শনিবার, ১০ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

পরিবেশ আন্দোলন ও কিছু অপ্রিয় প্রসঙ্গ

অদিতি ফাল্গুনী

পরিবেশ আন্দোলন ও কিছু অপ্রিয় প্রসঙ্গ

বাংলায় 'পরিবেশ আন্দোলন' নামের শব্দবন্ধটি শুনতে খুব ভারিক্কি না হলেও এই একটি শব্দের মাধ্যমে মানুষের প্রাকৃতিক-মানবিক-ভৌত-অভৌত পরিপার্শ্ব রক্ষায় নানা ধরনের বৈজ্ঞানিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের সমাহারই আধুনিক পরিবেশবাদীরা বুঝে ও বুঝিয়ে থাকেন। পশ্চিমা বিশ্বে উনিশ শতকের শেষ থেকে প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং বন্য পশু-পাখি সংরক্ষণে আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবেশ আন্দোলনের সূচনা। ব্রিটেনে ১৮৬৯ সালে সামুদ্রিক পাখি সংরক্ষণ আইন (১৮৬৯), ১৮৯৮ সালে স্যার উইলিয়াম ব্লেক রিচমন্ডের নেতৃত্বে 'কয়লার ধোঁয়া নিবারণ সমিতি' নামে বিশ্বের আদিতম পরিবেশবাদী এনজিও প্রতিষ্ঠা, জন রাস্কিন-উইলিয়াম মরিস-জর্জ বার্নার্ড শ এবং এডওয়ার্ড কার্পেন্টারের মতো রোমান্টিক চিন্তাবিদদের হাতে উনিশ শতকের শেষ দিকে 'প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া (ব্যাক টু নেচার)' আন্দোলনই অধুনা জনপ্রিয় 'সবুজ আন্দোলন' বা গ্রিন মুভমেন্টের জনক। এখন জার্মানির মতো অনেক পশ্চিমা দেশেই পরিবেশ আন্দোলন এত শক্তিশালী যে 'গ্রিন পার্টি'র মতো সোচ্চার পরিবেশবাদী দলগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতায়ও অংশ নিচ্ছে।

নিজেদের দেশের দিকে চোখ বোলালে দেখতে পাব গত কয়েক দশকে আমাদের এখানেও পরিবেশ আন্দোলন গড়ে উঠছে। তবে তা স্বতঃস্ফূর্ত জনউদ্যোগের পরিবর্তে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দাতা দেশগুলোর আর্থিক সহায়তাপুষ্ট। আর সেটাই একটি বড় আশঙ্কার জায়গা। বাংলাদেশের নাগরিক, সুশীল সমাজ যখন এ দেশের পরিবেশবাদী এনজিওগুলোর কিছু কর্মতৎপরতায় আনন্দে ডগমগ থাকেন, তখন পর্দার অন্তরালের চিত্র আমাদের বলে সম্পূর্ণ কথা। যেমন ১৯৯৬-২০০১ নাগাদ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকার সময় 'ন্যাম' সম্মেলন উপলক্ষে ওসমানী উদ্যানের কিছু গাছ কাটার কথা ভাবলে আমাদের 'মহান' পরিবেশবাদীরা ছুটে যান; গাছ জড়িয়ে ধরেছিলেন বৃক্ষনাশ এড়াতে। অথচ এই মহাপ্রাণেরাই গত বছর সরকারবিরোধী আন্দোলনের নামে জামায়াত-বিএনপি চক্রের হাতে ৪০ হাজার গাছ কাটা বিষয়ে ছিলেন সম্পূর্ণ নীরব। গত বছর জামায়াত-শিবির-বিএনপি ক্যাডাররা এক চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টেই (বৃহত্তর চট্টগ্রামের ভেতরের বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে সংযুক্তি বিন্দুতে) ১৪ হাজার গাছ কেটেছে। দুই থেকে ৪ হাজার গাছ কাটা পড়েছে যশোরে, ৩ হাজার গাছ কাটা হয়েছে সাতক্ষীরায়, ঝিনাইদহে ৫০০, মেহেরপুরে ১ হাজার ২০০ আর জয়পুরহাটে ১ হাজার গাছ কাটা হয়েছে। বাদবাকি অন্যান্য জেলায় কাটা হয়েছে মোট ১৭ হাজার ২০০ গাছ (সূত্র : আরিফুজ্জামান তুহীন, 'কালের কণ্ঠ' প্রতিবেদন, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৩)। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রয়োজনের তুলনায় স্বল্প বনভূমিসম্পন্ন এই দেশে গত বছরের নির্বিচার বৃক্ষনিধনসমূহ প্রভাব ফেলবে ও ফেলছে। এবারের গ্রীষ্মে ঢাকার তাপমাত্রা মরু দেশগুলোর তাপমানকে ছাড়িয়ে যাওয়া, আদর্্রতাশূন্য বাতাসে লু হাওয়ার মতো ঝলসে দেওয়া গনগনে অাঁচ এই আশঙ্কাকেই প্রমাণিত করে। একটি গাছ বড় হতে যেখানে দশ বছর সময় লাগে, সেখানে তা অত্যাধুনিক যন্ত্রে মাত্র দুই মিনিটে কেটেছে পরিবেশবাদীরা। নাহ্, এ নিয়ে আমাদের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও পরিবেশবাদীরা নীরব। একইভাবে সাম্প্রতিক সময়ে 'শেখ জামাল স্পোর্টিং ক্লাব'-এর নামে ধানমন্ডি মাঠ দখলের বিষয়ে পরিবেশবাদীদের ভূমিকা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। আমরা সাধারণ মানুষ সবসময়ই চাই উন্মুক্ত মাঠ লোভী দখলদারদের কুক্ষিগত না হোক। কিন্তু প্রশ্ন ওঠে, যখন ঢাকার উত্তরা, বারিধারাসহ ১৪১টি মাঠ দখলকৃত থাকে এবং সে বিষয়ে 'পরিবেশবাদীরা' নীরব থাকেন। তবে কি 'শেখ জামাল' নামেই অস্বস্তি আছে কিছু পরিবেশবাদীর? গেল সপ্তাহে আমাদের দেশের জাতীয় মিডিয়া এবং সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটগুলো স্বনামধন্য নারী পরিবেশ নেত্রী ও 'বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী আবু বকর সিদ্দিকের 'অপহরণ' প্রশ্নে সোচ্চার ছিল। সরকার, প্রশাসন, পুলিশ, মিডিয়া ও সুশীল সমাজ সবার প্রচেষ্টা এবং দাবির মুখে 'অপহৃত' আবু বকর সিদ্দিক অপহরণের ৩৩ ঘণ্টার ভেতর সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ফিরে এসেছেন, কোনো মুক্তিপণ চাওয়া হয়নি, অপহরণকারীরা 'ভাই' ডেকে ও পঞ্চব্যঞ্জন সহযোগে অপহৃতকে খাইয়ে, ওষুধ কিনে দিয়ে, ছিনতাইকৃত ল্যাপটপ ও মোবাইল ফোন ফেরত দিয়ে, সিএনজি ভাড়াসহ তাকে ফিরিয়ে দিতে যে বাধ্য হয়েছেন সেটা অবশ্যই স্বস্তির ব্যাপার। যদিও রিজওয়ানা-আবু বকরের পুলিশকে দেওয়া পারস্পরিক তথ্যেও কিছু অসঙ্গতি রয়েছে বা অপহরণকারীদের সঙ্গে যাওয়ার সময় ও আসার সময়ের পথের বর্ণনায় তথ্যগত অমিল আছে, তবু আমরা বিশ্বাস করি বা বিশ্বাস করতে চাই যে সিদ্দিক অপহৃতই হয়েছেন। তবে প্রথমে এর দায় সরকারের ওপর চাপানোর যে চেষ্টা চলছিল তা ঘুচে যায় যখন আমরা জানতে পারি যে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে 'লড়াকু পরিবেশ নেত্রী' রিজওয়ানার স্বামী এক আওয়ামী প্রতিমন্ত্রীর বন্ধু, যার নিজেরই ভূমি দখলের রেকর্ড রয়েছে। বীজগণিতে পদে পদে এত গেঁরো থাকলে সমস্যা! তা বীজগণিত এখানেই শেষ নয়। বিস্ময়ে বোবা না হয়ে উপায় থাকে না যখন জানা যায় যে পরিবেশ আন্দোলনে 'অগ্রণী' ভূমিকা পালনকারী ও ম্যাগসেসাই পুরস্কারে ভূষিত রিজওয়ানা মার্কিনি তেল কোম্পানি 'শেভরন'-এর পক্ষে ওকালতি করতে গিয়ে স্বদেশের লাউয়াছড়া অরণ্যের নিসর্গ ও বন্যপ্রাণীর স্বার্থ বিকিয়ে দেন। সংশ্লিষ্ট সবাই নিঃসন্দেহে জানেন যে, বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া অরণ্য একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল, যেখানে শব্দ করা, কোনো কিছু খোঁড়াখুঁড়ি করা, আগুন লাগানো বা বিস্ফোরণ ঘটানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ, ২০০৭ সালে মার্কিনি তেল কোম্পানি 'শেভরন' লাউয়াছড়া অরণ্যে ত্রিমাত্রিক সিসমিক সার্ভে পরিচালনা করতে চাইল। তদানীন্তন 'তত্ত্বাবধায়ক' সরকারের সময়কালীন বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদফতর এই বেআইনি কাজ পরিচালনায় শেভরনকে ছাড়পত্র দিল। এই বেআইনি কাজে দ্বিতীয় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে 'বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)।' ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ গ্রুপ (আইআরজি) ভিত্তিক একটি মার্কিনি উপদেষ্টা সংস্থার হয়ে 'বেলা' তখন তড়িঘড়ি 'সংশোধিত বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) আইন ১৯৭৪'-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা বদলে দেয়। এই আইনি ধারা বদলানোর খসড়া কাজটি করেন স্বয়ং সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (সূত্র : কালের কণ্ঠ প্রতিবেদন, ১১/০৭/২০০১)। আন্তর্জাতিকভাবে নন্দিত বাংলাদেশি আলোকচিত্রী সাইফুল হক অমি জাহাজভাঙা শিল্পবিষয়ক আলোকচিত্র তুলতে গিয়ে বেলার কথিত 'জাহাজভাঙা শিল্প' বিরোধী ক্যাম্পেইনের নানা ফাঁক-ফোকড় আবিষ্কার করেছেন বলে তার ঘনিষ্ঠ মহল জানে। সত্যি বলতে বেলার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক মহিউদ্দিন ফারুকের কাছ থেকে বেলার নির্বাহী ক্ষমতা একরকম ছিনিয়ে নেওয়ার পর থেকেই মহিউদ্দিন ফারুকের সময়কার তীব্র আবেগতাড়িত বা প্যাশনেট অ্যাক্টিভিজমের ধার অনেকটাই কমে গেছে বেলার। বহু বছর ধরেই 'বেলা' চলছে মহিউদ্দিন ফারুক থাকাকালীন বেলার শুরুর বছরগুলোর কাজের সুনামকে পুঁজি করে। এটা উন্নয়ন সেক্টরে কাজ করা সবাই কম-বেশি অবহিত। কেউ মুখ খোলেন আর কেউ খোলেন না।

আমরা যারা '৭১-পরবর্তী প্রজন্ম তারা অনেকেই আর একটি বিষয় জানতাম না। এবং সেটা হলো সৈয়দা রিজওয়ানার পিতা সৈয়দ মহিবুল হাসানের ১৯৭১-এ যুদ্ধাপরাধী ভূমিকা। এ বছরের ১৭ এপ্রিল অন লাইন পত্রিকা ইস্টিশানের একটি প্রতিবেদনে জানা যাচ্ছে যে, বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট-বাহুবল এলাকায় ১৯৭৪ সালে সৈয়দ মহিবুল হাসান ছিলেন সেই অঞ্চলের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান। তার নির্দেশে হাজার হাজার নিরীহ নর-নারী অপহরণ, খুন, ধর্ষণ ও বাড়িতে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটায় তার মানুষেরা। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে অবশ্য রিজওয়ানা ভক্তরা দাবি করছেন যে পিতার অন্যায়ের দায় কন্যার হতে পারে না। অবশ্যই হতে পারে না যদি কন্যা বা পুত্র পিতার অপরাধ অবনত মস্তকে স্বীকার করে তার জন্য লজ্জিত হন, ক্ষমা চান ও পিতার অবস্থানের বিরুদ্ধে তার নিজের দৃঢ়, নৈতিক অবস্থান গ্রহণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, রিজওয়ানা তার কোনো কিছুই করেননি। বরং উন্নয়ন পেশায় জড়িত অনেকেই জানেন যে কীভাবে দাতা সংস্থাগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে রিজওয়ানা যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্য গঠিত 'আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল'কে বিদ্যমান সরকারের 'রাজনৈতিক প্রতিহিংসা' বলে বর্ণনা করেছেন। ফিরে আসি রিজওয়ানার পিতার যুদ্ধাপরাধী জীবনের আলেখ্যে। হবিগঞ্জ-চুনারুঘাট-বাহুবলে ১৯৭১-এর সেই নয় মাসে খুন-ধর্ষণ-অগি্নসংযোগের বিভীষিকা চালানো সৈয়দ মহিবুল '৭১-এর পরে দীর্ঘদিনের জন্য গা-ঢাকা দিয়েছিলেন। ১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর পুনরায় ফিরে আসেন নিজের এলাকায়। আবার শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধপন্থি ও সংখ্যালঘু জনগণের ওপর অত্যাচার। রাজাকার পুনর্বাসনকারী সামরিক শাসক ও রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানের মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন তিনি। ১৯৮৬ সালে এই সুযোগ সন্ধানী রাজনীতিবিদ পুনরায় যোগ দেন এরশাদের নবগঠিত দল 'জাতীয় পার্টি'তে। ১৯৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে তিনি আবার গা-ঢাকা দিয়ে আছেন। তবে তার ঝাণ্ডা সযত্নে এলাকায় বহন করে চলেছেন তারই ভ্রাতুষ্পুত্র লিয়াকত হাসান, যিনি চুনারুঘাট এলাকার (হবিগঞ্জ, সিলেট) বিএনপি শাখার সভাপতি। স্থানীয় এক দরিদ্র নব্বই বছরের বৃদ্ধার ভিজিডি কার্ড লোপাট করার অভিযোগ পর্যন্ত তার সম্পর্কে আছে। অন-লাইন পত্রিকা ইস্টিশানের ওই প্রতিবেদনে চুনারুঘাটের উপজেলা চেয়ারপারসন জাহাঙ্গীর খানকে উদ্ধৃত করা হয় যিনি রিজওয়ানার পিতা সৈয়দ মহিবুল হাসানের নির্দেশে '৭১-এ নিজের ভাইয়ের হত্যার বিবরণ দেন : 'সৈয়দ মহিবুল হাসান ও সৈয়দ কায়সারের নির্দেশে পাক বাহিনী আমার ভাই (শহীদ) আবদুল কুদ্দুস খানকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে। বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের হবিগঞ্জ শাখার ডেপুটি কমান্ডার এবং সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য গৌরপ্রসাদ রায় ১৯৭১ সালে ও ১৯৭৫-পরবর্তী সময়ে রিজওয়ানার পিতা সৈয়দ মহিবুলের নানা নৃশংস অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন বলেও 'ইস্টিশানে'র প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। সৈয়দা রিজওয়ানা কেন পিতার এসব অন্যায়ের কখনো কোনো প্রতিবাদ করেননি বা করেন না? তিনি তো এই জাতির একজন 'সুযোগ্য সন্তান' বলেই আমরা এতদিন জানতাম। এখন তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় : আমাদের দেশ থেকে বিএনপিপন্থি উন্নয়ন সংস্থার কোন আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাত সিনিয়রদের সাজেশনে রিজওয়ানারা ম্যাগসেসাই পান? যারা কি-না পরিবেশবাদী হয়ে লাউয়াছড়া অরণ্যের স্বার্থ তুলে দেন শেভরনের হাতে? জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে কাজ করবেন বলে আসলে ততটা করেন না? প্রতিষ্ঠাতা পরিচালককেই তাড়িয়ে দেন প্রতিষ্ঠান থেকে? যাদের পিতার হাতে লেগে আছে যুদ্ধাপরাধের, একাত্তরের গণহত্যার রক্ত? উন্নয়ন সেক্টরে কাজ করা মানুষেরা এসব প্রশ্নের উত্তর যে জানেন না এমন নয়। কাজেই করপোরেট প্রচার মাধ্যমের কোন কোন অংশ বা তথাকথিত সুশীল সমাজ কাউকে বড় করে দেখালেই সেটা সবসময় 'বড়' হয় না। এ দেশে শতকরা একুশ ভাগ সুদের কারবারি করে 'নোবেল' পাওয়া যায়। ম্যাগসেসাইও মেলে সেভাবেই। না, এটা কোনো 'সফল' মানুষের প্রতি বাঙালির চিরন্তন আক্রোশ থেকে বলা নয়। জাপানি সিনেমা পরিচালক আকিরা কুরোসাওয়ার 'রশোমন' সিনেমায় সত্যের নানা রূপের কথা বলা হয়েছে। কাজেই সর্বসাধারণ্যে প্রচারিত কোনো কথিত সফল মানুষের পাদপ্রদীপের আলোর উজ্জ্বলতার পেছনে লাউয়াছড়ার লুপ্তপ্রায় প্রাণসম্পদ বা একাত্তরে চুনারুঘাট-বাহুবলের নিহত-ধর্ষিত হাজারো নর-নারীর আর্তনাদ এভাবেই চাপা পড়ে যায়; সত্যের সেই হারিয়ে যাওয়া রূপটি আমরা আর কোনোদিনই দেখতে পাই না।

লেখক : গল্পকার

 

সর্বশেষ খবর