- তোমার ইচ্ছে সফল হয়েছে। তুমি আরও কিছু চাইতে পার বন্ধু?

- আর কিছু চাই না। তবে তুমিও বাগানে আসবে!

- ঠিক আছে বন্ধু, আসব।

- আচ্ছা, তুমি আসলে আমি তোমাকে চিনব কিভাবে? জানতে চাইল রোহান।

সাত শব্দের ছোট চরণ বলেই উধাও হয়ে গেল পরী। চরণটির অদ্ভূত এক শক্তি আছে। চরণটি কোনো পরী উচ্চারণ করলে সে অদৃশ্য হয়ে যায়। আবার মানুষ উচ্চারণ করলে, পরীরা মানুষের রূপ ধারণ করে। তখনও চরণটি বিড়বিড় করে বলছে রোহান। হঠাৎ বন্ধু সিয়াম পিছন থেকে বাম হাত টেনে ধরল তার। কিন্তু রোহান হাত ছাড়িয়ে ছুটছে বাড়ির দিকে। রোহানের এমন আচরণে কষ্ট পেল তার বন্ধু পলাশ, রাসেল ও সিয়াম।

একি! বাড়ি চিনতেই পারছে না সে। ফুল আর ফুল। নাম না জানা নানা রকমের ফুল। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরে আছে বাড়ির চারপাশ। শুধু কি ফুল, আছে ফলের গাছও। অবাক হয়ে দেখছে সব। প্রজাপতিও আছে দেখছি। আছে ফড়িং। বিকেলে বসার জন্য আছে সবুজ ঘাসের গালিচা। রোহানের মনে হলো পরীর কথা। পরীটাও কি আছে এখানে? হয়তো আছে। চরণটি মনে করতে চেষ্টা করল রোহান- পরপরবাসপলকপলাশ...’ ইস, বাকী অংশ যেন কী? মনে করার চেষ্টা করেও মনে আসছে না তার। প্রতিদিন বিকেলে প্রজাপ্রতি আর ফড়িংগুলোর উড়াউড়ি দেখে চরণ আবছা আবছা মনে আসে। কিন্তু প্রতিবারই ফুল, ফড়িং ও প্রজাপ্রতির খেলায় সে হারিয়ে যায়। এখনও এভাবেই কাটে রোহানের বিকেল। মাঝে মাঝে বন্ধুদের আসতে বলে। সবাই মনের আনন্দে সময় কাটায়। রোহান এখন মালিক। বন্ধুরা দুষ্টুমি করতে গেলে এখন শুধু চুপ করে থাকেনা সে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর