দেশের রপ্তানি আয়ের চেয়ে অনেক দ্রুতগতিতে বাড়ছে আমদানি ব্যয়। ফলে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি, যা দেশের বৈদেশিক খাতে নতুন করে চাপ তৈরি করছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই ঘাটতি যদি নিয়ন্ত্রণে না আনা যায়, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদে টাকার মান কমে যেতে পারে এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো হ্রাস পেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ থেকে মোট এক হাজার ১০৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে আমদানি হয়েছে এক হাজার ৬৮০ কোটি ডলারের পণ্য। ফলে তিন মাসে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৫৭১ কোটি ২০ লাখ ডলারে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঘাটতি ছিল ৪৬৪ কোটি ডলার। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে প্রায় ২৩ শতাংশ।
অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের অর্থনীতি এখনো অনেকটাই আমদানিনির্ভর। শিল্প উৎপাদনের জন্য কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি পণ্য আমদানির ওপর নির্ভরতা বেশি। অন্যদিকে বৈশ্বিক মন্দা ও প্রতিযোগিতার কারণে রপ্তানি আয় প্রত্যাশিত হারে বাড়ছে না। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানির ব্যয়ও বেড়ে গেছে, যা ঘাটতি আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে।
তারা বলছেন, বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। রপ্তানি খাতকে বহুমুখীকরণ করতে হবে। পোশাকশিল্পের পাশাপাশি আইটি, ওষুধ, কৃষিপণ্য ও হালকা প্রকৌশল খাতে রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাস পণ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এ ছাড়া প্রবাস আয়ের প্রবাহ বাড়াতে ব্যাংকিং চ্যানেলকে আরো আকর্ষণীয় করা, বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা এবং স্থানীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, রপ্তানি বৃদ্ধি ও আমদানি নিয়ন্ত্রণ- এই দুই দিকেই সুষম পদক্ষেপ নিলে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে এবং দেশের বৈদেশিক খাত আবারও স্থিতিশীলতা ফিরে পাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্য যেখানে উদ্বৃত্ত ছিল, সেখানে চলতি অর্থবছরে চার কোটি ৮০ লাখ ডলার ঘাটতি বা ঋণাত্মক হয়ে গেছে। সামগ্রিক লেনদেন ভারসাম্যে (ওভারঅল ব্যালান্স) ঘাটতি থেকে উদ্বৃত্ত হয়েছে। গত বছর জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে এই সূচকে ঘাটতি ছিল ১৪৮ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরে তা ৮৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার উদ্বৃত্ত আছে। তথ্য মতে জুলাই-সেপ্টেম্বর, এই তিন মাসে ৭.৫৯ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা, যেটি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৫.৯ শতাংশ বেশি। আগের বছরের একই সময়ে মোট রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ৬.৫৪ বিলিয়ন ডলার।
দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) বেড়েছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তিন মাসে ১১ কোটি ৪০ ডলারের এফডিআই পেয়েছিল বাংলাদেশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে তা বেড়ে ৩১ কোটি ৮০ ডলারে উঠেছে। তবে আলোচিত দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) নেতিবাচক অবস্থায় আছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল, তার চেয়ে বেশি চলে গেছে। এর আগের অর্থবছরে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৫০ লাখ ডলার; এখন তা (ঋণাত্মক) চার কোটি ২০ লাখ ডলার।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, এই মুহূর্তে দেশের ভোগ্যপণ্য আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে রমজান মাস শুরু হতে যাচ্ছে। রমজাননির্ভর পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখার জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এর জন্য বিপুল পরিমাণ এলসি খোলা হয়েছে। ফলে রপ্তানির বিপরীতে আমদানির পরিমাণটা বেশি। এর কারণে কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালান্স ও ট্রেড ব্যালান্স বা বাণিজ্য ঘাটতি দুটিই বড়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ