রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা
খোলা কলাম

দুর্নীতিতে রাজনৈতিক দল ও পুলিশ যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন!

কাজী সিরাজ

দুর্নীতিতে রাজনৈতিক দল ও পুলিশ যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন!

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক জরিপ বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলকে ধসিয়ে দিয়েছে। রিপোর্টে দেখা গেছে, বাংলাদেশের ৯৩ শতাংশ মানুষের ধারণা, দেশের সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে রাজনৈতিক দল ও পুলিশ_ যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন! ৮৯ শতাংশ মানুষের ধারণায় এর পরের স্থান, অর্থাৎ দুর্নীতিতে তৃতীয় অবস্থান বিচার ব্যবস্থার। গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার ২০১২ শীর্ষক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে যে সব মানুষের ভেতর জরিপ চালানো হয় তাদের ৬০ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, দেশে দুর্নীতি বেড়েছে। ২০১০ সালে চালানো জরিপে দেশে দুর্নীতি বাড়ার কথা বলেছিল ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা। ৫৮ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সেবা পাওয়ার একমাত্র পথ ঘুষ। গত ৯ জুলাই মঙ্গলবার ব্র্যাক সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টিআই'র এ প্রতিবেদন প্রকাশকালে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, গ্লোবাল করাপশন ব্যারোমিটার (জিসিবি) একটি বিশ্বব্যাপী জনমত জরিপ। এতে দুর্নীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা, অভিজ্ঞতা ও মতামত তুলে ধরা হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) ২০০৩ সাল থেকে এই জরিপ করছে। পাঠকদের এটা জানানো কর্তব্য মনে করছি যে, প্রতিবেদনটি কারও মনগড়া প্রতিবেদন নয়। টিআই একটি দায়িত্বশীল সংস্থা হিসেবে ইতোমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে ভুল-ভ্রান্তির কথা কেউ কেউ বলেছেন, কিন্তু কাউকে ডিফেইস করার উদ্দেশ্য নিয়ে পরিকল্পিতভাবে কিছু করার দালিলিক কোনো অভিযোগ এ পর্যন্ত কেউ উত্থাপন করেছে বলে জানা নেই। তবে হ্যাঁ, টিআই'র প্রতিবেদন যাদের কায়েমি স্বার্থে আঘাত হেনেছে, তারা এর বিরুদ্ধে চেঁচিয়েছে। টিআই এবার বিশ্বের ১০৭টি দেশের ১ লাখ ১৪ হাজার ১৭০ জনের ধারণা ও অভিজ্ঞতার ওপর এই জরিপ চালিয়েছে। বাংলাদেশে টিআই ও টিআইবি যৌথভাবে এই জরিপ করে। এ বছরের (২০১৩) ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে ৬৪ জেলার গ্রাম ও শহরের ১ হাজার ৮২২টি খানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উত্তরদাতাদের বয়স ছিল ১৮ বছর ও তার বেশি। এ ধরনের জরিপের প্রথাগত পদ্ধতি ও বিশ্বমান বজায় রেখেই জরিপ চালানো হয়েছে। যে ধারণাটি টিআই প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে, কোনো ব্যক্তি বা মহল সে ব্যাপারে আরও ব্যাখ্যা বা আরও স্পষ্টকরণ দাবি করতে পারেন, কিন্তু ধারণাটি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে গেলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা মহলই প্রশ্নবিদ্ধ হবেন।

দুই.

বাংলাদেশে রাজনৈতিক দল, পুলিশ ও বিচার বিভাগ দুর্নীতির শীর্ষে কথাটা শুনতে কেমন লাগে। গত ১০ জুলাই সংবাদ মাধ্যমে টিআই'র প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পর টিআই এবং এর বাংলাদেশ অংশ টিআইবি সম্পর্কে চিহ্নিত মহল থেকে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানানো হবে, এটা অপ্রত্যাশিত নয়। বিষয়টা দেখতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ এই বিষয়টি কীভাবে নিয়েছেন তার ভিত্তিতে। যে তিনটি খাতের কথা বলা হয়েছে তিনটিই একটা দেশের জনস্বার্থ ও সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার শুধু সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক অধিকারই নয়, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত জন্মগত অধিকার নিশ্চিতকরণের দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ খাত। অভিযুক্ত তিনটি জায়গাই হচ্ছে সব দেশে মানুষের আশা-ভরসার স্থল। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশের মানুষ এখন যাবে কোথায়, কার কাছে? পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতির কথা অনেক আগ থেকেই মানুষ জানে। ব্রিটিশ আমলে জন্মলগ্ন থেকেই পুলিশের ভেতর দুর্নীতির চর্চা চলে আসছে। জন্মকালে পুলিশের কোনো বেতন ছিল না। নির্দিষ্ট একটি এলাকা বা অঞ্চলের জন্য নির্দিষ্ট ফি সরকারি ট্রেজারিতে জমা দিয়ে একেকজন 'কর্তাবাবু' দায়িত্ব নিতেন। তিনি তার পছন্দের লোকজন নিয়ে এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতেন। ডাকাত ধরলে প্রতিটির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ও উদ্ধারকৃত লুণ্ঠিত বা চুরি হওয়া মালামালের মূল্যের একটা ক্ষুদ্র অংশ পেতেন তারা। আর কিছু পেতেন না। কিন্তু তাতে কারও সংসার চলত না। আইনি ক্ষমতা ব্যবহার করে তখন তারা নিজেরাই নিজেদের ব্যবস্থা করতেন। ঊধর্্বতন কর্তৃপক্ষ দেখেও তা দেখত না। এই সুযোগে পুলিশে লোভী ও নষ্ট লোকের সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং দুর্নীতিও বেড়ে চলে তাদের মধ্যে। এই উপমহাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে এই সর্বনাশা প্রবণতায় ব্রিটিশ বেনিয়াদের কোনো ক্ষতি হয়নি, ক্ষতি যা হওয়ার তা হয়েছে এই উপমহাদেশের জনগণের। ব্রিটিশরা তাদের দেশের পুলিশ বাহিনীকে যেভাবে জনগণের আদর্শ সেবক হিসেবে গড়ে তুলেছে, ভারতীয় উপমহাদেশের পুলিশ বাহিনীকে সে আদলে গড়ে তোলেনি, গড়েছে ব্রিটিশদের স্বার্থ রক্ষক ও সেবাদানকারী হিসেবে। এ বাহিনী ব্যবহৃত হয়েছে ব্রিটিশ শাসকদের শোষণ ও নিপীড়নের হাতিয়ার হিসেবে। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশেও সেই পুলিশ বাহিনীরই উত্তরাধিকার বহন করছি। বলা হয়ে থাকে, বিপদে পড়ে পুলিশের কাছে গেলে সভ্য দেশে মানুষ সাহায্য পায়। বিপদ কাটে, আর আমাদের দেশে পুলিশের কাছে বিপদে সাহায্য চাইতে গেলে তার বিপদ বাড়ে। দুর্নীতির একটি বড় মাপের 'খাত' হিসেবে পুলিশের নাম এর আগেও এসেছে। তাতে তারা লজ্জা পায় বা পেয়েছে বলে পরবর্তীকালে তাদের কার্যক্রমে প্রমাণ হয়নি। পুলিশের ঘুষ-দুর্নীতি নিয়ে পাবলিক পারসেপশনও পরিষ্কার ও দৃঢ়। তাই দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান দখলকারীদের তিন ক্ষেত্রের মধ্যে পুলিশের নাম দেখে কেউ অবাক হয়নি। বিস্মিত ও হতবাক হয়েছে রাজনৈতিক দলের নাম দেখে। বিচার বিভাগের কোনো কোনো স্তরেও বিশেষ করে নিম্ন আদালতে দুর্নীতির অভিযোগ নতুন নয়। টিআইবিও এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে তাদের আগেকার বিভিন্ন প্রতিবেদনে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী মানুষেরও অনেক গুরুতর অভিযোগ আছে। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক নিম্ন আদালতের বিচারকদের উদ্দেশ্যে দুর্নীতি থেকে দূরে থাকার পৌনঃপুনিক আহ্বানও টিআইবির বক্তব্যের সত্যতার পক্ষেই দাঁড়ায়।

রাজনৈতিক দলের দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান দখল করাটা অনেকের কাছে বিস্ময়কর ঠেকলেও বাংলাদেশে এখন তা দৃশ্যমান। দল দুর্নীতি করে না, করে দল-সংশ্লিষ্টরা। রাজনীতি কোনো পেশা নয়, সেবার এক মহান ব্রত। অবিভক্ত ভারত, এমনকি পাকিস্তান আমলের রাজনীতির দিকে তাকালেও প্রমাণ মেলে, রাজনীতি ছিল ইবাদতের মতো একটি পবিত্র জিনিস। শুধু জেল-জুলুম সহ্য করাই নয়, দেশের জন্য অনেকে হাসতে হাসতে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলেছেন, জীবন দিয়েছেন। অনেকে অকৃতদার থেকেছেন আমৃত্যু_ দেশের কথা ভেবে, দশের কথা ভেবে। ঘর-সংসারে বাঁধা পড়লে দেশের কাজ হবে না, এটাই ছিল তাদের ভাবনা। অনেকে বিত্ত-বৈভব, সহায়-সম্পদ সব কিছু বিলিয়ে দিয়েছেন দেশ ও জনগণের জন্য। রাজনীতির সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তারা ছিলেন সমাজের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয়, সম্মানিত লোক কিন্তু রাজনীতির সে দিন আর নেই। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই রাজনীতির চরিত্র বদলে যেতে থাকে। আদর্শ, দর্শন হারিয়ে যেতে থাকে। রাজনীতির ময়দান থেকে হারিয়ে যেতে থাকেন আদর্শবাদী, সৎ ও নীতিবান রাজনীতিবিদরা। তাদের স্থান দখল করতে থাকেন অরাজনৈতিক ব্যবসায়ী, সামরিক-বেসামরিক আমলা, অস্ত্রবাজ, পেশিবাজ মাস্তানরা। আগে রাজনৈতিক দল নিয়ন্ত্রিত হতো রাজনীতিবিদদের দ্বারা। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও পেশিবাজ মাস্তান এবং তাদের গডফাদাররাই চলে আসেন রাজনৈতিক দলসমূহের নিয়ন্ত্রণের ভূমিকায়। রাজনৈতিক দলে প্রবেশ করে লুণ্ঠন সংস্কৃতি। রাজনীতি হয়ে দাঁড়াল ব্যবসা, বিনা পুঁজি বা অল্প পুঁজিতে বেশি বেশি নিশ্চিত লাভের একটি উপযোগী বিনিয়োগ মাধ্যম।

বেশিদূর যাওয়ার দরকার নেই। এরশাদ আমল থেকেই শুরু করা যায়। তখন থেকেই রাজনৈতিক দলে ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে দুর্নীতি-বেহায়াপনা অনেকটা প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পেতে থাকে। শুরু হয় রাজনৈতিক দলে নাম লিখিয়ে রাতারাতি বড় লোক হওয়ার, গাড়ি, বাড়ি, বিত্ত-বৈভবের মালিক হওয়ার প্রতিযোগিতা। সে ধারা বন্ধ হবে এটা আশা করা গিয়েছিল এরশাদের পতনের পর। কিন্তু অত্যন্ত বেদনাদায়ক বিষয় হচ্ছে, তা রোধ বা বন্ধ তো হলোই না, বরং তার গতি আরও বাড়ল। এরশাদের পর বেগম খালেদা জিয়ার সরকার এসেছে তিনবার (স্বল্পকালীন একটিসহ), শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এসেছে দুইবার। প্রতিবারই দুর্নীতির মাত্রা বেড়েছে। দুর্নীতিতে সারা বিশ্বে আমাদের দেশ বার বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। গতবার চ্যাম্পিয়ন হয়নি, কিন্তু আগেরবার দুর্নীতির পরিমাণ যা ছিল, তা কমেনি; তার চেয়ে বেড়েছে। আর এবার তো আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল নাম ফাটাল দুর্নীতিতে শীর্ষস্থান অধিকার করে। আমাদের রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিবিদদের মহা-দুর্নীতির বিষয়টি ব্যাপকভাবে ফাঁস হয় ওয়ান-ইলেভেনের পর। দুই দলের শীর্ষ দুই নেত্রীসহ দুই দলেরই অনেক নেতা জেল খাটেন স্রেফ চাঁদাবাজি, দুর্নীতির নিন্দনীয় অভিযোগে। খবর বেরোয় কার কয়টা বাড়ি হয়েছে, ফ্ল্যাট হয়েছে (কারও নাকি শতাধিক) গাড়ির কোনো হিসাব নেই। রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয়েছিল বস্তা বস্তা টাকা, কোটি টাকা দামের গাড়ি, হরিণ, ময়ূর এমন কী অজগর সাপ! লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কমিটি করে রাজনৈতিক কারণে করা হয়েছে এমন অভিযোগে রাজনৈতিক বিবেচনায় তাদের দলীয় নেতাদের (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ) সব মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছে। অথচ একটি মামলাও আদালতে সওয়াল-জবাবের মাধ্যমে সুরাহা হয়নি, তারা দুর্নীতিবাজ নন, এই সার্টিফিকেট আদালত দেয়নি। অবশ্য বেগম খালেদা জিয়াসহ তার দলের নেতাদের বিরুদ্ধে একই অপরাধে দায়ের করা মামলাসমূহ এখনো বহাল আছে। যেভাবে সব কিছু চলছে, ধারণাটা ভুল হবে না যে, বিএনপি ক্ষমতা পেলে তারাও আদালতকে পাশ কাটিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করে নেবে। কিন্তু এতে তো প্রমাণ হয় না যে, তারা দুর্নীতি করেননি। প্রধান দুই দলের বড়-ছোট অনেক নেতার দুর্নীতি চোখ মেললেই দেখা যায়, হাত বাড়ালেই স্পর্শ করা যায়_ এটা জনগণেরই কথা। টিআইবি এবার রাজনৈতিক দলকে দেশে শ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজদের তালিকায় রাখায় রাজনীতিবিদ নামধারী কিছু ব্যক্তি ক্ষিপ্ত হতে পারেন, কিন্তু জনগণ তাদের এ খ্যাপামো দেখে হাসে, উপহাসের হাসি। আমাদের বর্তমান রাজনীতিবিদরা রাজনীতিতে লুটেরা বা লুণ্ঠন সংস্কৃতির প্রবর্তন করেছেন বলে দেশের জনগণই বলে। এ ব্যাপারে টিআই বা টিআইবির সাক্ষী হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের রাজনীতিবিদরা রাজনীতি এবং রাজনৈতিক দলকে কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছেন!

টিআইবির এই প্রতিবেদনের কঠোর সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এটা রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। এ ব্যাপারে কোনো ব্যাখ্যা তিনি দেননি। পুলিশের প্রশংসা করে পুলিশকেও দুর্নীতির শীর্ষ তালিকায় রাখায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২০০১ সালেও টিআইবি একই কাজ করেছিল বলে কী ইঙ্গিত করলেন তা দুর্বোধ্য নয়। ২০০১ -এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে বিএনপি জোট ক্ষমতায় এসেছিল। তিনি কী বলতে চান, আগামী নির্বাচনেও তিনি এবং তার দল ও জোটকে হারিয়ে বেগম জিয়া এবং তার দলকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য টিআইবি এই কাজ করেছে? কিন্তু টিআইবি তো সেরা দুর্নীতিবাজ হিসেবে রাজনৈতিক দলের কথা বলেছে, বিএনপিকে বাদ দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের কথা বলেনি। আওয়ামী লীগের হাইব্রিড নেতা হিসেবে আওয়ামী লীগারদের দ্বারাও সমালোচিত মাহবুবুল আলম হানিফ তো আরও সরেস মন্তব্য করেছেন। কিছু একটা আওয়াজ শুনলেই 'বাঘ আসিয়াছে বাঘ আসিয়াছে' বলে আওয়ামী লীগের এমন চিৎকার অবশ্য বছর খানেক ধরেই শোনা যাচ্ছে। প্রকৃতই বাঘ এলে জানি কী হয়! বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ অবশ্য বলেছেন, টিআইবি নাকি আওয়ামী লীগকেই সেরা দুর্নীতিবাজ বলেছে, যেহেতু তারা এখন ক্ষমতায় এর আগে দুই বছর ছিল মইনুদ্দিন-ফখরুদ্দীন সরকার। তারা সব সাধু সন্ন্যাসী! কিন্তু টিআইবির রিপোর্ট পড়ে তো তা মনে হয় না। টিআইবি কোনো বড় রাজনৈতিক দলকে ছেড়ে কথা বলেনি। প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী পুলিশের সঙ্গে দুর্নীতিতে যৌথ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে রাজনৈতিক দল। কী লজ্জার কথা! টিআইবির বিরুদ্ধে বিষোদগার করে লাভ নেই। যাদের উদ্দেশ্যে এই অভিযোগ আনা হয়েছে তা কী এই মর্মে একটা গণভোটে যেতে সাহসী হবেন যে, 'রাজনীতিবিদরা দুর্নীতি করেন না।' ধারণা করা যায়, তেমন একটা গণভোটে রাজনীতিবিদরা জামানত হারাবেন। টিআইবির এই প্রতিবেদন প্রমাণ করল, আমাদের বড় বড় রাজনৈতিক দলে (যাদের দুর্নীতি করার শক্তি ও সুযোগ আছে) শুদ্ধি অভিযান কত প্রয়োজন। বিএনপির সাবেক মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়া, আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আমীর হোসেন আমু, মরহুম আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ প্রমুখের রাজনৈতিক দলে সংস্কার প্রস্তাব কী যথার্থ ছিল তাও স্পষ্ট হলো। রাজনৈতিক দলসমূহের সৎ, আদর্শবাদী ও নিবেদিতপ্রাণ নেতা-কর্মীদের বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে এবং দলের ভেতরেই দল বাঁচানোর লড়াই শুরু করতে হবে। আমাদের জাতির সব মহৎ অর্জনই তো নিশ্চিত করেছেন রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দল। আবর্জনা পরিষ্কার করে রাজনীতিবিদ এবং রাজনৈতিক দলের অতীত ঐতিহ্য ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

ই-মেইল :  [email protected]

 

 

সর্বশেষ খবর