শুক্রবার, ৩ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

চার-ছক্কার ব্যাটসম্যান

শাম্মী তুলতুল

চার-ছক্কার ব্যাটসম্যান

সকাল সকাল নবীনের জ্যাঠুমশাই নবীনকে বলে, কিরে তুই না প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার কথা।

হুমম।

যাবি না?

হুমম।

তো যা।

হুমম।

কী সমস্যা মুখ দিয়ে কথা বের হয় না কেন?

ইয়ে মানে জ্যাঠু আজ আমার একটা কাজ আছে।

কী কাজ বলত শুনি।

এই আর কি।

হা হা হা হা, নবীনের কথা শুনে জ্যাঠু গাল ফাঁক করে হাসে।

নবীনের মন খারাপ হলো জ্যাঠুর এমন হাসি দেখে।

এইটুকুন পুচকে, তোর আবার কাজ। শোন, সোজা পড়তে যা। নইলে বাঁচা মুসকিলহে তোর বাবার কিলে, বলে দিলাম।

জি তাই যাচ্ছি। নবীন সামনে এগোয় আর একটু পর পর কৌশলে পেছনে তাকায় জ্যাঠু চলে যায় কি না নজর দেয়। খানিক পর জ্যাঠুকে দেখতে না পেয়ে নবীন পথ পরিবর্তন করে সোজা চলে যায় ক্রিকেট মাঠে। বন্ধু হিমেল দেখে দৌড়ে এসে বলে, এত দেরি করলে কি হয়? প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে চল।

হুমম চল।

নবীন তার ব্যাট রাখে হিমেলের কাছে। হিমেল তাকে ব্যাট ধরিয়ে বলে, শুরু কর। নবীন ব্যাটিং করছে আর একের পর এক চার-ছক্কায় মাঠ কাঁপাচ্ছে।

কোচ বলেন, তুমি অনেক ভালো ব্যাটসম্যান হবে কিন্তু সব সময় দেরি করে এলে এ সুযোগ অন্য কেউ নিয়ে যাবে। এতে তুমি ছিটকে পড়বে। মাথায় রেখ।

জি স্যার। প্র্যাকটিস শেষে গালে হাত দিয়ে নবীন চিন্তা করতে লাগল। তা দেখে হিমেল বলে, কী ভাবছিস ব্যাটসম্যান?

কীভাবে হব বল? বাবা ক্রিকেট পছন্দ করেন না। আমি যেন প্র্যাকটিস করতে না পারি জ্যাঠুকে হরদম পিছে লাগিয়ে রেখেছেন। আজও তাই দেরি হয়ে গেল।

কিন্তু এভাবে রোজ দেরি করলে শুনেছিস তো কোচ কি বলেছেন? উপায় বের কর।

হুমম।

চল বাসায় যাই।

পরের দিন একই সময় নবীন বের হয় প্রাইভেটে যেতে, সঙ্গে জ্যাঠুও। আজ কী বুদ্ধি বের করে সামাল দেবে নবীন তা ভেবে অস্থির। হঠাৎ জ্যাঠুর একটা ফোন আসায় তিনি চলে গেলেন। এ যাত্রায় নবীন দৌড় দিল প্র্যাকটিসে। কিন্তু জ্যাঠু কিছুদূর যেতেই দেখা হয় রতনের সঙ্গে। বলেন, কিরে কেমন আছিস রতন? এইমাত্র নবীন গেল।

এতদিন পর?

মানে?

নবীন কি অসুস্থ ছিল কাকা?

না তো।

অনেক দিন দেখিনি।

কী বলছিস, কত দিন?

পাঁচ দিন ধরে।

কী সর্বনাশ ক্রিকেট ভূত এখনো নামেনি বোধ হয়। আচ্ছা তুই যা। এবার জ্যাঠু সোজা ছুটে গেল মাঠে। তখন নবীন ব্যাট করছিল। 

জ্যাঠু ধমক দিয়ে বলেন, মুখ বন্ধ কর ছোঁড়া। এই তোর কাজ?

জ্যাঠু বাবাকে কিছু বলো না। ক্ষমা চাইছি।

ধুর ছাই কোনো ক্ষমা নেই, চল। নবীনকে টানাহেঁচড়া করতে দেখে কোচ এগিয়ে এসে বলেন, একটু দাঁড়ান স্যার।

জি বলুন।

আপনি ওর কী হন?

জ্যাঠু হই। দেখুন একটা বাচ্চার ভবিষ্যৎ তার পরিবারের হাতে। আমি শুধু তার প্রতিভা বিকাশের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা বলতে পারি। আপনার ভাইয়ের ছেলে অতি মেধাবী। সে ক্রিকেট খুব ভালো বোঝে। তার খুব সুন্দর একটি ভবিষ্যৎ আছে। এ দেশকে আমরা একজন দেশসেরা ব্যাটসম্যান দিতে পারি।

দেখুন, এতে পড়াশোনার ক্ষতি হবে এই খেলাটেলা নিয়ে পড়ে থাকলে।

পড়ার কোনো কমতি হবে না। আপনি শুধু সকালের সময়টা দিন, বাকি সময় সে পড়ুক। এবার ভাবনাটা আপনার।

জি অবশ্যই। জ্যাঠু নবীনের হাত ধরে মাঠ ত্যাগ করে বাসার দিকে এগোচ্ছেন আর নবীনের চার-ছক্কার কথা ভাবছেন। সত্যিতো তার খেলায় দম আছে। ভেবে মনে মনে হাসছিলেন। নবীনের মন খারাপ দেখে খানিক পর জ্যাঠু বলেন, প্রাইভেট কোন সময় পড়লে ভালো হয়?

নবীন চোখ বড় করে তাকায় জ্যাঠুর দিকে। কী বললে জ্যাঠু?

যা তোকে সহযোগিতা করার দায়িত্ব আজ থেকে আমার। যেদিন টুর্নামেন্ট হবে সেদিন তোর বাবা-মাকে এনে তাক লাগিয়ে দেব।

সত্যি?

হুমম সত্যি। তবে পড়ালেখা... নবীন তখন জ্যাঠুর কথা ছিনিয়ে নিয়ে বলে, জ্যাঠু একদম নিশ্চিত থাক। দেইখ আমি পড়ালেখা মন দিয় করব।

সাবাস! চল যাই তবে।

চল।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর