শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বনের রাজা জমের ঠাকুর

এনাম আকন্দ

বনের রাজা জমের ঠাকুর

সে অনেক বছর আগের কথা। সুন্দর বনে পশু-পাখিদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল। বনে নতুন এক ভয়ঙ্কর প্রাণী আসছে। নাম তার জমের ঠাকুর। সে সকাল বিকাল বিষাক্ত প্রাণীদের দিয়ে নাস্তা করে। জমের ঠাকুর সবাইকে জানিয়ে দিল এখন থেকে সবাই যেন তাকে বনের রাজা হিসেবে মানা হয়।

দুশ্চিন্তায় পড়ে অনেক পশুপাখি খানা দানা ছেড়ে দিয়েছে। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। আগে তো জান বাঁচাতে হবে। তাই উপায় বুদ্ধি না পেয়ে হরিণেরা বনের রাজা সিংহের কাছে প্রাণ রক্ষার দাবি জানাল। বনের রাজা সিংহ মামা ভেবে চিন্তে বললেন- ঠিক আছে বিষয়টি আমি দেখছি। তোমাদের জান-মালের নিরাপত্তা তো আমাকেই দিতে হবে। বাঘ মামাকে নির্দেশ করা হলো চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে জমের ঠাকুরকে এই বন থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বাঘ মামা বলল- চিন্তা করবেন না রাজামশাই এক ধমক দিয়ে জমের ঠাকুরকে এখনি বিদায় করে দিচ্ছি। এ কথা বলে বিদায় নিয়ে হরিণদের সাথে করে জমের ঠাকুরকে ধরার উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়। বাঘ মামা হরিণদের জিজ্ঞেস করে- কোথায় থাকে জমের ঠাকুর? আমাকে বল- জ্বী, মামা- বনের মধ্যখানে এক গর্তের ভিতর লুকিয়ে আছে। চল আমার সাথে- বেটাকে দেখাচ্ছি মজা। এমন সময় বাঘ মামা বিরাট এক হুংকারের শব্দ শুনে একটু ঘাবড়ে গেল। তারপরও সাহস করে গর্তে দিকে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে- কে রে তুই? অমনি গর্তের ভিতর থেকে উত্তর দেয়-

নামটি আমার জমের ঠাকুর

মাটির দেশে থাকি

বাঘ হরিণের রক্ত দিয়ে

ভূতের ছবি আঁকি।

এই কথা শুনার সাথে সাথে বাঘ মামা দৌড়াতে শুরু করল। ওরে বাপ রে! বাঘ হরিণের রক্ত দিয়ে ভূতের ছবি আঁকে! কি ভয়ঙ্কর কথা! আগে নিজের জানটা তো বাঁচাই। হাঁপাতে হাঁপাতে বনের রাজার কাছে গিয়ে বলল- রাজামশাই আমি তাকে তাড়াতে পারব না। জমের ঠাকুর আমাদের রক্ত দিয়ে ভূতের ছবি আঁকে। ওরে বাবা রে! ওরে মা রে! আমার মনে হয় আর বেশি দিন বাঁচব না গো রাজামশাই। আমাদের আপনি বাঁচান। বনের রাজা সিংহ মামা রেগে বাঘ মামাকে ধমক দিয়ে বলে- চুপ কর আহমক! জমের ঠাকুরের এত বড় সাহস! আমার বনে থেকে বাঘ হরিণের রক্ত দিয়ে ভূতের ছবি আঁকে! চল্ আমার সাথে। বনের রাজা সিংহ মামা গর্তের সামনে দাঁড়িয়ে ধমক দিয়ে জিজ্ঞেস করে কে রে তুই? এক্ষনি বের হয়ে আয়! অমনি গর্তের ভিতর থেকে উত্তর দেয়-

নামটি আমার জমের ঠাকুর

পাতালপুরী যাব

বনের রাজার মাথা দিয়ে

রাতের খাবার খাব।

এই কথা শুনার পর বনের রাজা সিংহ মামা ভয়ে দৌড়াতে শুরু করল। ওরে বাপরে! ওরে মা রে! আমি তো আর বেশিক্ষণ বাঁচব না রে। আমার মাথা দিয়ে জমের ঠাকুর রাতের খাবার খাবে। আমি এখন কি করব! কার কাছে গেলে আমার প্রাণ বাঁচবে। এমন সময় রাজা মশাইয়ের সামনে দিয়ে যাচ্ছিল এক বয়ষ্ক খরগোশ। বনের রাজার এ করুণ অবস্থা দেখে খরগোস জিজ্ঞেস করল- জাঁহাপনা, আপনার কি হয়েছে? বনের রাজা সব কথা খরগোশকে খুলে বলল। খরগোশ সব কথা শুনে বলল- জাঁহাপনা! আপনার ভাগ্নে শিয়াল পন্ডিত থাকতে আপনার চিন্তা কিসের? তাকে খবর দেন সে সব সমস্যার সমাধান করে দিবে। শিয়াল পন্ডিতকে খবর দিয়ে এনে সব ঘটনা খুলে বলা হয়। ঘটনা শুনে শিয়াল পন্ডিত বলল- এটা কোন ব্যাপার না রাজা মশাই। হাতিকে খবর দেন। যা করার আমি আর হাতি করব। আপনারা শুধু দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন। বনের রাজা সিংহসহ বনের যত পশুপাখি আছে সবাই মিলে জমের ঠাকুরকে ধরার জন্য গেল। শিয়াল পন্ডিত হাতিকে বলল- তোমার শুঁড় গর্তের ভিতর ঢুকিয়ে নাড়াতে থাক আর ব্যাঙদের বলে দেওয়া হলো তোরা সবাই গর্তে ভিতর পেসাব কর। হাতির শুঁড়ের যাতা আর পেসাবের দুর্গন্ধে গর্তের ভিতর জমের ঠাকুর আর বেশিক্ষণ টিকতে পারল না। হাতির শুঁড় ধরে বের হয়ে আসলো জমের ঠাকুর। অবাক কান্ড! সবাই চেয়ে দেখে এ যে বন বিড়াল! বনের রাজা আর বাঘ মামা তো রেগেমেগে আগুন! বন বিড়াল বের হয়ে কাকুতি মিনতি করে বলতে লাগলো- আমাকে কেউ মারবেন না। আমি অসুস্থ, গর্তে পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় মাথা ঘুরে গর্তে পরে যাই। এখান থেকে উঠে আসার মত উপায় বুদ্ধি না পেয়ে এ কৌশল অবলম্বন করেছি। আমাকে সবাই মাফ করে দেন। বন বিড়ালের কথা শুনে সবার মনে মায়া হলো। সবাই বন বিড়ালকে মাফ করে দিল। সেদিন থেকে বনে আবার শান্তি ফিরে আসল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর