শনিবার, ২২ জুন, ২০১৩ ০০:০০ টা
ধর্ম: বায়তুল মোকাররমের খুতবা

আল্লাহর তাৎপর্যপূর্ণ ৫টি রাতের অন্যতম শবেবরাত

প্রফেসর মাওলানা মো. সালাহ্উদ্দিন
(খতিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ)

হে বনি আদম! আমি বিস্ময় প্রকাশ করছি সেই ব্যক্তির প্রতি; ফুরিয়ে গেছে যার জীবন অথচ সে কাঁদছে তার জন্য আর করছে না তার ক্ষতিপূরণের কোনো চিন্তা। তার সময় ফুরিয়ে আসছে অথচ বাকি সময়টুকুতে মশগুল হচ্ছে না আল্লাহর ইবাদত বন্দেগিতে। আর প্রদান করছে না তার কোনো প্রকার ক্ষতিপূরণ। যে ব্যক্তির নেকির পাল্লা হালকা সে তা কেন ভারী করছে না মোবারক রাত জেগে? তুমি কি শোননি? হাশরের দিন যার নেকির পাল্লা হালকা হবে তাকে বলা হবে, তুমি কি রজবের প্রথম রাতে আর শাবানের মাঝের রাতে কোথায় ছিলে? ওহে অধম! (জেনে রাখ) পাঁচটি রাতে দোয়া কবুল হয় : রজবের প্রথম রাতে, শাবানের মাঝের রাতে, দুই ঈদের রাতে এবং কদরের রাতে। সেই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যে এমন সাথী গ্রহণ করেছে, যে সাহায্য করেছে তার ইবাদত-বন্দেগিতে আর শরিক হয়েছে তার ইবাদতে। যদি সে ভুল করে; তবে তাকে সে স্মরণ করিয়ে দেয়। যদি সে অমনোযোগী হয়ে পড়ে; তবে তাকে সে সচেতন করে দেয়। যদি সে ত্রুটি করে; তবে তা সে পূরণ করে দেয়। যদি ক্লান্ত হয়ে পড়ে; তবে সহযোগিতা করে। যদি সে কোনো ইবাদত তরক করে; তবে তাকে তিরস্কার করে। আর ধন্য সে ব্যক্তি, যে লাভ করেছে মুবারক রাত জাগরণের সৌভাগ্য। আল্লাহর কসম! এ বারাত গোনাহ থেকে পরিত্রাণ লাভের রাত। ক্ষমা ও অনুগ্রহের রাত। তওবা ও অনুশোচনার রাত। জিকির ও নামাজের রাত। সদকা ও নেক আমলের রাত। অতএব, তোমরা গ্রহণ কর এ রাতকে অত্যন্ত সাহসিকতা ও হিম্মতের সঙ্গে। কেননা এ রাতে সমুন্নত করা হচ্ছে কত মর্যাদা, দূর করা হচ্ছে কত বিপদাপদ ও বিপর্যয়, কবুল করা হচ্ছে কত তওবা, পূরণ করা হচ্ছে কত আশা। আল্লাহতায়ালা কসম করে বলেছেন : হা-মীম স্পষ্ট কিতাবের কসম!! নিশ্চয় আমি ইহা নাজিল করেছি এমন এক মোবারক রাতে; যার বরকত হলো রহমত অবতরণের মাধ্যমে আর দোয়া কবুলের মাধ্যমে। এ রাতকে শবেবরাত ও শবে রহমত নামে অভিহিত করার তাৎপর্য হলো- এ রাতে রিজিক ও সম্পদ বণ্টন করা হয়, হায়াত বাড়িয়ে দেওয়া হয় ও কমানো হয়। শাবানের মাঝের রাতে আল্লাহতায়ালা বিকশিত হন এবং আহ্বান করতে থাকেন। ক্ষমা প্রার্থনাকারী কেউ আছ কি? আমি ক্ষমা করব। আছ কি কেউ তওবাকারী? আমি কবুল করব। আছ কি কেউ আবেদনকারী? তার আবেদন আমি কবুল করব। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে- এ রাতে আল্লাহতায়ালা মাফ করে দেন সব উম্মতের গোনাহ্-খাতা; কিন্তু সাত শ্রেণীর মানুষের জন্য এ রাতে কোনো প্রকার অংশ থাকে না। ১. জাদুকর ২. শরাবখোর ৩. জিনাকারী ৪. আত্দীয়তা ছিন্নকারী ৫. মা-বাবার নাফরমান ৬. পরনিন্দাকারী ৭. কৃপণ; হিংসুক যে তিন দিনের বেশি অপর মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রাখে। এদের কখনো মাফ করা হয় না। হে আমার বন্ধুরা। আপনারা দান-খয়রাত করুন। ফকির-মিসকিন, বিধবা ও এতিমদের জন্য, ফলে আপনার প্রবেশাধিকার লাভ করবেন দারুসসালাম নামক জান্নাতে। আমরা মহান আল্লাহ ও মাওলায়ে করিমের দরবারে প্রার্থনা করছি যে, তিনি যেন দয়া করেন আমাদের প্রতি আর মৃত্যু দান করেন আমাদের মুসলমান রূপে। আর ক্ষমা করে দেন আমাদের তাঁর মহানুগ্রহে যেন আমাদের দোয়া কবুল করে নেন। বস্তুত, তিনিই পরম করুণাময়। সব প্রশংসা সেই মহান আল্লাহর জন্য; যিনি সমগ্র সৃষ্টিজগতের পালনকর্তা। আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি মহান আল্লাহর দরবারে বিতাড়িত শয়তান থেকে। পরম করুণাময় ও মহাদয়াময় আল্লাহর নামে আমি শুরু করছি। হা-মীম-স্পষ্ট কিতাবের কসম! নিশ্চয় এটা নাজিল করেছি এক মুবারক রাতে। আল্লাহতায়ালা আমাদের এই তাৎপর্যপূর্ণ ৫টি রাত পালন করার তাওফিক দিন। (আমিন)

 

 

সর্বশেষ খবর