বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারি, ২০১৪ ০০:০০ টা

জননিরাপত্তা নিশ্চিত করুন

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো চিহ্নিত একটি মহলের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী একটি জোট ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগাকে জাতীয় লজ্জার ঘটনা বলেও অভিহিত করা যায়। সংখ্যালঘুদের এই দুর্ভাগ্যের শুরু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় প্রকাশের পর থেকে। পাকিস্তানি হানাদাররা যেভাবে মুক্তিযুদ্ধকালে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, তাদের এ দেশীয় বংশধররা একই কায়দায় ঝাঁপিয়ে পড়ে। তছনছ করে দেয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ও উপাসনালয়। একাত্তরের মতো জীবনহানি না ঘটলেও সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়। এ সহিংসতা বন্ধে অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধ্বজাধারী মহাজোট সরকার কাঙ্ক্ষিত সাফল্য দেখাতে পারেনি। বিশেষত সংখ্যালঘুদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ সৃষ্টিতে তাদের ব্যর্থতা হতাশাজনক। সম্প্রতি দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘুদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনা ঘটেছে। একাত্তরের পাকিস্তানি হানাদারদের প্রেতাত্দা হিসেবে বিবেচিত একটি বিশেষ দলের ক্যাডাররা সংখ্যালঘুরা কেন ভোট দিতে গিয়েছিল এই অভিযোগ তুলে তাদের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট শুরু করে। বাংলাদেশের অস্তিত্ববিরোধী সাম্প্রদায়িক দলটির সংখ্যালঘুবিরোধী ভূমিকার পেছনে যে কার্যকারণ জড়িত তা সবারই জানা। আমাদের এ দেশটি দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে সাম্প্রদায়িকতাবাদী পাকিস্তানিদের দ্বারা শাসিত হয়েছে। পাকিস্তানিদের রক্তের উত্তরাধিকার হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশেও যারা রয়ে গেছেন, পিতৃভূমির প্রতি তাদের দায় মিটাতে তারা এ দেশের সাম্প্রদায়িক পরিবেশ বিষিয়ে তোলার চেষ্টা করবেন, এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তবে এই অশুভ শক্তিকে প্রতিহত করার দায় যাদের তাদের নিস্পৃহতা ক্ষমাহীন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্রুপের পরাজিত পক্ষ সংখ্যালঘুদের ওপর চড়াও হয়েছে এমন অভিযোগও এসেছে। আমরা মনে করি, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক তাদের কঠোরভাবে দমন করা উচিত। কোনো সভ্য সমাজে ধর্মীয় কারণে নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা কল্পনা করাও কঠিন। নিজেদের সভ্য মানুষ হিসেবে দাবি করতে হলে নাশকতা ও সহিংসতার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে হবে। সংখ্যালঘুসহ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের নিরাপত্তা দান সরকারের অবশ্য কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। এই কর্তব্য উপেক্ষিত হলে কোনো সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে না। জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে সরকার কোনো হেলাফেলার আশ্রয় নেবে না- আমরা এমনটিই দেখতে চাই।

 

 

সর্বশেষ খবর