এক ছিল ছোট্ট রিমু, যার ভীষণ ইচ্ছা ছিল পৃথিবী ঘুরে দেখা। তার এই ইচ্ছাটা কোনো সাধারণ ইচ্ছা ছিল না। রিমু জানত যে, তার স্বপ্ন পূরণের জন্য অনেক সাহস ও ধৈর্যের প্রয়োজন হবে। একদিন সকালে রিমু ঠিক করল যে, সে আজই তার অভিযাত্রা শুরু করবে। সে তার ছোট্ট ব্যাগটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। ব্যাগে ছিল কিছু খাবার, পানি আর একটা মানচিত্র। রিমুর মনে ছিল উত্তেজনা ও কৌতূহল। সে ভেবেছিল, ‘আজ থেকে আমার নতুন জীবন শুরু হলো।’ রিমু প্রথমে গেল এক গভীর বনে। সেখানে সে দেখল বিভিন্ন রকমের পশুপাখি। গাছপালার সবুজে ঢাকা বনে পাখিদের মিষ্টি গান শুনে তার মন ভরে গেল। হঠাৎ সে শুনতে পেল একটা মৃদু কান্নার শব্দ। সে খুঁজতে লাগল এবং দেখতে পেল একটা ছোট্ট পাখি, যে গাছ থেকে পড়ে গেছে। রিমু তাকে নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে আবার গাছের বাসায় ফিরিয়ে দিল। পাখিটি খুশিতে চিৎকার করে উঠল আর বলল, ‘ধন্যবাদ রিমু! তুমি খুব সাহসী।’ পাখিটি তাকে একটি বিশেষ ফুলের বীজ দিল, যা নাকি সৌভাগ্য এনে দেয়। রিমু সেই বীজটি তার ব্যাগে রেখে দিল। এরপর সে চলতে শুরু করল আরেকটি জায়গার দিকে। বনের পথ পেরিয়ে সে পৌঁছাল এক ছোট্ট নদীর ধারে। নদীটি ছিল স্ফটিক স্বচ্ছ, আর তার শীতল পানি রিমুর পা ছুঁয়ে দিল। নদী পার হওয়ার জন্য কোনো সেতু ছিল না। রিমু চিন্তায় পড়ে গেল। সে ভাবতে লাগল কীভাবে পার হবে। তখন সে দেখতে পেল একটি নৌকা। নৌকাতে বসে থাকা মানুষটি তাকে বলল, ‘তুমি কি নদী পার হতে চাও? আমি তোমাকে সাহায্য করতে পারি।’ রিমু আনন্দে বলল, ‘ধন্যবাদ! তুমি খুব উপকার করেছ।’ নৌকাতে উঠে রিমু নদী পার হলো। নদীর মাঝখানে এসে সে দেখতে পেল পানিতে তার নিজের প্রতিবিম্ব। তার মুখে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। এভাবে সে নদী পার হয়ে রিমু পৌঁছাল এক মিষ্টি গ্রামের দিকে। গ্রামবাসীরা তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের বাড়িতে আপ্যায়ন করল। রিমু তাদের সঙ্গে গল্প করতে করতে জানতে পারল, এই গ্রামে একটা রহস্যময় জায়গা আছে যেখানে কেউ যেতে সাহস করে না। রিমু ঠিক করল, সে সেই জায়গাটা দেখে আসবে। রাতে গ্রামবাসী তাকে সেই রহস্যময় জায়গার গল্প শোনাল। তারা বলল, ‘সেই জায়গায় নাকি এক দৈত্য থাকে, যে কোনো মানুষকে দেখতে পেলে ধরে নিয়ে যায়।’ রিমু আরও বেশি উৎসাহী হলো। তার মনে হলো, ‘আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারি।’ পরের দিন সকালে সে রওনা দিল সেই রহস্যময় জায়গার দিকে। অনেক খুঁজে খুঁজে সে জায়গাটা পেয়ে গেল। সেখানে সে দেখল একটি পুরনো দুর্গ, যা গাছপালায় ঢাকা। দুর্গের চারপাশে ভৌতিক পরিবেশ, বাতাসে ছিল এক অজানা শিহরণ। রিমু সাহস নিয়ে ভিতরে ঢুকল। সে দেখতে পেল অনেক প্রাচীন ধনসম্পদ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ধুলায় ঢাকা পড়েছে। রিমু ভাবল, ‘এগুলো তো গল্পের মতো।’ কিন্তু তার মনের সাহস তাকে এগিয়ে নিয়ে গেল। সে ভিতরে ঢুকে দেখতে পেল একটি বড় কক্ষ, যেখানে ছিল এক বিশাল আয়না। আয়নার সামনে এসে রিমু দেখে তার নিজের প্রতিবিম্ব, কিন্তু সেই প্রতিবিম্বটি হঠাৎ জীবিত হয়ে ওঠে। রিমু চমকে ওঠে। সে বুঝতে পারল, এটাই সেই রহস্যময় দৈত্য।
দৈত্যটি রিমুকে বলল, ‘তুমি কি জানো আমি কে? আমি তোমার নিজের ভয়। তুমি যদি আমাকে পরাজিত করতে পার, তবে তুমি পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় যেতে পারবে।’ রিমু সাহস নিয়ে বলল, ‘আমি তোমাকে ভয় পাই না। আমি আমার স্বপ্ন পূরণ করতে চাই।’ সে বারবার বলতে থাকল, আর আয়নার দৈত্যটি ধীরে ধীরে মিলিয়ে গেল এবং আয়নার মধ্যে থেকে বেরিয়ে এলো একটি প্রাচীন বই। বইটি খুলে রিমু দেখল, সেখানে পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গার গল্প লেখা আছে। রিমু আনন্দে সেই বইটি নিয়ে বাড়ির পথ ধরে। গ্রামে ফিরে এসে সে সবাইকে তার অভিযাত্রার গল্প শোনায়। গ্রামবাসীরা তার সাহসিকতা দেখে অবাক হয় এবং তাকে অনেক প্রশংসা করে। রিমুর হাতে এখন ছিল আরও অনেক নতুন নতুন জায়গার গল্প। সে জানত, তার সাহস আর ধৈর্য তাকে সবসময় নতুন নতুন অভিজ্ঞতার দিকে নিয়ে যাবে। তার এই রোমাঞ্চকর অভিযাত্রা ছিল শুধু শুরু। প্রতিটি দিন ছিল নতুন রোমাঞ্চের প্রতিশ্রুতি। এভাবেই ছোট্ট রিমুর রোমাঞ্চকর অভিযাত্রার গল্প শেষ হলো, কিন্তু তার নতুন নতুন অভিযান শুরু হলো সেই বইয়ের পাতা থেকে। রিমু জানত, পৃথিবীজুড়ে আরও অনেক রহস্য অপেক্ষা করছে তার জন্য। আর সে ছিল প্রস্তুত, তার সাহস আর ধৈর্যকে সঙ্গে নিয়ে সবকিছু মোকাবিলা করার জন্য।