মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা
স্মরণ

বন্ধু নোরা শরীফকে হারাল বাংলাদেশ

বন্ধু নোরা শরীফকে হারাল বাংলাদেশ

ইংল্যান্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জনপ্রিয় মুখ ব্যারিস্টার নোরা শরীফ আর নেই। তার এ মৃত্যুর খবরে বাঙালি কমিউনিটিতে যেমন শোকের ছায়া নামে, তেমনি '৭১ সালে ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলাভাষী সবাইকে ব্যথিত করেছে। তার আত্দার মাগফিরাত কামনা করছি। ব্যারিস্টার নোরা শরীফ ইংল্যান্ড তথা ইউরোপের অবিসংবাদিত আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মুহাম্মদ শরীফের সহধর্মিণী। সে সময় ইংল্যান্ডে বসবাসকারী বাংলা ভাষাভাষীদের মিলন কেন্দ্র ছিল সুলতান ভাইয়ের বাড়ি ও তার কর্মস্থল। বাংলার মানুষের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রতিফলন হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পরিসমাপ্তির পর বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে যান প্রায় সারাক্ষণই শরীফ ভাই এবং নোরা ভাবী বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে থাকতেন। খুব সম্ভবত ভবিষ্যতের অনেক কিছুই বঙ্গবন্ধু শরীফ ভাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

'৭১-এর মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহেই লন্ডনে পাকিস্তান দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশে শরীফ ভাইয়ের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। এরপর ১৪ অথবা ১৫ মার্চ শরীফ ভাই আমার বাবা মরহুম আবু সাঈদ চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের মধ্যে তাৎক্ষণিক করণীয় সম্পর্কে আলোচনা হয়। সেই সময় প্রবাসে অবস্থানরত বাঙালিরা স্বাভাবিকভাবেই একটি অস্থিরতায় ভুগছিলেন। যে কোনো সময় বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানিরা হামলা করতে পারে বলে আশঙ্কা হচ্ছিল। পাকিস্তানি হামলা হলে সেই মুহূর্তে প্রবাসে অবস্থানরত বাঙালিদের করণীয় সম্পর্কে যে আলাপ-আলোচনা চলছিল, সেই আলোচকদের অন্যতম ছিলেন সুলতান শরীফ। ২৬ মার্চ স্বাধীনতাযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যারিস্টার নোরা শরীফ প্রায় সার্বক্ষণিকভাবে সব হৃদয় দিয়ে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। প্রায় প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা গাড়ি নিয়ে ইংল্যান্ডের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠনে। প্রণয় এবং পরিণয়ের সূত্রে মনে হয়েছে, নোরা ভাবী শরীফ ভাইয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভালোবেসে ফেলেছেন। তিনি সব হৃদয় উজাড় করে ভালোবেসে ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। তার কর্মতৎপরতার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণীয় দিক তিনি ছিলেন সহজ-সরল এবং প্রচারবিমুখ। শরীফ ভাইয়ের মতো নোরা ভাবীও সব আশা-নিরাশা, লোভ-লালসা, ঘাত-প্রতিঘাতের ঊধের্্ব সম্পূর্ণভাবে বাংলাদেশ এবং বঙ্গবন্ধু প্রেমিক। দীর্ঘ দিন দেখা না হলেও কয়েক বছর আগে যখন বাংলাদেশ সরকার তাকে বিশেষভাবে সম্মানিত করে তখন একটি অনুষ্ঠানে তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বয়সের ভারে ন্যুব্জ হলেও বাংলাদেশের প্রতি তার মমত্ববোধ আগের মতোই অকৃত্রিম ছিল। কালের পরিক্রমায় বাংলাদেশের প্রতি বন্ধনটা যেন আরও প্রগাঢ় হয়েছে। তাকে সম্মান জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশেষ করে প্রবাসী বাঙালিরা সম্মানিত হয়েছেন। _আবুল হাসান চৌধুরী

সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

 

 

 

 

 

সর্বশেষ খবর