রবিবার, ২৭ অক্টোবর, ২০১৩ ০০:০০ টা
শিক্ষাঙ্গন

সম্ভাবনাময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মো. আবু সালেহ সেকেন্দার

সম্ভাবনাময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও এগিয়ে যাচ্ছে জ্যামিতিক হারে। নানা সমস্যায় জর্জরিত এই বিদ্যাপীঠের রয়েছে অমীয় সম্ভাবনা। একঝাঁক তরুণ মেধাবী শিক্ষক; আর জীবনের নানা বাঁকে সঞ্চিত অভিজ্ঞতার ডালা সাজিয়ে বসা প্রায় অর্ধশতাধিক অধ্যাপকের পদভারেও মুখরিত এই বিদ্যাপীঠ অল্প সময়েই ভর্তিচ্ছুদের প্রথমদিকের পছন্দের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। তাই প্রতিবছরই বাড়ছে ভর্তি পরীক্ষার্থীর সংখ্যা। প্রতিযোগিতার শতকরা হারে গত কয়েক বছর ধরে যা হার মানাচ্ছে দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে। এবারের ভর্তি পরীক্ষা তার বড় প্রমাণ (একটি আসনের বিপরীতে ৬৯ জন শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতা করছে, গত বছর ছিল ৬৩ জন)। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিরা যদি মেধাবীদের যথাযথ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে না পারেন তাহলে এই আকর্ষণ একদা হতাশায় পরিণত হবে।

আবাসন ও যানবাহন সমস্যায় জর্জরিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মনোবল, সাহস ও পরিশ্রমী মানসিকতা আমাকে অবাক করে। ব্যয়বহুল ঢাকা শহরের নানা ম্যাচ-বাসাবাড়িতে কষ্টে দিনাতিপাত করা সত্ত্বেও তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে সর্বদা মাতিয়ে রাখে। তাদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে কাকডাকা ভোরে বাসে বাদুরঝোলা হয়ে তারা ক্যাম্পাসে এসেছে। প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর এসব তরুণকে আমার একেকজন বঙ্গবন্ধু, ফিদেল কাস্ত্রো অথবা নেলসন ম্যাণ্ডেলা মনে হয়। তাদের মধ্যে আমি যেন খুঁজে পাই নজরুলের 'যৌবনের গানে'র সত্যিকার নায়ককে। পরিবহন সংকট এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাগ্যের লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০ হাজার শিক্ষার্থী, সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষক, ১১৫ জন কর্মকর্তা, ২৭০ জন কর্মচারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৫টি নিজস্ব পরিবহন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। যদিও আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিআরটিসির আরও ১৫টি বাস ভাড়া করেছে। তবে ওই পরিবহন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যথেষ্ট নয় এমনটি প্রমাণিত হয়েছে বহু আগেই। তাই শিক্ষার্থী এমনকি শিক্ষকদেরও নিয়মিতই বাদুরঝোলা করে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করে সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের জন্য একবারই পরিবহন সেবা (দুপুরে শাহবাগ পর্যন্ত যাওয়া একটি বাস ব্যতীত) পাওয়া যায় বলে দূরের শিক্ষার্থীদের খেয়ে না খেয়ে রোদে পুড়ে ঘরে ফেরার জন্য সেই পড়ন্ত বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। তবে বর্তমান উপাচার্য কিছু উন্নয়নমূলক পদক্ষেপ নিয়েছেন। তার মধ্যে শিক্ষকদের জন্য কয়েকটি গ্রুপে দ্বিতীয় শিফটে পরিবহনের ব্যবস্থা অন্যতম। ওই দ্বিতীয় শিফটে পরিবহন ব্যবস্থা শুধু শিক্ষকদের জন্য নয়, শিক্ষার্থীদের জন্যও করা অতি জরুরি হয়ে পড়েছে। ক্লাসরুমের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার নতুন নতুন বিভাগ খোলা হলে আগামী শিক্ষাবর্ষের আগে যদি নতুন ভবনের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এই সংকট আরও প্রকট হবে। আবার যা আছে তা পাঠদানের উপযোগী নয়। এক্ষেত্রে কলাভবনের অবস্থা সবচেয়ে নাজুক। গত বছর আমি আমার বিভাগে পরীক্ষার ডিউটি করছিলাম। হঠাৎ উপর থেকে একটি ফ্যান 'তাল পড়ার' মতো নিচে খসে পড়ল পরীক্ষারত এক ছাত্রীর মাথায়। ঝং ধরা পুরনো ফ্যানগুলোর কাছে আমরা এর থেকে বেশি কিবা আশা করতে পারি!

ক্লাসরুমের মতো লাইব্রেরিরও বেহাল দশা। সেখানে পর্যাপ্ত বই নেই। তবে এই সংকটও দূর করা যেত যদি বিভাগীয় সেমিনার লাইব্রেরিগুলো সমৃদ্ধ হতো। কিন্তু বিধিবাম। অধিকাংশ বিভাগে সেমিনার লাইব্রেরির অবস্থা আরও করুণ। ল্যাবগুলো সেকেলের। ছাত্রছাত্রীদের ব্যবহার উপযোগী না হলেও সেখানে টিকটিকি আর ইঁদুরেরা গবেষণা করে ঠিকই, এমনটি কথা প্রসঙ্গে বলছিলেন আমার এক সহকর্মী। আর জগন্নাথ পরিবারের একটি মাত্র ক্যান্টিন প্রকৃতপক্ষে 'ঠুঁটো জগন্নাথ।' জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হাজারও সমস্যা আছে ঠিকই; তবে আশানুরূপ না হলেও গত কয়েক বছরে কম-বেশি উন্নয়নও হয়েছে। সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তবে এই সুবিধা কাজে লাগছে না। কারণ সব শিক্ষকের কম্পিউটার নেই। নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য বর্ধনে নেওয়া হয়েছে মহাপরিকল্পনা। শুরু হয়েছে ব্যাচেলর শিক্ষকদের জন্য ডরমেটরির কাজ। শিক্ষার্থীদের আবাসন ব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সাবেক হবিবুর রহমান হল, বাণী ভবনের একাংশ, ধুপখোলা মাঠ ও বাংলাবাজারের একটি পরিত্যক্ত জায়গা বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে এসেছে। কিন্তু নতুন একটি ইটের গাঁথুনিও ওই জায়গাগুলোকে ধন্য করেনি। এবার বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে নতুন একটি ছাত্রী হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে বলে প্রশাসনের তরফ থেকে বলা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে যে কার্ড বিতরণ করা হয়েছে সেখানে ওই হলের নকশার ছবিও দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই হলের শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দ্রুত যেন কাজ সমাপ্ত করার ব্যবস্থা করা হয়। আর নতুন হল স্থাপনের জন্য জমি ক্রয়ের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল সেই হলেরও কাজ শুরু হবে বলে আমরা আশা করি।

লেখক : ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।

ই-মেইল :  [email protected]

সর্বশেষ খবর