শুক্রবার, ১৯ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

পেটুক ব্যাঙ এবং রাক্ষুসে বোয়াল

ইউনুস আলী

পেটুক ব্যাঙ এবং রাক্ষুসে বোয়াল

বোকা ব্যাঙ। দেখতে অনেক বড়। পুকুরের কীটপতঙ্গ খেয়ে খেয়ে বেশ মোটাতাজা হয়ে উঠেছে সে। শরীরে শুধু চর্বি আর চর্বি। সবাই বলে কম খেতে। কিন্তু সে খায় বেশি। কারও নিষেধ মানে না। খেয়েই চলছে অবিরাম।

তার এমন আচরণে আপনজনেরা বিরক্ত, ক্ষুব্ধও। এক দিন ব্যাঙের মা তার কাছাকাছি বসে নানান গল্প করতে লাগল। হঠাৎ মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে নরম সুরে বলল-

গোসা না করলে তোমাকে দুটো কথা বলি, বাজান?

কেন নয় মা? বল, তাড়াতাড়ি বল। আমি কি আর তোমার কথা না মেনে পারি?

হ্যাঁ, বাবা! তুমি অনেক ভালো। অনেক বুদ্ধিমান। আমি জানি, তুমি ইশারায় সবকিছু বুঝে নাও। তো, তোমাকে আমি একটা অনুরোধ করব। রাখবে আমার অনুরোধ?

অবশ্যই মা।

বাজান! কদিন থেকে লক্ষ্য করছি, প্রয়োজনের তুলনায় একটু বেশিই খাচ্ছ তুমি। তাই দিন দিন মুটিয়ে যাচ্ছ বাজান! খাবার গ্রহণের ক্ষেত্রে আরেকটু সতর্কতা অবলম্বন খুবই জরুরি বলে মনে হচ্ছে।

এসব প্যাঁচাল নিয়ে আমার কাছে আসলে কেন, মা? দুদিনের দুনিয়া! কদিন আর বাঁচব? একটু বাড়িয়ে খেলে কী এমন অসুবিধা মা? দয়া করে এমন প্যাঁচাল নিয়া আমার কাছে দ্বিতীয়বার আসবে না, প্লিজ!

এই কি আমার কথা রাখলে তুমি? শুনতেই চাইলে না আমার কথাগুলো। পৃথিবীতে এমন সন্তান যেন কার না হয় (রাগে গরগর করে মায়ের প্রস্থান)।

মা চলে যাওয়ার পর পেটুক ব্যাঙটি গান ধরল- ‘দুনিয়াটা মস্ত বড়ো/খাও দাও ফুর্তি করো/আগামীকাল বাঁচবে কি-না/বলতে পার?

ব্যাঙের অদ্ভুত গলার গান শুনে পুকুরের অন্যান্য জলজ প্রাণী এসে ভিড় জমাল। শিং মাছ তার শিং নাড়িয়ে শুরু করল নৃত্য। ব্যাঙের সঙ্গে কণ্ঠ মিলাল কাঁকড়া। বসে নেই ডিমওয়ালা পুঁটিও। পেট দেখিয়ে দেখিয়ে সেও জুড়ল অভিনব নৃত্য। টেংরা এসে ফুর্তি করে দিতে লাগল এক ওকে গুঁতো। এভাবে সবাই মেতে ওঠে এক অনাবিল আনন্দে।

খুব সময় গেল না সবার এ আনন্দ মিইয়ে যেতে। হঠাৎ মস্ত বড়ো হা করে এগিয়ে এলে বোয়াল। মুহূর্তেই সকলে উধাও। লাপাত্তা। পেটুক ব্যাঙটি রয়ে গেল জায়গায়ই। এতটুকুও নড়তে পারল না সে। বোয়ালের ‘হা’ দেখে পেটুক ব্যাঙ শুধুই ‘মা মা’ বলে ডাকতে লাগল।

পেটুক ব্যাঙের অসহায় চিৎকার দেখে হি হি হি করে হেসে উঠল বোয়াল। ঝাপটে ধরে ব্যাঙকে দিল ধমক।

মাকে ডেকে কী হবে বাছা? মা আসবে তোমাকে বাঁচাতে? পারবে আমার হাত থেকে তোমাকে কেড়ে নিতে?

না, না। পারবে না বাঁচাতে। তো, আমাকে একটু সুযোগ দিন। আমি আমার মায়ের কাছে ক্ষমা চেয়ে আসি।

আরে আমার সঙ্গে চালাকি! তোমাকে এখনই খেয়ে নিচ্ছি আমি। হালুম!

ব্যাঙের মা দূর থেকে সব দেখছিল। কিন্তু তার করার কিছুই ছিল না। সন্তানের অসহায়ত্বে শুধু হাউমাউ করে কাঁদছিল সে।

উপদেশ : অতিরিক্ত কোনো কিছুই ভালো নয়। পেটুক ব্যাঙ মোটা হওয়ার কারণে নিজেকে রাক্ষুসে বোয়ালের হাত থেকে বাঁচাতে পারেনি।

সর্বশেষ খবর