শুক্রবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
গল্প

মেসি বনাম নেইমার

রণজিৎ সরকার

মেসি বনাম নেইমার

বাবার ডান হাতে ফুটবল বাঁ হাতে পৃথিবীর মানচিত্র। আমরা দুই ভাই দাঁড়িয়ে আছি। বাবা কিছুই বলছেন না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছেন। আমি ভাবলাম, বাবা কি ধৈর্য পরীক্ষা নিচ্ছেন। আমরা দুই ভাই একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। কিন্তু পছন্দের জিনিস নেওয়ার সাহস পাচ্ছি না। আর বাবার উদ্দেশ্য কী তা বুঝতে পারছি না। বাবার অনুমতি ছাড়া কখনো কিছু করি না আমরা। সেজন্য দুই ভাইয়ের কেউ সাহস পাচ্ছি না। হঠাৎ মা এসে বললেন, ‘এভাবে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’

‘মনন আর রণন তো বিরক্ত হচ্ছে। দুটোই তো ফুটবলের মতো দেখাচ্ছে, কাকে কোনটা দেবে, দিয়ে দাও।’

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘মনন, তুমি পৃথিবীর মানচিত্রটা নাও।’ মানচিত্রটা নেওয়ার কথা শুনে আমার মন খারাপ হলো। এখন বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলছে। আর আমাকে এনে দিচ্ছেন পৃথিবীর মানচিত্র। মনে করেছিলাম আমি বড়, তাই আমাকেই ফুটবলটা দেবেন বাবা, কিন্তু না মানচিত্র নিতে বললেন।

বাবা আমার চেহারা দেখে বুঝতে পারলেন। আমার ভীষণ মন খারাপ হয়েছে। তাই তিনি বললেন, ‘মানচিত্রটা টেবিলের ওপর রাখ।’ আমি রাখলাম। এবার বাবা বললেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলে তোমার প্রিয় দলের দেশটার ম্যাপ খুঁজে বের কর।’

বাবার কথা শুনে একটু অবাক হলাম। তারপর ম্যাপে খুঁজে বের করলাম ‘ব্রাজিল’ দেশের। বাবাকে বললাম, বাবা বাবা এই যে আমার প্রিয় দল, ফুটবলের দেশ ব্রাজিল। বিশ্বকাপে আমার প্রিয় দল ব্রাজিল।

বাবা সঙ্গে সঙ্গে আমার একটা নাম রাখলেন। বললেন, “বিশ্বকাপ ফুটবল চলাকালীন পর্যন্ত তোমার নাম ‘নেইমার’।”

আমি খুশি হয়ে বললাম, ‘বাবা, নেইমারের ১০ নম্বর হলুদ রঙের জার্সি আমাকে দিতে হবে।’

বাবা বললেন, ‘চিন্তা কর না। আমি ব্যবস্থা করে নিয়ে এসেছি।’

আমি খুশিতে হাততালি দিতে দিতে বললাম, ‘ভেরি গুড, ভেরি গুড, থ্যাংকু, থ্যাংকু।’

আমার ছোট ভাই রণন এত সময় বুঝে গেছে তাকেও হয়তো পৃথিবীর মানচিত্র থেকে প্রিয় ফুটবল দলের দেশের ম্যাপ খুঁজে বের করতে বলবেন বাবা। আমার ধারণা ঠিক হলো। বাবা বললেন, ‘রণন, তোমার প্রিয় ফুটবল দলের দেশের নাম ম্যাপ দেখে খুঁজে বের কর।’

রণন খুঁজে বের করে বলল, ‘বাবা, বাবা, এই আর্জেন্টিনা।’

বাবা বললেন, “গুড, ভেরি গুড, আজ থেকে তোমার নাম ‘মেসি’।”

মা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, ‘তা হলে আমাদের বাসায় বিশ্বকাপ ফুটবল উপলক্ষে মেসি আর নেইমার চলে এসেছে।’

মায়ের কথা শুনে বাবা বললেন, ‘তুমি ঠিক ধরেছ।’

‘মেসি-নেইমারের জার্সি কোথায়?’ মায়ের কথা শোনামাত্র বাবা আমাকে ব্রাজিলের জার্সি আর রণনকে আর্জেন্টিনার জার্সি দিলেন। মা প্রথমে আমাকে পরিয়ে দিলেন। তারপর রণনকে পরিয়ে দিলেন। আমরা জার্সি পরা শরীর দেখতে দেখতে হঠাৎ দেখি মা পরেছেন ইতালির জার্সি আর বাবা পরেছেন বর্তমান চ্যাম্পিয়ান ফ্রান্সের জার্সি। একটু পর আমাদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে কয়েকটা ছবি তুললেন মা। মা সেই ছবি ফেসবুকে ‘আমাদের বাসায় মেসি আর নেইমারের আগমন। আপনারা এসে তাদের সঙ্গে সেলফি তুলতে পারেন। কোন টাকা-পয়সা লাগবে না। এলে চা-বিস্কুট ফ্রি পাবেন।’ এ ক্যাপশন লিখে পোস্ট করলেন।

মায়ের এমন ক্যাপশন দেখে অনেকেই লাইক কমেন্টেস করতে লাগল। তাই দেখে বাবা আমাদের দুজনকে নিয়ে ফেসবুক লাইভে গেলেন। লাইভে আমি বললাম, ‘আমি নেইমার বলছি, বিশ্বকাপ শেষে আমি বাংলাদেশে আসতে চাই। আপনারা আমাকে আনার ব্যবস্থা করুন।’

আমার কথা শেষ না হতেই রণন বলল, ‘আমি মেসি বলছি, আমি বাংলাদেশে ২০১১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এসেছিলাম। আমার ভক্তদের ব্যবহার খুব ভালো লেগেছে। দিন দিন বাংলাদেশে আমার ভক্ত বাড়ছে। আমি আবারও যেতে চাই। তবে একা নয়, আমার বন্ধু নেইমারকে সঙ্গে নিয়ে যেতে চাই। আপনারা আমাদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করুন। আমরা দুজন একসঙ্গে যেতে চাই কারণ সাফজয়ী নারী ফুটবলারদের সঙ্গে সেলফি তুলতে চাই। ছোটবোনদের কিছু পরামর্শ দিতে চাই। প্লিজ তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা করুন। বিশ্বকাপ শেষেই যেন আসতে পারি বাংলাদেশে।’

রণনের কথা শুনে আমি, বাবা-মা অবাক হয়ে হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ফেসবুক লাইভে বিভিন্ন রকমের লাইক কমেন্টেস আসতে লাগল। বাবা-মা সহ ফেসবুক লাইভের কমেন্টেস পড়ে মজা পেতে লাগল সবাই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর