শনিবার, ১০ মে, ২০১৪ ০০:০০ টা

শুদ্ধি অভিযান

নারায়ণগঞ্জে দৃশ্যত শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। সেভেন মার্ডার এবং একের পর এক অঘটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জড়িত থাকার অভিযোগ সরকারের ভাবমূর্তিতে যখন অমোছনীয় কালিমা লাগিয়েছে, তখন তারা কুম্ভকর্ণের ঘুম থেকে জেগে ওঠার চেষ্টা করছেন বলেই মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে র‌্যাবের তিন পদস্থ কর্মকর্তাকে তাদের স্ব স্ব বাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়েছে। পুলিশে গণবদলির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অপহরণ, গুম, হত্যার জনপদ নারায়ণগঞ্জকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনার এই সরকারি প্রয়াস নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য। তবে তা অনেক আগেই শুরু করা উচিত ছিল। সেটি সম্ভব হলে সরকারের মুখে আজ যে অমোছনীয় কালিমা লেগেছে তা হয়তো এড়ানো সম্ভব হতো। নারায়ণগঞ্জে মৎস্যন্যায় অবস্থা চলছে দীর্ঘদিন ধরে। দুর্বৃত্তায়নের রাজনীতির এ এক অনিবার্য পরিণতি। যখন যে দল ক্ষমতায় থেকেছে সে দলের ক্ষমতাবানদের দৌরাত্ম্যে নিষ্পেষিত হয়েছে নারায়ণগঞ্জের মানুষ। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী না হয়ে এসব যার রাসপুটিনদের হুকুমদাসের ভূমিকা পালন করেছে। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, নারীর সম্ভ্রম সব কিছু উপেক্ষিত হয়েছে যথেচ্ছভাবে। 'সাপ পুষলে সাপের ফণায় জীবন দিতে হয়'- এটি শুধু ছড়ার পঙ্ক্তিমালা নয়, এক চিরায়ত সত্যি। যার প্রকৃষ্ট উদাহরণ সন্ত্রাস উপদ্রুত জনপদ নারায়ণগঞ্জ। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, সন্ত্রাসের ধারেকাছে না থাকা সত্ত্বেও সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বিস্তারের লড়াইয়ে অনেক নিরীহ মানুষকেও প্রাণ হারাতে হচ্ছে। আমরা নারায়ণগঞ্জের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে তাকে স্বাগত জানাই। তবে এ ক্ষেত্রে যাতে লোকদেখানো ভড়ং না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই। নারায়ণগঞ্জে নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে শুধু অন্যত্র বদলি নয়, তাদের সব অপকর্ম সম্পর্কেও তদন্ত হওয়া দরকার। তারা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অর্জিত অর্থ এবং সম্পদেরও হিসাব নেওয়ার বিষয়টিও প্রাসঙ্গিকতার দাবিদার। রাজনীতির যেসব রাসপুটিনের হুকুমদাস হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করেছেন, তাদেরও নিরস্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে। সন্ত্রাসের জনপদ হিসেবে নারায়ণগঞ্জের যে অপভাবমূর্তি গড়ে উঠেছে তা থেকে রেহাই পাওয়ার এটিই প্রকৃষ্ট উপায়।

 

সর্বশেষ খবর