রাজকন্যা তারামণি। তার মেঘ কালো চুল। হরিণী চোখ। ঝিকিমিকি তারার মতো আলোকিত মুখ। সবাই রাজকন্যা তারামণির প্রশংসা করে। তবু রাজকন্যার মনে দুঃখ! রাজকন্যা কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে রাজাকে বলল, হে শ্রদ্ধেয় বাবা, আমি রাজকন্যা তারামণি। অথচ আমার কপালে তারার টিপ নেই। তুমি আমাকে তারার টিপ এনে দাও। রাজা আকরাম শেখ চিন্তিত মুখে বললেন, আমার সোনা মেয়ে, রাজকন্যা তারামণি। তারা আকাশে থাকে। ওই টিপ তুমি কী করে কপালে পরবে? কী করেই বা তোমায় এনে দেবো? রাজকন্যা তারামণি দুঃখী দুঃখী মুখ করে বলল, প্রিয় বাবা, তুমি আমাকে ভালোবাসো। আমার মা নেই। তুমি আমার মা, তুমি আমার বাবা। আমি জানি তুমি আমার জন্য সব করতে পারো। আকাশের তারাও এনে দিতে পারো।
রাজা আকরাম শেখ চিন্তায় পড়ে গেলেন। রাজকন্যা তারামণির কোনো ইচ্ছাই তিনি অপূর্ণ রাখেননি। রাজার হিতাকাক্সক্ষী, শুভাকাক্সক্ষীগণ রাজাকে আশ্বস্ত করলো। বিভিন্ন রাজ্যের নামি-দামি জহুরি হাজির করল। রাজকন্যা তারামণির সামনে তারার টিপ রাখা হলো। সেই টিপ দেখে তারামণি চেঁচিয়ে উঠল। বাবা, আমি আকাশের তারার টিপ চেয়েছি। এগুলো হীরের টিপ। আমার লাগবে না। বাবা, তুমি আমার সঙ্গে মিথ্যাচার করেছো। রাজা আকরাম শেখের মন খারাপ হয়ে গেল। সারাক্ষণ ভাবতে লাগলেন। কী করে রাজকন্যাকে তারার টিপ এনে দেবেন। ভাবতে ভাবতে রাজা অস্থির হয়ে উঠলেন।
রাজকন্যা তারামণি নদীর ধারে বসে আছে। দাসীরা হাতজোড় করে বলল, হে প্রিয় রাজকন্যা, ক্ষমা করুন। সন্ধ্যা নেমেছে। প্রাসাদে ফিরে চলুন। রাজকন্যা তারামণি রাগী স্বরে বলল, তোমরা ফিরে যাও। আমাকে একা থাকতে দাও। দাসীরা মুখ ভার করে চলে গেল। ফুটফুটে চাঁদ উঠেছে। ফুরফুরে বাতাস বইছে। নদীর ঢেউয়ের সঙ্গে তারা খেলা করছে। রাজকন্যা তারামণি আনন্দে চিৎকার দিলো। আরে ওই তো! নদীর জলে তারার টিপ। আমি টিপ ধরবো। টিপ পরবো। রাজকন্যা তারামণি নদীর জলে ঝাপ দিলো। ওমনি তলিয়ে যেতে লাগল। রাজকন্যা চিৎকার দিলো। কে কোথায় আছো? আমাকে বাঁচাও। দাসীরা ছুটে এলো। রাজকন্যাকে উদ্ধার করলো।রাজকন্যা তারামণি ভুল বুঝতে পারল। রাজার কাছে কাকুতি মিনতি করলো। হে প্রিয় বাবা, আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি ভুল করেছি। আকাশের তারা এনে দেওয়া যায় না। তবু অসম্ভব চাওয়া। তোমার কাছে চেয়েছি। কতই না কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। রাজা রাজকন্যা তারামণিকে বুকে টেনে নিলেন। রাজকন্যা তারামণি ঝলমলে হাসি দিলো।
রাজকন্যা তারামণি শয়নকক্ষে আরাম করছে। হঠাৎ অনুভব করলো, কপালে কিছু একটা নড়াচড়া করছে। রাজকন্যা তারামণি আয়নার দিকে তাকালো। ওমনি চমকে উঠল! আমার কপালে দেখি আকাশের ঝিকিমিকি তারা। কিন্তু কোথা থেকে এলো? হে ঝিকিমিকি তারা, তুমি যেখান থেকেই এসে থাকো না কেন, সেখানে ফিরে যাও। আমি তোমার জন্য বাবাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। ঝিকিমিকি তারা মন খারাপ করে বলল, হে প্রিয় রাজকন্যা, তুমি তোমার ভুল বুঝতে পেরেছো। সেজন্য তারা পরি খুশি হয়ে আমাকে তোমার জন্য উপহার পাঠিয়েছেন। তুমি আমাকে গ্রহণ করো। রাজকন্যা তারামণি বলল, হে ঝিকিমিকি তারা, তুমি তোমার দেশে ফিরে যাও। তারা পরিকে আমার ধন্যবাদ জানাও। আর বলো, আমি অসম্ভব কিছু চাই না। ঝিকিমিকি তারা মিষ্টি হেসে বলল, ঠিক আছে রাজকন্যা। আমি ফিরে যাচ্ছি। তুমি ভালো থেকো। সবাইকে ভালো রেখো।