শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

অনেক অপেক্ষার পর

হাসান হাফিজ

অনেক অপেক্ষার পর

মা-মুরগির মেলায় যাওয়া হলো না এই দফায়। কারণ তার ডিম। মেলায় যেতে আসতে সময় লাগবে অনেক। ডিমে তা দেওয়া বন্ধ থাকবে। বাচ্চা ফুটতে দেরি হয়ে যাবে। সেটা কী করে হয়?

মুরগি-মা ডিমে বসে তা দেয়। সময় যায়, সময় যায়। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। কখন, কখন, কখন? এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা, তিন ঘণ্টা- এভাবে দিন পার হতে থাকে। চলতেই থাকে ডিমে তা দেওয়ার কাজ।

একদিনের ঘটনা। একটা দাড়ি ছাগল (সে-ও মা, তিনটে বাচ্চা আছে তারও) যাচ্ছিল ওখান দিয়ে। মেলায় যাবে ছাগল মা-টা। মুরগিকে বলে,

যাবে নাকি মেলায়? চলো আমার সঙ্গে।

মুরগি-মা জবাব দ্যায়,

না গো, সেটি হচ্ছে না। মেলায় যাওয়ার কোনো উপায় নেই। দেখছ না, ডিমে তা দিচ্ছি। তুমি একাই যাও মেলায়।

এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয়। মোট ছয়টা ডিম। গোলগাল। পুষ্ট। ভারি সুন্দর দেখতে।

কিছুক্ষণ পর। শূকর-ছানার মা এলো ঘোঁত ঘোঁত করতে। সে-ও যাচ্ছে মেলায়। ব্যস্ত মুরগি মাকে জিগ্যেস করে,

ঘরে বসে একা একা কী কর? চল যাই। মেলা থেকে ঘুরে আসি। দুজনে গল্প করতে করতে যাওয়া যাবে।

মা-মুরগি উত্তর দেয়,

না গো। আমি যেতে পারছি না। ডিমে তা দিচ্ছি। এখন আমার একটুও সময় নেই। যাও বাছা, মেলা থেকে তুমিই ঘুরে এস গিয়ে।

মা-মুরগি ব্যস্ত। খুব বেশি ব্যস্ত। ঘুম নেই। খাওয়া-দাওয়ার কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। ডিম ফুটে ছানা বের না হওয়া পর্যন্ত কোনোই ছুটিছাঁটা নেই তার।

এক, দুই, তিন...। ছয় ছয়টা ডিম। গোলগাল। ভারি সুন্দর দেখতে। ডিমের ভিতরে ছানারা ঘুমিয়ে আছে। খুব তাড়াতাড়িই ঘুম ভাঙবে তাদের। জন্ম হবে ওদের।

একটা গাভীকে দেখা গেল পথে। মা-গরুটা রওনা দিয়েছে মেলার দিকে। এক পাক ঘুরে আসবে। শুধায় সে,

কী গো মুরগি-মা? কেমন চলছে তোমার দিনকাল? চল না, মেলা থেকে বেড়িয়ে আসি একটুখানি। অনেক দিন কোথাও যাওয়া হয় না। চল দুজনায় গল্পগাছা করতে করতে মেলায় যাই।

মা-মুরগি মিষ্টি হেসে জবাব দেয়,

না গো। আমার যাওয়া চলবে না। দেখছ না, ডিমে তা দিচ্ছি। বাচ্চা জন্মানোর সময় ঘনিয়ে এলো বলে। এ সময়টা তো কি কোথাও যাওয়া যায়? তুমি একা একাই যাও। পরে আবার কোনো সময় একসঙ্গে যাওয়া যাবে।

০২.

মিনিট যায়। ঘণ্টা পেরোয়। দিন গড়িয়ে রাত আসে। রাত পেরিয়ে ভোর। তারপর দুপুর।

মা-মুরগি ভাবে,

আর কতক্ষণ? কখন আমার বাচ্চারা ডিমের খোসা ভেঙে বের হয়ে আসবে? কখন ওরা আমাকে মা বলে ডাকবে? কখন ওদের নিয়ে ছোটাছুটি করব? দানাপানি খুঁটে খুঁেট খাব সবাই মিলে?

কী যেন ঘটছে মা-মুরগি বুঝতে পারে, কিছু একটা হতে চলেছে। কী হচ্ছে এসব? ভাবনায় পড়ে যায় সে।

এক, দুই, তিন। চার, পাঁচ, ছয়। ডিমের খোলস ভাঙছে। একটার পর একটা। কী আনন্দ। বাচ্চারা জন্ম নিয়েছে। চি চি করে ডাকছে ওরা। কী সুন্দর। তুলতুলে গা। নরম শরীর। ছোট্ট ছোট্ট পা একেক জনের।

মা-মুরগির ঠোঁটে হাসি। মনটা বড় খুশি তার। এমন আনন্দ জীবনে কখনো পায়নি।

হঠাৎ মনে পড়ল, আরে মেলা চলছে না? মা-ছাগল, মা-শূকর, মা-গরু সবাই গেছে সেই মেলায়। আমরাও তো যেতে পারি। দল বেঁধে। আমরা মোট সাতজন।

তাই হলো। সাতজন মিছিল করে সোজা চলে গেল সেই মেলায়। কী যে ভালো লাগল দল বেঁধে মেলায় ঘুরতে। সে মজার কোনো তুলনা নেই। সবাই মিলে হইচই করল। অনেক ঘোরাফেরা করা হলো মেলায়। ছানাদের জন্য বেশ কিছু খেলনাপাতি, খাবার-দাবার কেনা হলো।

মা-মুরগিকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। দিতে হয়েছে ধৈর্যের পরীক্ষা। সফল হয়েছে তা। এখন আর কোনো কষ্ট নেই। অপেক্ষারও দরকার নেই আর। ছানাদের নিয়ে এখন তার মহাআনন্দে দিন কাটে।

 

- স্লোভেনিয়ার রূপকথা অবলম্বনে...

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর