শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

রাজ পণ্ডিত

শাম্মী তুলতুল

রাজ পণ্ডিত

রঙিনপুর নামক এক দেশ ছিল। সেই দেশের রাজা অনেক ভালো মানুষ ছিলেন। প্রজাদের সকল কথা শুনতেন আর তা সমাধান করার চেষ্টা করতেন। ফলে রাজ্যে সকলে শান্তিতে বসবাস করত।

রাজা ভালো মানুষের সঙ্গে সঙ্গে বুদ্ধিমানও বটে। কিন্তু অনেক সময়  নিজের বুদ্ধিও বিফলে যায়। তাই রাজ্যে কর্মরত আছেন এক রাজপণ্ডিত। রাজ পণ্ডিত বেশ জ্ঞানী অতি বুদ্ধিমান। রাজ্যের বিপদ মুহূর্তে তিনি কৌশলে বুদ্ধির জোরে সকল বিপদ মোকাবিলা করেন। কিন্তু যিনি ভালো কাজ করেন তার পেছনে মন্দ লোক পিছে লেগে থাকার অভাব নেই। সে চাই ভাল মানুষটিকে সব সময় বিপদে ফেলত। রাজপণ্ডিতেরও তেমন দশা  হল। রাজপণ্ডিত দু’দিন ছুটি নিলেন তার নিজ কাজে। এই সুযোগ কাজে লাগালেন সেনাপতি। দু’দিন গত হওয়ার পর রাজপণ্ডিতের খবর না পেয়ে রাজা উদ্বিগ্ন। মন্ত্রী মশাইকে বলেন, কি এক অবস্থা দেখুন তো, ছুটি শেষ হল এখনও পণ্ডিত মহাশয়ের কোন খবর নাই। কোন অসুখ বিসুখ করেনি তো?

আরে নাহ জাহাপনা কিসের আবার অসুখ আরাম বেশি পেলে শরীর বেশি সয়। ইদানীং তিনি তেমন একটা কাজেরও না বয়স হচ্ছে এর চেয়ে বিদায়  ভাল। কথাগুলো বললেন সেনাপতি।

হুমম। কিন্তু এই মুহূর্তে নতুন পণ্ডিত কই পাই?

এ আবার কষ্ট কিসের জাহাপনা অভাব আছে নাকি? রাজপণ্ডিত হওয়ার জন্য কত মানুষ  তাকিয়ে আছেন।

তবে তাই হোক আপনি একটা ব্যবস্থা করুন আমি অতো চিন্তা মাথায় নিতে পারছিনা।

জী যা হুকুম। সেনাপতি মনে মনে খুশি, পুরনো পণ্ডিত তার একদম পছন্দ না। কারণ পুরনো পণ্ডিত কথায় কথায় জ্ঞান দেয় আর চোর ধরতে ওস্তাদ। তাই সুযোগটা তিনি লুফে নিলেন। তিনি ব্যস্ত হয়ে গেলেন নতুন পণ্ডিতের সন্ধানে। কিন্তু হুট করে কি আর পণ্ডিত মেলে? তাও জ্ঞানী, মেধাবী। সেনাপতি মোহদয় একটা বুদ্ধি বের করলেন কোন রকম নকল কাউকে চালিয়ে দিয়ে নতুন সন্ধান করবেন। কোন রকম সিপাহীকে  পণ্ডিত সাজিয়ে নিয়ে এলেন রাজার কাছে। রাজা তাকে দেখতেই প্রণাম করলেন।

উনাকে কোথায় পেলেন সেনাপতি? তাও এতো দ্রুত!

জী আসলে ইয়ে মানে আমতা আমতা করে সেনাপতি বলেন, উনি আমাদের রাজ্যে নতুন। মহাজ্ঞানী ধ্যান করা অবস্থায় উনাকে আমি আমাদের পাশের এক জঙ্গলে দেখেছি ভাবলাম ধ্যান ভাঙলেই কথা বলে নেব। কথা বলেই বুঝলাম উনি একজন পণ্ডিত। দেশে দেশে সবাইকে জ্ঞান দেন। আমি রাজপণ্ডিতের কথা বলতেই বিনা পারিশ্রমিকে রাজি হয়ে গেলেন।

বেশ বেশ আপনার প্রশংসা না করে পারিনা। এই সময় পণ্ডিতকে কত দরকার তা বুঝলে পুরনো পণ্ডিত দেরি করত না। রাজা মুদ্রার থলে ছুড়ে দিয়ে বলেন এই নাও সেনাপতি তোমার পুরস্কার।

জী জনাব আপনার জুড়ি নেই।

কিন্তু মিথ্যা কথা যে বেশি দিন টেকে না এই কথা কি আর ভেবেছেন সেনাপতি? কিছুদিন পর রাজ সভায় এক শিশুর আগমন হল। বয়স সাত কি আট। সবাই তার দিকে তাকিয়ে রইল। কে এই শিশু এখানেই বা কি করে এল?

রাজা তাকে দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন, শিশু কে তুমি এই রাজ দরবারে।

জী আমি শুভ।

কি চাও তুমি?

আমার মা পাঠিয়েছেন আপনার কাছে।

কি জন্য?

আপনার রাজ্যে অনেক মশা আমাদের বড়ই কষ্ট হয় সে আর্জি নিয়ে এলাম। মা আমার মশার কামড়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

রাজা বিস্মিত হলেন শিশুটির কথা শুনে।

তখন এ ব্যাপারে একে একে সবার কাছে সমাধান চেয়ে শেষে পণ্ডিতের নিকট সমাধান চাওয়া হলে পণ্ডিত বার বার মুখ লুকান। এই অবস্থায় মন্ত্রী খুব বিরক্ত হন কি হল নতুন পণ্ডিত কিছু তো বলুন।

রাজা আবার বললেন জঙ্গলে এতো মশার উপদ্রব! কি বিচ্ছিরি ব্যাপার, আমার প্রজারা কত কষ্টে আছেন। কি করা যায় বলুন তো পণ্ডিত?

উত্তর দিন চুপ করে আছেন কেন? মন্ত্রী রাগান্বিত হয়ে বললেন। 

জী আজ্ঞে আসলে আমি বলছিলাম হঠাৎ করে পণ্ডিত দাঁড়ি গোঁফ খুলে ফেলে রাজার পায়ে এসে লুটিয়ে পড়েন জা-জা-জাহাপনা।

সেকি কি করছেন আমাকে ক্ষমা করুন। বলুন ক্ষমা করবেন কিনা নয়ত পা ছারছিনা।

আহা কি হয়েছে বলবেন তো কে আপনি?

আমি কোন পণ্ডিত নই আমাকে মিথ্যা সাজিয়ে আনা হয়েছে।

কি কে করেছে এই কাজ। কার এতো বড় সাহস?

ওই যে সেনাপতি সাহেব। আমি দুঃখী মানুষ। পুরনো পণ্ডিতের ভাত নষ্ট করতে এই কাজ করেছেন তিনি।

রাজা এবার বেজায় গরম কি বললে এই কে আছিস তোরা যা সেনাপতিকে ধরে নিয়ে আয়। সেনাপতি শুনে ধীর পায়ে হেঁটে দেয় ভোঁ দৌঁড়। কিন্তু অন্যায় করলে শাস্তি যে পেতেই হয় সেনাপতিরও তাই হল। এদিকে শিশুটি খিলখিল করে হাঁসতে লাগল।

তাই দেখে রাজা বলেন, তুমি হাসছ কেন বাছা।

আগের পণ্ডিত আমার নানা হন।

কি বল?

জী, আমার মা সত্য বের করে আনতে এমন কাজ করেছেন।

রাজা এতোটুকু শিশুর কাছে খুব লজ্জা পেলেন। রাজা মনে মনে খুব অনুতপ্তও হলেন। তিনি পুরনো পণ্ডিতকে স্ব-সম্মানে আবার রাজ দরবারে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করলেন।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর