ফুলপুর গ্রামে বাবলুর বাস। যখন তার বয়স তিন বছর তখন তার মা মারা যায়। খেয়ে না খেয়ে দুঃখে-কষ্টে কাটে তার জীবন। ঘরে সৎমা থাকায় বাবা থেকেও যেন নেই। সৎমায়ের গালমন্দ খেয়ে প্রায়ই সে বাড়ি থেকে একটু দূরে সাগর পাড়ে বসে থাকে। নীল সাগরের ঢেউ দেখে আর মায়ের কথা ভাবে। মায়ের চেহারা তার মনে নেই তাই মায়ের মুখটিও তার মনে পড়ে না। একদিন বিকালে সৎমায়ের বকুনি খেয়ে নীল সাগরের তীরে মন খারাপ করে বসে আছে। হঠাৎ তার কানে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে। সে এদিক ওদিক তাকায়। দূরে দেখতে পায় বালির মধ্যে কী যেন নড়াচড়া করছে। সে দৌড়ে সেখানে যায়। সেখানে গিয়ে যা দেখলো তাতে তার চক্ষু স্থির। সে দেখলো অপরূপা সুন্দরী একটি মেয়ে। ওপরের অংশ মানুষের মতো দেখতে হলেও নিচের অংশ মাছের লেজের মতো। সে ভয় পেয়ে থমকে দাঁড়ায়। তখন মেয়েটি বলে, ভয়ের কিছু নেই। আমি মৎস্যকুমারী। আমি বালির মধ্যে আটকে পড়েছি। তুমি আমাকে এ বিপদ থেকে রক্ষা করো। আমি তোমাকে অনেক উপহার দিব। তুমি যা চাইবে তাই এনে দেব। এ কথা শুনে বাবলু মনে সাহস পেল। সে বালি খুঁড়ে মৎস্যকুমারীকে বের করে আনল। তখন মৎস্যকুমারী বললো, তোমার নাম বাবলু। তুমি মা হারা আট বছরের বালক। তোমার জন্য আমি কী করতে পারি বলো। বাবলু বলে, তুমি দেখি সবই জানো। আমার জন্য কিছু করতে হবে না। আমাকে শুধু পেট পুরে খেতে দাও। তখন মৎস্যকুমারী হেসে বলে, ঠিক আছে এই নাও আমার উপহার। এই বলে সে একটি নীল রঙের পাথর বাবলুর হাতে দিল। তারপর বললো, তোমার যা খেতে মনে চায় তার নাম মনে কর পাথরে ঘষা দিলেই তা তোমার সামনে চলে আসবে। কিন্তু সাবধান, খাবার বাদে অন্য কিছু চাইলে বিপদ হবে। আর প্রয়োজনের বেশিও চাওয়া যাবে না। এ কথা বলে মৎস্যকুমারী বিদায় নিল। বাবলু খুবই ক্ষুধার্ত। তাই সে মনের মতো খাবারের কথা মনে করে পাথরে ঘষা দিতেই নানা রঙের খাবার তার সামনে চলে এলো। বাবলু খুশি মনে তা খেয়ে নিল। এদিকে বাড়িতে পান থেকে চুন খসলেই বাবলুকে খেতে দেয় না। এতে বাবলু আর আগের মতো কান্নাকাটি করে না। বরং দিনে দিনে তার স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে দেখে সৎমায়ের সন্দেহ হয়। সে একদিন বিকালে গোপনে বাবলুর পিছু নিয়ে দ্যাখে বাবলু পাথরে ঘষা দিতেই কত মজার মজার খাবার হাজির হলো। তার লোভ হয়। পরের দিন সে বাবলুকে খুব আদর-যত্ন করে। বাবলু অবাক হয়ে তার সৎমায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে। সৎমা বলে, এমন করে কী দ্যাখছো বাপ? আমি যে তোর মা। বাবলু এতে খুব খুশি হয়। তখন বাবলুর সৎমা বলে, মায়ের কাছে কিছু লুকাতে নেই বাবা। তুমি কীভাবে খাবার পাও? আমাকে বলো। তখন বাবলু সব ঘটনা সৎমাকে বলে। সৎমা বলে, তুমি ছোট মানুষ। পাথরখানা হারিয়ে ফেলবে। ওটা আমার কাছে রাখো। সময় মতো নিয়ে নিও। বাবলু ভাবে, ঠিকই তো। এখন তো মা আমাকে খাবার দিবে। তাহলে আমার আর পাথরের দরকার হবে না। এটা মায়ের কাছেই থাকুক। সৎমা পাথর পেয়েই পাল্টিয়ে গেল। সে মনে মনে বলে, বোকা ছেলে! শুধু খাবার কেউ চায়? এই বলে সে সোনা, হীরা, জহরত চেয়ে পাথরে ঘষা দিতেই মৎস্যকুমারী হাজির হয়ে তাকে পটকা মাছ বানিয়ে দিলো। আর বাবলুকে তার পাথর ফিরিয়ে দিলো। যাওয়ার সময় বলে গেলো, অতি লোভ আর খারাপ স্বভাবের কারণে সে এই পটকা মাছ হয়েই থাকবে। আর বাবলু যখন তুমি কর্মক্ষম হবে তখন এ পাথর আর কাজ করবে না। তবে যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে মনে করলেই আমি হাজির হবো। কিন্তু এখন থেকেই তুমি একটু একটু করে কর্ম শিখতে থাকো। এই বলে মৎস্যকুমারী অদৃশ্য হয়ে গেলো।