শিরোনাম
শুক্রবার, ১৭ জুন, ২০২২ ০০:০০ টা

রাজ্যের নাম রাগপুর

শারমিন ইসলাম রত্না

রাজ্যের নাম রাগপুর

সবুজ ফুলে-ফলে ভরা অপূর্ব একটি রাজ্য। রাজ্যের নাম রাগপুর। এমন সুন্দর রাজ্যের নাম রাগপুর কেন হলো? কারণ সেই রাজ্যের রাজকুমারীর ভীষণ রাগ। তার নাম রুপালি। কেউ তাকে রাজকুমারী রুপালি ডাকে না। সবাই ডাকে রাগকুমারী। এভাবে তো চলতে পারে না।

রাগকুমারী আয়নার সামনে বসে থাকে। মন খারাপ করে বলে, আমি দেখতে কত সুন্দর। মেঘের মতো কালো চুল, পদ্ম ফুলের মতো চোখ। চেহারাটি চাঁদের মতো। শুধু কপালের মাঝখানে কয়েকটি ভাঁজ। ইশ! ওটা যদি না থাকত তাহলে কত ভালো হতো। আচ্ছা আমি এত রাগ করি কেন? রাগকুমারী উত্তর খুঁজে বেড়ায় কিন্তু পায় না। প্রশ্নটি প্রশ্ন হয়ে থাকে।

রাজা ঘোষণা করলেন। কোনো কবিরাজ যদি রাগকুমারীর রাগ কমাতে পারে তাকে মূল্যবান ধন-রত্ন উপহার দেওয়া হবে। ঘোষণা শুনে বহু কবিরাজ এলো। রাগকুমারীকে রাগ কমানোর ওষুধ দিল। রাগকুমারী চিৎকার করে বলল, আমি ওষুধ খাব না। সব ছুঁড়ে ফেলে দিল।

রাজা মহাবিপদে পড়লেন। যত দিন যাচ্ছে রাগকুমারীর রাগ ততই বেড়ে যাচ্ছে। রানি রাগকুমারীকে বললেন, আমার সোনা মা, তুমি বড় হয়েছ। তোমায় বিয়ে দিতে হবে। তুমি যদি ওমন রাগ করো তাহলে রাজপুত্রের সঙ্গে কী করে জীবন কাটাবে বল তো? রাগকুমারী দুঃখ প্রকাশ করে বলল, ওহ! মা তাই তো। আমি ইচ্ছে করে রাগ করি না। রাগ হয়ে যায়। বরং কেউ আমার রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে আমি আরও রেগে যাই।

তখন রাজা একটি অদ্ভুত ঘোষণা করলেন। কোনো রাজপুত্র যদি রাগকুমারীর রাগ কমাতে পারে, আমি সিংহাসন ছেড়ে দেব। ঘোষণা শুনে বহু রাজপুত্র এলো। রাগকুমারীর সঙ্গে দেখা করতে চাইল। রাগকুমারী দেখা করল না। রাজার কাছে সময় চেয়ে আবেদনপত্র পাঠাল। রাজা আবেদনপত্র মঞ্জুর করলেন। রাগকুমারীর জন্য সুন্দর একটি বাগান তৈরি করলেন। রাগকুমারী বাগানে অবসর সময় কাটায়। দোলনায় দোল খায়। পাখিদের গান শোনে। এভাবে দিন যায়, মাস যায়, বছর ঘুরে আসে। রাগকুমারীর রাগ কিছুতেই কমে না।

হুট করে রাজা ঘোষণা করলেন, আজ থেকে আমি সিংহাসন ছেড়ে দিলাম। চারদিকে হৈ হৈ রই রই শুরু হলো। প্রজারা কাঁদতে লাগল। রাগকুমারী বাগানে বসে ভাবতে লাগল, রাজা এ কি করলেন! আমি রাজ্য চালাবার মতো উপযুক্ত নই। কারণ আমি খুব রাগ করি। বাগানের ফুল, পাখি, গাছ, লতাপাতা, ঝরনা সবাই যেন কাঁদছে।

বাগানের দরজা দিয়ে প্রজারা প্রবেশ করল। প্রহরীরা বাধা দিতে পারল না। সবার চোখে পানি। সবার একটাই কথা, হে রাগকুমারী, কে আমাদের সঠিক বিচার করবে? কে আমাদের মুখে হাসি ফোটাবে? আমরা আমাদের রাজাকে ফিরে পেতে চাই। রাজ্যজুড়ে হাহাকার নামল। রাগকুমারীর চোখে পানি জমল। বড় হওয়ার পর প্রথম রাগকুমারী কাঁদল, তাও সবাইকে লুকিয়ে।

হঠাৎ প্রজারা দেখল রাজ্যে পানি প্রবেশ করছে। আকাশ পরিষ্কার। ঝড় নেই। নদী ভাঙল কীভাবে? প্রজারা বাঁধ দিতে ছুটে গেল। কিন্তু কেউই পানির উৎস পেল না।

রাগকুমারী প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। কোথা থেকে একটি পাখি উড়ে এলো। দেখতে অপূর্ব সুন্দর। পাখি মিষ্টি করে বলল, হে প্রিয় রাগকুমারী, আপনি আর কাঁদবেন না। দেখুন রাজ্য পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। রাগকুমারী ও পাখির কথা রানি আড়াল থেকে শুনলেন। বুঝতে পারলেন রাজ্যে পানি প্রবেশ করার রহস্য!

রাজা ঘোষণা করলেন, আজ থেকে রাজ্যের সমস্ত দায়িত্ব আমার মেয়ে রাগকুমারীর। যে প্রজার দুঃখে দুঃখী হতে পারে। যে প্রজার কান্নায় কাঁদতে পারে। সেই একমাত্র উপযুক্ত আমার সিংহাসনে বসার। রাগকুমারী কাঁদতে কাঁদতে বলল, বাবা, এত বড় দায়িত্ব নেওয়ার আমি উপযুক্ত নই। কারণ আমি ভীষণ রাগী। রাজা মমতা মাখা কণ্ঠে বললেন, তুমি উপযুক্ত হয়েছ বলেই তোমায় আমার সিংহাসন অর্পণ করলাম। চোখের অশ্রু মুছে ফেল। আজ থেকে তুমি সবার রানি, সবার মা। সঠিকভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করবে। রাজা মাথার মুকুট খুলে রাগকুমারীর মাথায় পরিয়ে দিলেন। চারদিক ঝলমল করে উঠল। রাজা বললেন, আজ থেকে তুমি রাগকুমারী নয়, রাজকুমারী। আজ থেকে রাজ্যের নাম রাগপুর নয়। সুখপুর। আকাশ আলোকিত করে বিজলি চমকালো। সবাই হাসি, আনন্দে নাচতে লাগল। গাইতে লাগল। সুখপুর রাজ্যে সুখের বৃষ্টি নেমে এলো।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর